‘ই’ গ্রুপের চার দলই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছে
‘ই’ গ্রুপের চার দলই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছে

‘মৃত্যুকূপের’ সবাই এখন ‘মৃত’

দোহার প্রদর্শনী ও সম্মেলন কেন্দ্রে গত ১ এপ্রিল হয়েছিল বিশ্বকাপের ড্র। সেদিন সবার আগে কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানিকে নিয়ে মঞ্চে হাজির হন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। কিছুক্ষণ পর একসঙ্গে আসেন স্পেন আর জার্মানির কোচ লুইস এনরিকে ও হানসি ফ্লিক।

ড্রয়ের পর এনরিকে-ফ্লিকের মুখে কী চওড়া হাসি! তাঁদের দল পড়েছে একই গ্রুপে। সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে কোস্টারিকা আর জাপানকে। এনরিকে-ফ্লিক মনে মনে হয়তো কোস্টারিকা-জাপানকে হিসেবের বাইরে ধরে নিজেদের শেষ ষোলোয় দেখছিলেন।

তবে ফুটবলবোদ্ধারা কিন্তু সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেন-জার্মানি, এশিয়ান পরাশক্তি জাপান আর কনকাকাফ অঞ্চলের দল কোস্টারিকাকে নিয়ে গড়া ‘ই’ গ্রুপকেই ‘মৃত্যুকূপ’ বলে এসেছেন।

স্পেনকে বিদায় করে ইতিহাস গড়ার আনন্দ ভাগ করে নিতে মরক্কোর জনসাধারণ রাজপথে নেমে আসেন

তাঁদের ভাবনাটা নিশ্চয় অমূলক ছিল না। ২০১৪ বিশ্বকাপে কোস্টারিকা যে সাবেক তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি, ইংল্যান্ড ও উরুগুয়ের গ্রুপে পড়েও শীর্ষে থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল! ইতালি আর উরুগুয়েকে কেইলর নাভাসের দল হারিয়ে দিয়েছিল। ইংল্যান্ডের সঙ্গে করেছিল গোলশূন্য ড্র। আর জাপান তো চমক দেখায় প্রায়ই।
আট মাস পর মাঠের লড়াইয়েও তা-ই হয়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোর অবিশ্বাস্য গল্প লিখেছে জাপান। পিছিয়ে পড়েও জার্মানি আর স্পেনকে হারিয়ে ‘ই’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন তো হয়েছেই, জার্মানদেরও বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে ছেড়েছে। আর স্পেন ‘টেনেটুনে’ নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছে। ৭ গোল খেয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা কোস্টারিকা গ্রুপের তলানিতে থেকে বিদায় নিলেও একটা সময় তারাও সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল।

তবে গ্রুপ পর্ব পেরোলেও বেশি দূর এগোতে পারেনি জাপান-স্পেন। শেষ ষোলো থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছে তাদের। পরশু রাতে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে দুর্দান্ত খেলেও টাইব্রেকারে হারতে হয়েছে এশিয়ার প্রতিনিধি জাপানকে।
একই ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে স্পেনকেও। এবারের বিশ্বকাপে ‘ডার্ক হর্স’ তকমা পাওয়া মরক্কোর কাছে পেনাল্টি শুটআউটে হেরে বিদায় নিয়েছে স্প্যানিশরা। নির্ধারিত আর অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে প্রায় ১৩০ মিনিট খেলেছেন এনরিকের শিষ্যরা। ১০১৯টি সফল পাস দিলেও কাজের কাজ গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন আলভারো মোরাতা, দানি ওলমো, গাভি, পেদ্রিরা।

একে–অন্যকে সান্ত্বনা দেওয়াই বোধ হয় কপালে লেখা ছিল স্পেনের

স্প্যানিশদের বিদায়ে ‘ই’ গ্রুপ অতল গহ্বরে বিলীন হয়ে গেছে। এককথায়, ‘মৃত্যুকূপের’ সবাই এখন মৃত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো কেউ কেউ মজা করে লিখেছেন, ‘ই = এলিমিনেটেড!’

এমনও অভিযোগ আছে, কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে এড়াতে আর জার্মানিকে ছিটকে দিতে স্পেন নাকি ইচ্ছা করেই জাপানের কাছে হেরেছে। এতে করে এনরিকের দল ‘ই’ গ্রুপের রানার্সআপ হিসেবে পেয়েছে ‘এফ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন মরক্কোকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই মরক্কোর কাছে টাইব্রেকারে হেরেই বিদায় নিতে হলো স্পেনকে।

জার্মানদের চোখে–মুখে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ার হতাশা

‘ই’ গ্রুপ ছাড়া বাকি সব গ্রুপের অন্তত একটি দল এখনো বিশ্বকাপে টিকে আছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী, বেশির ভাগ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লিখিয়েছে।

‘এ’ গ্রুপ থেকে নেদারল্যান্ডস, ‘বি’ গ্রুপ থেকে ইংল্যান্ড, ‘সি’ থেকে আর্জেন্টিনা, ‘ডি’ থেকে বর্তমান বিশ্ব চ্যম্পিয়ন ফ্রান্স, ‘জি’ থেকে ব্রাজিল, ‘এইচ’ থেকে পর্তুগাল। কোনো গ্রুপ বাদ পড়ল কি? ও হ্যাঁ, ‘এফ’ গ্রুপ থেকে সবচেয়ে বেশি দুটি দল শেষ আটে পা রেখেছে—মরক্কো আর ক্রোয়েশিয়া। তারাই তো ‘ই’ গ্রুপের অস্তিত্ব বিলীন করেছে!