যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল

‘অলিম্পিক বাছাইয়ে মেয়েদের পাঠানোর ইচ্ছাই ছিল না বাফুফের’

জাতীয় নারী ফুটবল দলকে মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইয়ে খেলতে না পাঠানোয় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেও ‘ধমক’ খেয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। এবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসানও। আজ বিকেলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে নিজ কার্যালয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন জাহিদ হাসান।

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি নারী ফুটবল দলকে বিদেশে পাঠানোর ইচ্ছাই ছিল না তাদের (বাফুফের)। এই জন্যই এমন নাটক সাজিয়ে তাদের দোষটা আরেকজনের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

মিয়ানমারে গত ৬ এপ্রিল শুরু হয়েছে মেয়েদের অলিম্পিক বাছাই পর্বের ‌'বি' গ্রুপের খেলা। কিন্তু ২৯ মার্চ বাফুফে থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় অর্থ সংকটের কারণে মিয়ানমারে দল পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এর আগে ২৭ মার্চ বাফুফে দল পাঠানোর জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বরাবর টাকা চেয়ে আবেদন করে। এভাবে এত তাড়াহুড়ো করে টাকা চাওয়ার ব্যাপারটিকে ‘নাটক’ বলে মনে হয়েছে মন্ত্রীর।

এই ঘটনার পেছনে অন্য কিছু আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখতে চান তিনি, ‘নারী ফুটবল দলের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করার জন্য যে প্রস্তাবনা তাঁরা দিয়েছিলেন, সেখানে আমাদেরও প্রাথমিকভাবে দোষারোপ করা হয়েছে। বলেছেন, সরকার বা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দেয়নি এ জন্য দল পাঠাতে পারেনি। তারা যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এ জন্য কখনোই আর্থিক সহযোগিতা এর আগে সেভাবে চায়নি। তারপরও আমরা ২৭ মার্চ ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে চিঠি পেয়েছি। কিন্তু সেখানে উল্লেখ ছিল ৩১ মার্চের মধ্যে তাদের অবগত করানোর যে তাদের ৯২ লাখ টাকা প্রয়োজন। অথচ এক দিন পরই তারা জানালেন যে টাকা পাচ্ছেন না বলে টিম পাঠাতে পারছে না। কীভাবে এটা হয়?’

শেষ মুহূর্তে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই টাকার অভাব দেখিয়ে ‘দল পাঠানো যাচ্ছে না’ ঘোষণা দেওয়ায় ‘উদ্দেশ্য’ দেখছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, ‘এটা তারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করেছে। কেন এত তড়িঘড়ি করে চিঠিটি দিলেন, কেন তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন সময়ের আগে? এ ধরনের টুর্নামেন্টে অংশ নিতে হলে নিশ্চয় তারা ৩ মাস বা ৬ মাস আগে জানতে পেরেছে। তারা এত দিন পরে জানালেন কেন? তারা যে অলিম্পিক বাছাইয়ে যেতে পারল না এটার মধ্যে কিছু একটা আছে। আমাদের পক্ষ থেকেও বিষয়টা খতিয়ে দেখছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও বিষয়টি অবগত করছি।’

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।

দ্রুত সময়রে মধ্যে বাফুফে থেকে চিঠি পেয়েও অর্থ জোগাড়ের চেষ্টা করেছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, এমনটাই জানালেন মন্ত্রী, ‘যে কোনো সংস্থার কাছে টাকা চাইতে হলে একটু সময় লাগে, সময় দিতে হবে তাদের। আমাদের কাছে টাকা চাওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ে এই অর্থ ছাড়ের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চিঠি লিখেছি। সেটির জবাব আসার আগেই তারা এই ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। এবং সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমি মনে করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি নারী খেলোয়াড়দের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন, তাকেও অবগত করা যেত।’

যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জানান, বাফুফে সভাপতি তাঁকেও কিছু জানাননি, ‘ফেডারেশনের সভাপতি মহোদয় (কাজী সালাউদ্দিন) আমাকে ফোন করতে পারতেন। বলতে পারতেন, যে টাকার জন্য আটকে গেলাম, কি করা যায়। কিন্তু উনিও কোনো কথা বললেন না। হঠাৎ করে এক দিনের মাথায় সংবাদ সম্মেলন করে খেলা থেকে পিছিয়ে গেলেন। এবং এটার জন্য সরকার ও যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করা হলো। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।’

ক্রিকেটে জয়ের পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান প্রধানমন্ত্রীকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন দেন— এমন প্রসঙ্গে গত ৩ এপ্রিল সালাউদ্দিন বলেছিলেন, তিনি এমন ‘নাটক’ করতে পারবেন না। সালাউদ্দিনের মতো ব্যক্তি কেন নাজমুল হাসানকে এভাবে খোঁচা মেরে কথা বলেছেন সেটা নিয়েও সমালোচনা করলেন মন্ত্রী, ‘বাফুফের সভাপতি মহোদয় অত্যন্ত সম্মানিত মানুষ। আমাদের জীবন্ত কিংবদন্তি। কিন্তু উনি ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি মহোদয়কে নিয়ে যা বলেছেন এটা আসলে অশোভনীয় বক্তব্য। উনি একজন (নাজমুল হাসান) সংসদ সদস্য।’

প্রধানমন্ত্রীকে জড়ানোর বিষয়েও ক্ষুব্ধ জাহিদ হাসান, ‘ প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলাকে এত ভালোবাসেন। তিনি নিজে খেলাধুলার খবর নেন সব সময়। নিজে টেলিভিশনে খেলা দেখেন। যখন সময় পান মাঠে চলে আসেন। এগুলো উনি জন্মগতভাবে পেয়েছেন। ওনার পরিবার খেলাধুলার জগতের মানুষ। তাকে জড়িয়ে এমন কথা বলা (নাটক করা) সেটি আসলে আমি কোনোভাবেই মানতে পারছি না। আমি মনে করি এসব কথা বলা থেকে এড়িয়ে চলা উচিত তার। মানুষ আমাদের কাছ থেকে শিখবে। আমরা এমন কোনো কথা বলব না যেটা শুনে মানুষ বিভ্রান্ত হবে।’