আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদের মনটা ভীষণ খারাপ। আগামী পরশু ভারতের চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত ৪৪তম দাবা অলিম্পিয়াডে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু এই দলে নেই বাংলাদেশের দাবার রানি বলে পরিচিত রানী হামিদ। দীর্ঘ ৩৮ বছর পর রানী হামিদকে ছাড়াই খেলবে বাংলাদেশ।
১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ প্রথম দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছিল। এর পর থেকে টানা ২০টি আসরে কখনো উন্মুক্ত বিভাগে, কখনো মেয়েদের বিভাগে খেলেছেন রানী হামিদ। কিন্তু এবারই প্রথম বাছাইপর্ব পেরিয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারেননি তিনি।
দাবা অলিম্পিয়াডের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ফেডারেশন সাধারণত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সর্বশেষ জাতীয় নারী দাবার সেরা পাঁচজনকে নিয়ে গড়া হয় এই অলিম্পিয়াডের দল। কিন্তু গত জানুয়ারিতে হওয়া নারী দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে দশম হয়েছিলেন রানী হামিদ।
নিজের এমন পারফরম্যান্সের জন্য শারীরিক অসুস্থতাকেই দুষলেন তিনি, ‘এবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে আমি মোটেও ভালো করতে পারিনি। খেলা চলাকালেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলাম। এত খারাপ খেলেছি, সেটা নিজের স্বাভাবিক খেলার সঙ্গে যায় না। যে কারণে আমি এবারের জাতীয় দলে সুযোগ পাইনি।’
দীর্ঘ ৩৮ বছর পর জাতীয় দলে নাম নেই। এটা ভাবতেই কষ্ট লাগছে রানী হামিদের, ‘অবশ্যই খুব খারাপ লাগছে। জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়াটা তো দুঃখজনক। কিন্তু পারফরম্যান্স খারাপ হলে কিছু করার নেই। এখন অনেক মেয়েরা ভালো খেলছে। ওরা আমাকে জাতীয় দলে আসার সুযোগটা দেবে কি না, সেটা তো বলতে পারব না।’
২০২৪ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে হবে পরের আসর। সেখানে খেলার আশায় রয়েছেন তিনি। বয়স ছুঁয়েছে ৮০ বছর। কিন্তু এখনো দাবার বোর্ডে ভীষণ আনন্দ পান রানী হামিদ, ‘বয়স হয়েছে সত্যি। কিন্তু এখন শুধু খেলার জন্য খেলি। আনন্দ পাওয়ার জন্য খেলি। এই বয়সে অনেকে তো ফেডারেশনের দায়িত্বে থাকে। আমাকেও অনেকে বলেছিল। কিন্তু দায়িত্ব নিলে তো খেলতে পারতাম না। তাই যত দিন পারি খেলে যেতে চাই।’ রানী জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও দেশের ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা কায়সার হামিদ তাঁর জ্যেষ্ঠ সন্তান। কিছু দিন আগে হারিয়েছেন ছোট ছেলে শাহজাহান হামিদ ববিকে। ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত নাম কর্নেল এম এ হামিদ তাঁর স্বামী।
উপমহাদেশের এই তারকা দাবাড়ু নানা কারণে অলিম্পিয়াডে আলোচিত নাম। অলিম্পিয়াডের ইতিহাসে পুরুষ বা উন্মুক্ত বিভাগে খেলা পঞ্চম নারী দাবাড়ু রানী হামিদ। তা ছাড়া সবচেয়ে বেশিবার অলিম্পিয়াডে খেলা দাবাড়ুও তিনি। সর্বশেষ অলিম্পিয়াডে সবচেয়ে বয়স্ক দাবাড়ু ছিলেন রানী হামিদ।
২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে অনলাইনে দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নেন জাতীয় দাবায় সর্বোচ্চ ২০ বারের চ্যাম্পিয়ন রানী হামিদ।
এবারের দাবা অলিম্পিয়াডে মেয়েদের দলে খেলবেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জান্নাতুল ফেরদৌস, নোশিন আঞ্জুম, শারমিন সুলতানা, নাজরানা খান ও প্রতিভা তালুকদার।
ছেলেদের দলে আছেন গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ, জিয়াউর রহমান এনামুল হোসেন রাজীব, ফিদে মাস্টার মেহেদী হাসান ও ক্যান্ডিডেট মাস্টার তাহসিন তাজওয়ার জিয়া।