বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ ও পাঠকের ভোটে বর্ষসেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান
বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ ও পাঠকের ভোটে বর্ষসেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান

মিলনমেলায় সাকিবের ‘ডাবল’

‘এটা আমাদের স্পোর্টসের অস্কার।’

রেড কার্পেটে বলছিলেন কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী শুটার আসিফ হোসেন খান। দুই বছর পর আজ আবার বসেছিল দেশের ক্রীড়াবিদদের মিলনমেলা—তীর-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার। মাঝে করোনাভাইরাসের কারণে দুই বছর আয়োজন করা সম্ভব হয়নি এ আয়োজনের। আজ যেন পুষিয়ে গেল সেটি।

২০২১ সালের জন্য বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এ নিয়ে ষষ্ঠবার বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার জিতলেন সাকিব, সেটি তিনি নিয়েছেন জাতীয় দলে তাঁর প্রথম অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের কাছ থেকে। পরে পাঠকদের ভোটেও বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার জিতেছেন তিনি। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের হাত থেকে পরের পুরস্কারটি নেওয়ার সময় সাকিব মজা করে বলেছেন, ‘পাপন ভাই (নাজমুল) আমাকে বলছিলেন, “তুমিই তো সব নিয়ে গেলা!” আমি বলেছি, ভোটে হলে আমাকে কেউ হারাতে পারবে না।’

হাবিবুল বাশারের সঙ্গে সাকিব আল হাসান

এবার আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে সাবেক ক্রীড়াবিদ ও বরেণ্য ক্রীড়াসাংবাদিক মুহাম্মদ কামরুজ্জামানকে। এমন সম্মান পেয়ে আপ্লুত কামরুজ্জামান বলেন, ‘এর আগে অনেকবার এ অনুষ্ঠান দেখেছি, তবে আমার ভাগ্যে জুটবে, তা ভাবতে পারিনি। আমার ক্রীড়াসাংবাদিকতার জীবন ৫৬ বছর, এত বছর যে আনন্দ পেয়েছি, আজ এমন একটা পুরস্কার দেওয়ার জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবাইকে ধন্যবাদ।’

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে মুহাম্মদ কামরুজ্জামানকে

এবার বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ রানারআপ হয়েছেন দুজন ক্রিকেটার—মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন দাস। ব্যক্তিগত কারণে নিজের পুরস্কার নিতে আসতে পারেননি লিটন, তাঁর হয়ে আসিফের কাছ থেকে সেটি গ্রহণ করেছেন ভাই বাপ্পী দাস। এক ভিডিও বার্তায় লিটন বলেছেন, ‘এ পুরস্কার পেয়ে অনেক খুশি হয়েছি। আরও খুশি হতাম, যদি সামনে থেকে নিতে পারতাম। ভবিষ্যতে এটি আমাকে প্রেরণা দেবে। সবাই দোয়া করবেন, যাতে আরও ভালো পারফরম্যান্স করতে পারি।’

মিরাজ অবশ্য নিজেই এসেছিলেন। গলফার সিদ্দিকুর রহমানের কাছ থেকে পুরস্কার নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘আমাদের সবাইকে যেভাবে অনুপ্রেরণা জোগায় প্রথম আলো, এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। সবাই দোয়া করবেন, সামনে অনেক খেলা আছে আমাদের।’

বর্ষসেরা নারী ক্রীড়াবিদ দিয়া সিদ্দিকী পুরস্কার নিচ্ছেন জোবেরা রহমান লিনুর কাছ থেকে

বর্ষসেরা নারী ক্রীড়াবিদ হয়েছেন আর্চার দিয়া সিদ্দিকী। টেবিল টেনিসের কিংবদন্তি জোবেরা রহমান লিনুর হাত থেকে পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বসিত এ আর্চার বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এত বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী। বিকেএসপি, ফেডারেশনকে ধন্যবাদ। সুইজারল্যান্ডে পারফরম্যান্সের জন্যই এমন একটা পুরস্কার। প্রথম আলোকে ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে আরও ভালো করার প্রেরণা দেবে এটি।’

এবার বর্ষসেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হয়েছেন ফুটবলার শাহেদা আক্তার। রাসেল মাহমুদ, সাকিব, তামিম ইকবালদের মতো খেলোয়াড়েরা একসময় জিতেছিলেন এটি। নারী ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানির কাছ থেকে পুরস্কার নিয়ে শাহেদা শুনিয়েছেন তাঁর আত্মবিশ্বাসের কথা, ‘সবাইকে ছাপিয়ে একদিন প্রথম আলোর বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ হতে চাই।’

অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন জাতীয় নারী দলের ফুটবলার মাসুরা পারভীন, ইতি রানী সরকার, সানজিদা আক্তার, মণিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমারা।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্রর কথায় খুব মজা পেলেন বর্ষসেরা রানারআপ মেহেদী হাসান মিরাজ। পাশে মিরাজের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া গলফার সিদ্দিকুর রহমান

স্বাগত বক্তব্যে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে খেলার একটা সম্ভাবনা আছে। সবাইকে সম্পৃক্ত করতে পারলে শুধু খেলা নয়, আমাদের দেশের অগ্রগতির একটা যাত্রা শুরু হবে। খেলাধুলা থেকে শুরু করে অর্থনীতি—সবখানে একটা যাত্রা শুরু হয়েছে। আমরা সব সময়ই বলি, আমরা বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই। আমরা সব খেলোয়াড়কে ভালোবাসি। তাঁদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা থাকুক। আপনারা ভালো থাকুন, আপনাদের প্রতি প্রথম আলোর ভালোবাসা থাকবে।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক জাফর উদ্দিন সিদ্দিকী, মোহাম্মাদী গ্রুপের চেয়ারপারসন রুবানা হক ও প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক তারেক মাহমুদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র।