কেনিয়ার উইনফ্রেড ইয়াভি এখন বাহরাইনের
কেনিয়ার উইনফ্রেড ইয়াভি এখন বাহরাইনের

সুযোগের জন্য দেশ ছেড়ে এখন তিনি সোনাজয়ী

অনেকেই বলেছিলেন দেশ ছেড়ে না যেতে। কেনিয়া ছেড়ে গেলে খেলার সুযোগ হয়তো বাড়বে, কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য পাওয়ার নিশ্চয়তা কী! নেতিবাচক মন্তব্য আর অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন উইনফ্রেড ইয়াভি। শুধু খেলার সুযোগ পেতে কেনিয়ার এই দৌড়বিদ নাগরিকত্ব নেন বাহরাইনের। এবার প্যারিস অলিম্পিকে কেনিয়ার প্রতিযোগিকেই টপকে বাইরাইনকে সোনা এনে দিলেন সেই ইয়াভি।

৩০০০ মিটার স্টিপলচেজের এই সোনা বাহরাইনের অলিম্পিক ইতিহাসে মাত্র তৃতীয়, যার সুবাদে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি থেকে বড় অঙ্কের অর্থ পুরস্কারও পেতে যাচ্ছেন ইয়াভি।

২৪ বছর বয়সী ইয়াভি বাধাবিপত্তি টপকে ৩ হাজার মিটারের দৌড় শেষ করেন ৮ মিনিট ৫২.৭৬ সেকেন্ডে। অলিম্পিকে এটি নতুন রেকর্ড। আগের রেকর্ড বেইজিং অলিম্পিকে রুশ অ্যাথলেট গুলনারা গালকিনার (৮ মিনিট ৫৮.৮১ সেকেন্ড)। ইয়াভি নতুন রেকর্ড গড়ার পথে পেছনে ফেলেছেন এই ইভেন্টের বর্তমান বিশ্ব রেকর্ডের মালিক কেনিয়ার ফেইথ চেরোটিচ (ব্রোঞ্জ) এবং উগান্ডার পেরুথ চেমুতাইকে (রুপা)। ইয়াভি গত বছর ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপেও ৩০০০ মিটার স্টিপলচেজে সোনা জিতেছিলেন। তার আগে ২০১৮ অনূর্ধ্ব–২০ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে জিতেছিলেন ব্রোঞ্জ।

৩ হাজার মিটার স্টিপলচেজে নতুন রেকর্ড গড়েছেন ইয়াভি

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জেতা ইয়াভির সব সাফল্যেই যুক্ত হতে পারত কেনিয়ার নাম। কারণ জন্ম, বেড়ে ওঠা, অ্যাথলেট হয়ে ওঠা—সব কিছু মিলিয়েই তিনি আপাদমস্তক কেনিয়ান। কেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে নিজের দেশ ছেড়ে আরেক দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তা জানিয়েছিলেন গত বছরের এক সাক্ষাৎকারে। তখন ইয়াভি বলেন, ‘আমি কেনিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করার  সুযোগ পাইনি। আমি ট্রায়ালে যেতাম। কিন্তু সব সময় উত্তীর্ণ হতে পারতাম না। কেনিয়াতে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। সব সময়ই প্রচুর অ্যাথলেটের জোগান আছে। দেখা যেত, বড় ইভেন্টগুলোর জন্য কেনিয়া থেকে মাত্র দুজন নির্বাচিত করা হতে। আমি কেনিয়ার হয়ে খেলতে চাইলেও দুজনের মধ্যে থাকা হতো না।’

বারবারই সুযোগবঞ্চিত হওয়ায় ক্যারিয়ারের কথা ভেবে ভিন্ন দেশের কথা ভাবতে শুরু করেন ইয়াভি। ২০১৬ সালের ট্রায়ালে তৃতীয় হওয়াটা তাঁকে বাহরাইনের দিকে ঠেলে দেয় জানিয়ে ইয়াভি বলেন, ‘মনে আছে ২০১৬ সালের এক ট্রায়ালে যখন বাদ পড়লাম, প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলাম। সেবার অনেক পরিশ্রম করেছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি। একপর্যায়ে বাহরাইনের সুযোগ এলো।’

কিন্তু কেনিয়া ছেড়ে বাহরাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ ছিল না, ‘সবাই ব্যাপারটা খুব নেতিবাচকভাবে নিয়েছিল। আমাকে বলা হলো, তুমি কীভাবে নিশ্চিত যে সেখানে গেলে ভালো করবে। একেকজন এসে একেকটা কথা বলত। বেশির ভাগই বলত, যেয়ো না। খুবই দ্বিধার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম।’

দ্বিধান্বিত ইয়াভি শেষ পর্যন্ত বাবা মা, কোচদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, ক্যারিয়ারের কথাই আগে ভাববেন। সে বছরই বাহরাইনের নাগরিকত্বের প্রক্রিয়া শুরু করেন। সুযোগ পান ২০২১ সালে  টোকিও অলিম্পিকেও।

কেনিয়ায় সুযোগ না পেয়ে তিনি এখন বাহরাইনের

কিন্তু ভিন্ন একটা দেশে গেলেই যে সাফল্যের নিশ্চয়তা নেই—অনেকের বলা এই কথাটাই ফলে যায়। টোকিওতে ৩ হাজার মিটার স্টিপলচেজে ইয়াভি হন ১০তম। এরপর যেন জেদ চেপে বসে। বাহরাইনের নাগরিকত্ব নিলেও অনুশীলনের অনুকূল আবহাওয়ার জন্য নিজের দেশ কেনিয়াতেই কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন। আর সেটিরই ফল হিসেবে ২০২২ সালে তুরস্কে হওয়া ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে হন প্রথম। পরের বছর ২০২৩ সালে খেলেন আরব গেমস, ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ এবং এশিয়ান গেমসে। এই তিন আসরে চারটি ইভেন্টের (একটি ১৫০০ মিটারসহ) সব কটিতেই জেতেন সোনা, যার ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন এবার প্যারিসে। সেটিও আবার অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে।

কেনিয়ান সংবাদমাধ্যম পালসলাইভ জানিয়েছে, অলিম্পিক সোনা জয়ে বাহরাইন সরকার ইয়াভিকে ৫ কোটি ৩০ লাখ কেনিয়ান শিলিং দেবে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ কোটি ৮২ লাখ ৬৯ হাজার টাকার বেশি।