প্রেমিকা রিভা স্টিনক্যাম্পের সঙ্গে ২০১২ সালে একটি অনুষ্ঠানে অস্কার পিস্টোরিয়াস। পরের বছর স্টিনক্যাম্পকে খুন করেন পিস্টোরিয়াস।
প্রেমিকা রিভা স্টিনক্যাম্পের সঙ্গে ২০১২ সালে একটি অনুষ্ঠানে অস্কার পিস্টোরিয়াস। পরের বছর স্টিনক্যাম্পকে খুন করেন পিস্টোরিয়াস।

কারাগার থেকে মুক্ত প্রেমিকাকে খুন করা ‘ব্লেড রানার’ পিস্টোরিয়াস

কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ‘ঘরে আছেন’ দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অলিম্পিক দৌড়বিদ অস্কার পিস্টোরিয়াস। ১১ বছর আগে প্রেমিকা রিভা স্টিনক্যাম্পকে খুনের দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সে সময় বেশ আলোচিত ছিল এ ঘটনা।

কারাদণ্ডের অর্ধেকের বেশি পার করার পর ৩৭ বছর বয়সী দুই পা–বিহীন এই দৌড়বিদকে রাজধানী প্রিটোরিয়ার বাইরের অ্যাটারিজভিল কারাগার থেকে আজ নিভৃতেই বের করে আনা হয়। বাইরে অবশ্য অপেক্ষায় ছিলেন অনেক সংবাদকর্মী। তবে কারা কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের আগেই জানিয়ে দেয়, পিস্টোরিয়াসের সঙ্গে কথা বলা বা ছবি তোলার কোনো সুযোগ থাকবে না।

এক বিবৃতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার শোধনাগার সার্ভিস বিভাগ বলেছে, তাকে গণ শোধনাগার ব্যবস্থায় নেওয়া হয়েছিল এবং এখন তিনি ঘরে আছেন।

২০১৪ সালে আদালতে পিস্টোরিয়াস

প্যারোলের শর্ত অনুযায়ী, কার্বন-ফাইবারের কৃত্রিম পা দিয়ে দৌড়ে ‘ব্লেড রানা’ নামে খ্যাতি পাওয়া পিস্টোরিয়াস সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।

২০১৩ সালের ভালোবাসা দিবসের ভোরে তখনকার ২৯ বছর বয়সী মডেল স্টিনক্যাম্পকে বাথরুমের দরজা দিয়ে চারবার গুলি করে হত্যা করেন পিস্টোরিয়াস। তার আগের বছরই লন্ডনে দৌড়ে ইতিহাস গড়েন পিস্টোরিয়াস। অলিম্পিক পর্যায়ে দুই পা–বিহীন প্রথম দৌড়বিদ ছিলেন তিনি।

প্রিটোরিয়ার এ কারাগারে ছিলেন পিস্টোরিয়াস

শুরুতে ২০১৪ সালে উচ্চ আদালতের এক রায়ে অনিচ্ছাকৃত হত্যার দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল পিস্টোরিয়াসকে। তবে আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে জেনেবুঝে খুনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেন। ২০১৭ সালে দীর্ঘ শুনানি ও কয়েক দফা আপিলের পর তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যদিও রাগের মাথায় স্টিনক্যাম্পকে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন পিস্টোরিয়াস। তাঁর দাবি, ডাকাত ভেবে গুলি করেছিলেন তিনি।

লাগবে থেরাপি
পিস্টোরিয়াসের মুক্তির দিন সকালে একটি বিবৃতি দিয়েছেন স্টিনক্যাম্পের মা জুন। তিনি বলেছেন, বিচারিক পদ্ধতির সিদ্ধান্ত ও প্যারোলের শর্ত মেনে নিলেও তাঁর ‘বেদনা এখনো তরতাজা ও বাস্তব।’

জুন বলেন, ‘আপনার ভালোবাসার মানুষ যদি ফিরে না আসে, তাহলে ন্যায়বিচার কখনোই হবে না আর কোনো পরিমাণের সাজাই রিভাকে ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট নয়। আমরা, যারা এখনো পড়ে আছি, তারাই আসলে যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছি।’

দক্ষিণ আফ্রিকার নিয়ম অনুযায়ী, সাজার অর্ধেক পেরোনোর পর একজন অপরাধী স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্যারোলের যোগ্য হন। গত মার্চে প্রথমবারের মতো প্যারোলের আবেদন করেন পিস্টোরিয়াস। তবে সে সময় বোর্ড দেখেছিল, সাজার পর্যাপ্ত সময় পার হয়নি।

পিস্টোরিয়াসের রায় ঘোষণার সময় রিভা স্টিনক্যাম্পের মা জুন, ২০১৬ সালে

তবে অক্টোবরে সাংবিধানিক আদালত রায় দেন, আগেরবার ভুল হয়েছে। ফলে নভেম্বরে পিস্টোরিয়াসের মুক্তির শুনানির পথ খুলে যায়। গত ২৪ নভেম্বর পিস্টোরিয়াসের প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

প্যারোলের অংশ হিসেবে ২০২৯ সালে সাজা শেষ হওয়া পর্যন্ত পিস্টোরিয়াসকে তাঁর রাগ ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার জন্য থেরাপিতে অবশ্যই অংশ নিতে হবে। এ সময়ে অ্যালকোহল ও অন্যান্য বস্তু সেবন থেকে নিষিদ্ধ থাকবেন তিনি। পাশাপাশি জনসেবামূলক কাজে অংশ নিতে হবে, দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় বাসায় থাকতে হবে।

পিস্টোরিয়াসের প্যারোলের শর্ত প্রসঙ্গে জুন স্টিনক্যাম্প আজ শুক্রবার বলেন, ‘এগুলো পরিষ্কার বার্তা দেয়—লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাকে দেশের বিচারিক ব্যবস্থায় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।’