আমন্ত্রণমূলক হকি টুর্নামেন্টে খুব একটা খেলার সুযোগ আসে না বাংলাদেশের সামনে। এবার অনেক দিন পর তাইওয়ান থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে দল পাঠাতে চেয়েছিল বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। ২৫ জুলাই শুরু হতে যাওয়া ৮ জাতির টুর্নামেন্টের জন্য বাংলাদেশ দলের ক্যাম্প শুরুর পরিকল্পনা ছিল ৮ জুলাই থেকে। কিন্তু ১১ জুলাই পেরিয়ে গেলেও ক্যাম্পের খবর নেই। দেখা যাচ্ছে না দল পাঠানোর কোনো দৃশ্যমান তৎপরতাও।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মনিমুল হকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ‘টাকার অভাবে’ শেষ পর্যন্ত তাইওয়ানে দল পাঠাতে পারছেন না তাঁরা। ফেডারেশনের আর্থিক সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফেডারেশনের কোনো ফান্ড নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমি চেষ্টা করছি। আমার একটা বিল হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি। ওটা হলে হয়তো পাঠাতে পারি। তবে সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। মনে হয় না দল পাঠাতে পারব।’
মমিনুলের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী বিমান টিকিটের জন্যই প্রায় ২৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। খেলোয়াড়দের পোশাকসহ অন্যান্য খরচের জন্য চাই আরও ১০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, ‘টাকার ব্যবস্থা না করে আমি তো ক্যাম্প শুরু করতে পারি না। তাই চাচ্ছি না ক্যাম্প ডেকে লজ্জায় পড়তে।’
অবশ্য তাইওয়ানে দল পাঠাতে আর্থিক সংকটের কথা বলা হলেও আগামী মাসের শেষ দিকে নাকি ইউরোপে দুই মাসের জন্য কন্ডিশনিং ক্যাম্প করতে পাঠানো হবে জাতীয় দলকে। সাধারণ সম্পাদক নিজেই বলেছেন, ‘ইউরোপে দুই মাসের কন্ডিশনিং ক্যাম্প করব আমরা। জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ডের সঙ্গে অনুশীলন ম্যাচ খেলা হবে। সব মিলিয়ে ২০-২৫টি অনুশীলন ম্যাচ খেলব সেখানে। ২০-২৫ জনের দল আগস্টের দিকে পাঠাব।’
কিন্তু টাকার অভাবে যেখানে তাইওয়ানে দল খেলতেই যেতে পারছে না, সেখানে ইউরোপের ক্যাম্প করার টাকা আসবে কোত্থেকে? টাকার ব্যবস্থা যদি হয়ই, তা দিয়ে দলকে খেলতে পাঠানোটাই কি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত নয়?
এসব প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক। তবে দাবি করলেন, নিজের পকেট থেকেই নাকি হকিতে টাকা দিচ্ছেন তিনি, ‘পকেট থেকে টাকা দিয়ে প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলাম। স্পনসর থেকে পাই ১৩ লাখ টাকা। খরচ হয়েছে ৭২-৭৩ লাখ টাকা। গত বছর প্রথম বিভাগের প্রতিটি দলকে পকেট থেকে দুই লাখ টাকা করে দিয়েছি। দ্বিতীয় বিভাগের প্রতি দলকে এক লাখ টাকা করে। ফেডারেশনে অতিরিক্ত যা লেগেছে, পকেট থেকে দিয়েছি। আমার একার পক্ষে তো সব করা সম্ভব নয়। এখন রাষ্ট্রকেও এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি জানান, হকি ফেডারেশনের তহবিলে এখন নাকি কোনো টাকাই নেই। স্থায়ী আমানত আছে দুই কোটি টাকা। সেই স্থায়ী আমানত থেকে ছয় মাস পরপর ছয় লাখ টাকা আসে। এর বাইরে ফেডারেশনের আর কোনো আর্থিক উৎস নেই বলে দাবি সাধারণ সম্পাদকের।
অবশ্য হকি মানে এখন যতটা খেলা, তার চেয়ে বিতর্ক আর ব্যর্থতাই বেশি। হকি লিগ মানেই মারামারি, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, শাস্তি, অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও খেলোয়াড়দের কোটি টাকা বাকি। মূল স্পনসর নাকি কোনো টাকাই দেয়নি। এখন তাইওয়ানে দল পাঠাতে চেয়েও পাঠাতে পারছে না আর্থিক সংকটে।
জাতীয় দলের পেছনে খরচ করার সামর্থ্যই নেই ফেডারেশনের। পৃষ্ঠপোষক জোগাড় করার কাজেই দিচ্ছে ব্যর্থতার পরিচয়। এরকমই যদি চলবে, এই হকি ফেডারেশন থেকেই বা লাভ কী!
ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেক হতাশার সুরে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্বল ফেডারেশন হলো হকি। বছরে ২-৩ কোটি টাকাও খরচ হয় না। টাকা এখানে বিরাট সমস্যা। শুনেছি, সাধারণ সম্পাদক সাইদ (মমিনুল হক) নাকি কিছু টাকা দিয়েছে। সেই–বা কত দেবে! অনেকেই ফেডারেশনে আসে চা খাওয়া আর আড্ডা মারার জন্য। তবে আমি মনে করি, এফডিআর ভেঙে হলেও তাইওয়ানে দল পাঠানো উচিত।’