প্যারিসে ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে চীনের সাঁতারু প্যান ঝ্যানলের গড়া বিশ্ব রেকর্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন একজন অস্ট্রেলিয়ান কোচ ও ধারাভাষ্যকার। এরপর চীনের সংবাদমাধ্যম, অ্যাথলেট ও নেটিজেনরা সেসবের পাল্টা জবাব দিচ্ছেন।
গত ৩১ জুলাই ৪৬.৪০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল শেষ করেন প্যান। গত ফেব্রুয়ারিতে দোহায় গড়া নিজের বিশ্ব রেকর্ডই ০.৪০ সেকেন্ড ব্যবধানে ভাঙেন এ ১৯ বছর বয়সী। প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার কাইল চামার্স ও রোমানিয়ার ডেভিড পোপোভিচিকে টপকে যান তিনি।
এর আগে সেমিফাইনালে প্যানের টাইমিং ছিল ৪৮.৪০ সেকেন্ড, যা ফাইনালের চেয়ে ২ সেকেন্ড বেশি। প্যানের বিশ্ব রেকর্ডের পর ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে সাবেক অলিম্পিয়ান ব্রেট হক বলেন, ‘দেখুন, আমি সত্যি বলব। আমি এ সাঁতারে ক্ষুব্ধ। বেশ কয়েকটি কারণে ক্ষুব্ধ আমি। আমার বন্ধুরা ইতিহাসের দ্রুততম সাঁতারু—রাউডি গেইনস থেকে অ্যালেক্স পোপোভ থেকে গ্যারি হল জুনিয়র, অ্যান্থনি আরভিন থেকে একদম কিং কাইল চামার্স পর্যন্ত।’
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হক বলেন, ‘আমি এসব মানুষকে ঘনিষ্ঠভাবে চিনি, তাঁদের নিয়ে ৩০ বছর ঘাঁটাঘাঁটি করেছি। তাঁদের খেলা নিয়ে গবেষণা করেছি, গতি নিয়ে করেছি। আমি এটা বুঝি, আমি এতে বিশেষজ্ঞ। আমি এটাই করি। এটা বাস্তব নয়। আপনি কাইল চামার্স, ডেভিড পোপোভিচি, জ্যাক অ্যালেক্সি—তাঁদের ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে একটা পূর্ণ বডিলেংথে হারাতে পারেন না। এটা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।’
তবে ঝ্যানলে অলিম্পিকে পূর্ণাঙ্গ ডোপ টেস্টের ভেতর দিয়ে কোনো রকম পজিটিভ ফল ছাড়াই পার হয়েছেন বলে দাবি সংবাদমাধ্যম দ্য চায়না ডেইলির। তাদেরকে প্যান বলেছেন, মে থেকে জুলাই পর্যন্ত ২১টি ডোপ টেস্ট দিয়েছেন তিনি, ‘আমি এসবের টেস্টের সব প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেছি এবং আত্মবিশ্বাসী থেকেছি যে আমি স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।’
প্রস্তুতি ও কৌশলের কারণে রেকর্ড গড়া সম্ভব হয়েছে বলেও জানান প্যান, ‘শেষ স্প্লিটে পুশ আর কিক শক্তিশালী করতে আমি অনেক রকম অনুশীলন করেছি। আমরা জলের তলে আমাদের কৌশল ও স্ট্রোক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য বৈজ্ঞানিক একটা পদ্ধতি অবলম্বন করেছি। যাতে আমরা আরও ভালোভাবে ও কার্যকরভাবে প্রস্তুতি নিতে পারি।’
হকের মন্তব্য চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘তাদের অযোগ্য, ক্ষুব্ধ ও নিজেদের আত্মরক্ষণ ভেঙে যেতে দেখে দারুণ লাগছে।’ আরেকজন বলেছেন, ‘সে আমাদের প্রশংসা করছে, বলছে যে এটি সম্ভব নয়। কিন্তু মাফ করবেন, আমরা আসলে সেটিই করেছি।’
টোকিও অলিম্পিকে ২৩ জন চায়নিজ সাঁতারু নিষিদ্ধ হার্টের ওষুধ নিয়েছিলেন, গত এপ্রিলে এমন প্রতিবেদন আসার পর থেকেই চীনের সাঁতারের দল বেশ কাটাছেঁড়ার মধ্যে আছে। যদিও চীনের তদন্তের পর বলা হয়েছিল, হোটেলের রান্নাঘরের দূষণ থেকেই অমন প্রতিবেদন এসেছিল। যেটি গ্রহণযোগ্যও মনে করেছিল ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি (ওয়াডা)। একটি স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষণও ওয়াডার এ ব্যাপারটি সামলানোর পক্ষে কথা বলেছিল।
ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিকসের এক অডিটে এরপর বলা হয়, এ ক্ষেত্রে কোনো অব্যবস্থাপনা বা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার ব্যাপার ছিল না। এমনিতেও নিউইয়র্ক টাইমস ও জার্মান ব্রডকাস্টার এআরডির ওই প্রতিবেদনে প্রকাশিত সাঁতারুদের মধ্যে প্যানের নাম ছিল না।
এদিকে মেয়েদের ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে ব্রোঞ্জ জেতা চায়নিজ সাঁতারু ঝ্যান ইউফিকে প্যানের সাঁতার প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ‘চায়নিজ অ্যাথলেটরা দ্রুতগতিতে সাঁতার কাটলেই কেন প্রশ্ন ওঠে? (মাইকেল) ফেল্প্স যখন জিতেছিল, তখন কেন কেউ প্রশ্ন তোলার সাহস করেনি?’