টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দুই বিভাগের কোনোটিতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখেনি বাংলাদেশ। শক্তিশালী ভারতকে দু্ই বিভাগে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন ধরে নেওয়া হয়েছিল। স্বাগতিক বাংলাদেশ ফাইনালে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে শুরু করে চার দেশের টুর্নামেন্ট । লক্ষ্য পূরণ করে দুই বিভাগেই ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। তবে ফাইনালে উঠেই খুশি থাকেনি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ নারী হ্যান্ডবল দল। বঙ্গবন্ধু আইএইচএফ চ্যালেঞ্জ ট্রফি উইমেন্স টুর্নামেন্টের যুব বিভাগের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে বাংলাদেশ।
আজ পল্টনে শহীদ (ক্যাপ্টেন) এম মনসুর আলী জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব-১৭ বিভাগের ফাইনালে ভারতকে ৪৬-৪৩ গোল ব্যবধানে হারিয়েছে স্বাগতিকেরা। তবে অনূর্ধ্ব-১৯ বিভাগের ফাইনালে পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ। এই বিভাগে ভারত জেতে ৪৮-১৭ ব্যবধানে।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিভাগের ফাইনাল নাটকীয় মোড় নেয় বেশ কয়েকবার। দু দলের তীব্র লড়াইয়ে একবার ভারত এগিয়ে যায় তো আবার সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। ১ ঘণ্টার এই ম্যাচে প্রথমার্ধের ২০ মিনিটে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে ১৬-১০ গোলে। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন অধিনায়ক মোসাম্মাত মারফি ও রুনা লায়লারা। মুহুর্মুহু আক্রমণে ভারতের রক্ষণে কাঁপন ধরান ডালিয়া আক্তারের শিষ্যরা। প্রথমার্ধ শেষে স্কোর দাঁড়ায় ২০-২০।
৪৪তম মিনিটে লাল কার্ড পেয়ে ম্যাট ছাড়েন ভারতের প্রাধান্য বালাসো মানে। ভারত পরিণত হয় ৬ জনের দলে। বাংলাদেশের খেলোয়াড় ছিল ৭ জন। ওই সময়ও ম্যাচে সফরকারীরা এগিয়ে ছিল ৩৩-২৮ গোলে।
একটা সময় মনে হচ্ছিল লিগ পর্বের মতো ফাইনালেও ভারতের কাছে হারতে যাচ্ছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দল। কারণ পিছিয়ে থাকাবস্থায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় অধিনায়ক মারফিকে।
এরপর বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায় রুনা লায়লা, তানিয়া, দ্বীপা রানীদের নৈপূণ্যে। সর্বোচ্চ ১৫ গোল করেন অধিনায়ক মারফি। রুনা লায়লা ১৪, তানিয়া ১০, দ্বীপা রানী ৫, ফাতেমা প্রেমা ও সানিয়া আক্তার ১টি করে গোল করেন। ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৬ গোল রেনুকার।
ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশের কোচ ডালিয়া আক্তার বলেছেন, ‘টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বলেছিলাম চমক দেখাবে আমার দল। সেটাই করে দেখিয়েছে তারা। মেয়েদের এমন পারফরম্যান্সে আমি অনেক খুশি। আমি আমার খেলোয়াড়ি জীবনে কখনো ভারতকে হারাতে পারিনি। কিন্তু প্রথমবার কোচ হয়ে সেই অর্জনে নাম লেখাতে পেরেছি। ভারতকে যে কোনো খেলায় হারানো কঠিন। হ্যান্ডবলে তো আরও কঠিন। সেই কঠিন কাজ আমার মেয়েরা করে দেখিয়েছে।’
বাংলাদেশের কোচের সংযোজন, ‘পিছিয়ে থাকলেও আত্মবিশ্বাস ছিল মেয়েরা ঘুরে দাঁড়াবে। ওরা আমার পরিকল্পনা মাঠে বাস্তবায়ন করেছে। মারফি যখন লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ে তখনো দল পিছিয়ে। কিন্তু রুনা, দ্বীপারা দারুণ খেলেছে। বিশেষ করে আমার গোলরক্ষকের কথা আলাদাভাবে বলব। সে অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে। লিগ পর্বে ভারতের কাছে হেরেছিলাম। সেখানে যে ভুলগুলো মেয়েরা করেছিল; আজ সে ভুলগুলো কম করেছে। সব মিলে আমি দারুণ খুশি।’
পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলেছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের অধিনায়ক মারফি। দলকে ফাইনালে তুলে আনা থেকে চ্যাম্পিয়ন করার পেছনে তাঁর বড় ভূমিকা। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক বলেন, ‘আমি অনেক খুশি। কোচ, খেলোয়াড়, কর্মকর্তা সবাইকে ধন্যবাদ। সবাই আমাদের অনেক সমর্থন দিয়েছেন। আজ অনেক দর্শকও মাঠে এসে আমাদের সমর্থন দিয়েছেন।’