১৫তম বারের মতো জাতীয় অ্যাথলেটিকসে দ্রুততম মানবী হয়েছেন শিরিন আক্তার
১৫তম বারের মতো জাতীয় অ্যাথলেটিকসে দ্রুততম মানবী হয়েছেন শিরিন আক্তার

‘জানি না দৌড়টা কেন এত সুন্দর হয়েছে’

টানা ১৩ বার হয়েছেন দেশের দ্রুততম মানবী। তারপর আরও দুবার। সর্বশেষ গত পরশু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শেষ হওয়া ৪৭তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসে ১৫তম বারের মতো দ্রুততম মানবী তো হয়েছেনই, জিতেছেন প্রতিযোগিতার সেরা নারী খেলোয়াড়ের পুরস্কারও। ২০০ মিটারে নিজের রেকর্ড ভেঙেছেন। দুটি রিলেতে নৌবাহিনীকে সোনা জেতাতে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। কিন্তু এতটা সময় ধরে তিনি কীভাবে পারছেন শ্রেষ্ঠত্বের দৌড়ে বিজয়ী হতে? শিরিন আক্তারের মুখেই শোনা যাক সেই কথা—

প্রশ্ন

শনিবার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ৪ x ৪০০ মিটার রিলেতে আপনি আপনার দলকে অবিশ্বাস্যভাবে জিতিয়ে দিলেন। আপনাকে কাঁধে নিয়ে সতীর্থরা মিছিল করলেন। মাঠ থেকে ফেরার পর কেমন অভিনন্দন পেলেন?

শিরিন আক্তার: অনেক, অনেক। কত যে মেসেজ এসেছে, হিসাব নেই। অনেকগুলো ভালোভাবে দেখতেও পারিনি। সবাই শুরুতে একটা কথাই লেখেন—‘অসাধারণ’। আমার ভার্সিটির ভিসি স্যার থেকে শুরু করে অনেকেই। ক্রিকেটারসহ অন্য অনেক খেলার তারকাদের কাছ থেকেও অভিনন্দন পেয়েছি।

প্রশ্ন

সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন কার অভিনন্দন পেয়ে?

শিরিন: আব্বু-আম্মুর। দুজনের কেউই ফোন করতে পারেন না। বাড়িতে একটা বাটন ফোন দেওয়া আছে। ফোন দেওয়ার সঙ্গে কীভাবে যেন ফোন ধরেন আম্মু, আমি অবাক হই। আমার খেলা মানেই আম্মু রোজা রাখেন। নিষেধ করলেও শোনেন না। তাঁরাই আজ সবচেয়ে বেশি খুশি।

প্রশ্ন

নৌবাহিনী আর সেনাবাহিনীর তীব্র লড়াই চলে অ্যাথলেটিকসে। আপনার দারুণ নৈপুণ্যে পদকতালিকায় সেনাবাহিনীর সমান ১৯টি সোনা নৌবাহিনীরও। নৌবাহিনী নিশ্চয়ই খুব খুশি?

শিরিন: ভীষণ খুশি। হকিসহ বিভিন্ন খেলার দেশসেরারা নৌবাহিনীতে আছেন। নেভির তো পুরো দল গিয়েছিল মাঠে। ওরা আমাকে নিয়ে অনেক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে।

২০০ মিটার স্প্রিন্টে নিজের রেকর্ড ভাঙার পথে শিরিন
প্রশ্ন

কিন্তু ৪০০ মিটার রিলের ফল স্থগিত আছে। সেনাবাহিনীর অভিযোগ, আপনি শেষ করার সময় মাঠে ঢুকে গিয়েছিল নৌবাহিনীর অনেক লোক। তবে আপনার দৌড়টা কখনো ভোলার নয়। এমন পারফরম্যান্সের জন্য কি প্রস্তুত ছিলেন?

শিরিন: ৩০০ মিটার পর্যন্ত আমি আমার মতো দৌড়াই। শেষ ১০০ মিটার দৌড়েছি দর্শকদের জন্য। আমাকে তারা এত উজ্জীবিত করছিল যে সেরাটা ঢেলে দিয়েছি। ওই ১০০ মিটার আমি দর্শকদের উৎসর্গ করছি। জানি না দৌড়টা কেন এত সুন্দর হয়েছে। আর দর্শকদের মাঠে ঢোকার কথা বললেন তো, সেনাবাহিনীর জেতা ছেলেদের ৪০০ মিটারের সময়ও তো ঢুকে যায় অনেকে। অতি আবেগে এমন আরও ইভেন্টে হয়েছে।

৪৭টি সোনা জিতেছেন শিরিন
প্রশ্ন

২০১৪ সালে আপনি প্রথম দ্রুততম মানবী হন। ১০ বছর পরও দ্রুততম মানবী হয়ে এত উচ্ছ্বাস কীভাবে আসে?

শিরিন: আমি যে খেলাটা ভীষণ ভালোবাসি! মাঠটাই আসলে আমার জায়গা। ভালোবাসা, নেশা—সবই। ক্লান্ত হয়ে দিন শেষে যখন শেষ করি, তারপরও মনে হয় মাঠ থেকে সতেজ হয়ে বের হচ্ছি। প্রতিটা ক্ষণই আমার নিজের মধ্যে ভালো লাগা কাজ করে।

প্রশ্ন

আপনার দৈনিক রুটিন কী?

শিরিন: ভোর পাঁচটায় উঠে নামাজ পড়ি। একটু খেয়ে প্র্যাকটিস করি ২ ঘণ্টা। বিকেলে ৩ ঘণ্টা প্র্যাকটিস। এগুলো ঠিক করে দেন আমার কোচ আবদুল্লাহেল কাফি স্যার। এর মধ্যে সাড়ে ১২টা নাগাদ দুপুরের খাবার খাই। রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে যাই।

২০০ মিটারে সোনা জয়ের পর শিরিন
প্রশ্ন

কিসের আশায় এখনো খেলছেন? আর কী পেতে চান?

শিরিন: কিছুই না। নিজের টাইমিং আরও ভালো করতে চাই, এই আর কী। নিজেকে আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে চাই। দেশের জন্য সুযোগ এলে চেষ্টা করতে চাই।

প্রশ্ন

গতকাল মাঠে বলছিলেন, আপনার সোনার সংখ্যা ৪৭ হয়ে গেছে। হাফ সেঞ্চুরির খুব কাছে দাঁড়িয়ে। বিশাল ব্যাপার...

শিরিন: ঠিক (হাসি)। সামনের মিটে ৫০টি সোনা যদি হয়ে যায়...আলহামদুলিল্লাহ। সেই চেষ্টা থাকবে।

দ্রুততম মানব ইমরানুরের সঙ্গে দ্রুততম মানবী শিরিন
প্রশ্ন

অনেকে বলেন, শিরিন রাজত্ব করছে নতুন কেউ উঠে না আসায়। আপনি নিজে কোনো চ্যালেঞ্জ অনুভব করেন?

শিরিন: না, আমার চ্যালেঞ্জটা নিজের সঙ্গে নিজের। আর পারফরম্যান্স তো আপনারা বিবেচনা করবেন।

প্রশ্ন

খেলোয়াড় না হলে কী হতেন?

শিরিন: খেলোয়াড় না হলে এত দিনে হয়তো অনেকগুলো বেবি হতো, সংসার হতো (হাসি)। আমি তো ছোটবেলায় বিকেএসপিতে চলে আসি। সাতক্ষীরার মেয়ে আমি, ওই সময় বিকেএসপিতে না এলে ২০০৮-০৯-এর দিকে হয়তো এইট-নাইটে পড়ার সময়ই আমার বিয়ে হয়ে যেত। আমার বড় আপার বিয়ে হয় নাইনে। ওভাবেই হয়তো আমার জীবন কাটত। তবে জানি না কেমন হতো।

৪০০ মিটার রিলেতে নৌবাহিনীকে অবিশ্বাস্যভাবে জেতানোর পর সতীর্থ কাঁধে শিরিন
প্রশ্ন

আপনার জন্মের পর আপনার বাবা-মা নাকি মন খারাপ করেছিলেন ছেলে না হওয়ায়...

শিরিন: তখনকার পরিবেশ, পরিস্থিতি বিবেচনায় ওনাদের চাওয়াটা ভুল বা অন্যায় ছিল না। আর আমি তো ও রকম আহামরি সুন্দরী নই। গ্রামের মানুষ এখনো ভাবে মেয়ে সুন্দর হলে ভালো পরিবারে বিয়ে হবে। তবে এখন মানসিকতা বদলাচ্ছে।

বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী শিরিন
প্রশ্ন

বিয়ে-সংসার নিয়ে কী ভাবছেন?

শিরিন: বয়স এখন তো ২৯। বিয়েশাদি নিয়ে ভাবছি। সেই সময়টা হয়তো খুব দ্রুতই আসবে। থাক, আপাতত এটুকুই (হাসি)।