মেয়েদের ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে সোনা জয়ের পর আরিয়ার্না টিটমাসের উচ্ছ্বাস
মেয়েদের ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে সোনা জয়ের পর আরিয়ার্না টিটমাসের উচ্ছ্বাস

‘রেস অব দ্য সেঞ্চুরি’তে লেডিকিকে হারিয়ে ইতিহাসে টিটমাস

অলিম্পিকের আদিকাল থেকেই সাঁতারের লড়াই মানে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈরথ। যে দ্বৈরথে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ১৯৫৬ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিকের পর আর সাঁতারের পদক তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপরে উঠতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের সেই রাজত্বে হানা দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে গতকাল সাঁতারের প্রথম দিনটি শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া। অন্তত প্রথম দিনে তারা সফল। প্যারিস লা ডিফেনসে অ্যারেনার পুলে কাল ৪টি সোনার পদকের নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে দুটি জিতে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া। একটি করে সোনা জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি।

অলিম্পিক সাঁতারে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার লড়াইয়ে এবার নতুন মাত্রা যোগ করেছেন কেটি লেডিকি ও আরিয়ার্না টিটমাস। ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে মেয়েদের ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে সোনা জিতেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের লেডিকি। টোকিও বিশ্বকাপে আর শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারেননি তিনি। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে এক বছর পিছিয়ে ২০২১ সালে হওয়া অলিম্পিকে এই ইভেন্টে সোনা জেতেন অস্ট্রেলিয়ার টিটমাস।

এবারের অলিম্পিকে লেডিকি তাই প্যারিসে পা রেখেছেন সোনার পদক পুনরুদ্ধারের মিশন নিয়ে, আর টিটমাসের লক্ষ্য ছিল সোনার পদক ধরে রাখা। সব মিলিয়ে এ দুজন পুলে নামার আগেই সাঁতারের জগতে খুব হইচই পড়ে গিয়েছিল মেয়েদের ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইল ইভেন্ট নিয়ে। কেউ কেউ তো এটাকে আখ্যা দেন ‘রেস অব দ্য সেঞ্চুরি’ বলে। সেই রেস অব দ্য সেঞ্চুরি জিতে কাল ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটি লিখিয়ে নিয়েছেন টিটমাস।

মেয়েদের ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতারে সোনাজয়ী টিটমাসের সঙ্গে রুপাজয়ী ম্যাকিন্টোস (বাঁয়ে) ও ব্রোঞ্জ জেতা লেডিকি (ডানে)

প্রথম নারী হিসেবে প্রায় ১০০ বছরের মধ্যে ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতারে টানা দুই অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন টিটমাস। আর ডন ফ্রেজারের পর প্রথম অস্ট্রেলিয়ান নারী হিসেবে সাঁতারের যেকোনো ইভেন্টে টানা দুবার অলিম্পিক সোনা জয়ের কীর্তিও গড়েছেন তিনি। ফ্রেজার ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত টানা তিন অলিম্পিকে জিতেছিলেন ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলের সোনা। টিটমাসের এমন কীর্তি গড়ার রাতে একদমই ম্লান ছিলেন লেডিকি। কানাডার ১৭ বছর বয়সী সাঁতারু ম্যাকিন্টোসেরও পেছনে থেকে ব্রোঞ্জ জিতেছেন পুলে আধিপত্য ধরে রাখার যুক্তরাষ্ট্রের মিশনের অন্যতম এই ভরসা।

টিটমাস সোনার পদক জিততে সময় নিয়েছেন ৩ মিনিট ৫৭.৪৯ সেকেন্ড। ৩ মিনিট ৫৮.৩৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে রুপা জিতেছেন ম্যাকিন্টোস। লেডিকি ব্রোঞ্জ জিতেছেন ৪ মিনিট ০.৮৬ সেকেন্ডে সাঁতার শেষ করে। অলিম্পিকে এটি ছিল তাঁর ১১ নম্বর পদক।
শুধু টিটমাসের কাছে লেডিকির হারই নয়, প্যারিসে সাঁতারের প্রথম দিনটিই ছিল আসলে অস্ট্রেলিয়ার। মেয়েদের ৪ গুণিতক ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলেতেও সোনা জিতেছে তারা। সেটাও আবার নতুন অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে। রিলেতে সোনা জিততে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা সময় নিয়েছে ৩ মিনিট ২৮.৯২ সেকেন্ড। ৩ মিনিট ৩০.২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে রুপা জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছে চীন

ছেলেদের ৪ গুণিতক ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলেতে অবশ্য ৩ মিনিট ০৯.২৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে সোনা জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৩ মিনিট ১০.৩৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে রুপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ব্রোঞ্জ জিততে ইতালির সাঁতারুরা সময় নিয়েছেন ৩ মিনিট ১০.৭০ সেকেন্ড।

গতকাল সাঁতারের আরেকটি যে ইভেন্ট হয়েছে, ছেলেদের সেই ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে সোনা জিততে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়ার কেউ। এই ইভেন্টে ৩ মিনিট ৪১.৭৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে সোনা জিতেছেন জার্মানির লুকাস মার্টেনস। ৩৬ বছরের মধ্যে সাঁতারে এটি জার্মানির প্রথম সোনা জয়। মার্টেনসের চেয়ে ০.৪৩ সেকেন্ড পিছিয়ে রুপা জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ার এলিজা উইনিংটন। ব্রোঞ্জ জিতেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কিম উ-মিন।