তাইওয়ানে ৮ জাতি টুর্নামেন্টে খেলার আমন্ত্রণ পেয়ে জাতীয় দল পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করেছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। ২৫ থেকে ৩১ জুলাই অনুষ্ঠেয় আমন্ত্রণমূলক তাইওয়ান আন্তর্জাতিক পুরুষ হকি টুর্নামেন্টে দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, জাপান, শ্রীলঙ্কা ও স্বাগতিক তাইওয়ানের সঙ্গে বাংলাদেশের খেলাও মোটামুটি নিশ্চিত বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন।
দল গঠনের জন্য প্রাথমিক খেলোয়াড় নির্বাচনও হয়ে গেছে। হকি ফেডারেশনের অবশ্য কোনো নির্বাচক কমিটি নেই। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক জানিয়েছেন, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব এহছান, সদস্য খাজা তাহের লতিফ ও মাহবু্ব হারুণ এবং তিনি নিজে অন্তবর্তীকালীন নির্বাচক কমিটির সদস্য। সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, ঘরোয়া হকিতে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিপ্রাপ্ত রাসেল মাহমুদ জিমি, পুস্কর খীসা মিমো ও নাইমউদ্দিন থাকছেন না প্রাথমিক দলে।
গত ২৫ মে হকি ফেডারেশনের সভায় প্রিমিয়ার লিগে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে আরও কয়েকজনের সঙ্গে মিমো ২ ম্যাচ, নাঈম ৩ ম্যাচ ও সর্বোচ্চ ১২ ম্যাচ নিষিদ্ধ হন দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় জিমি। সবশেষ এশিয়ান গেমসে খেলে আসা ফরহাদ আহমেদ শিতুল, নুরুজ্জামান, মিলন হোসেনও নেই বিবেচনায়।
সিঙ্গাপুরে সদ্য সমাপ্ত এশিয়ান হকি ফেডারেশন কাপ অনূর্ধ্ব-২১ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের প্রাধান্য দিয়েই গড়া হচ্ছে এবারের জাতীয় দল। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আবদুল্লাহ ছাড়া বাকি ১৭ জনকেই ডাকা হচ্ছে জাতীয় দলের ক্যাম্পে। সঙ্গে জাতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড় বিপ্লব কুজুর, আশরাফুল ইসলাম, রাব্বি হোসেন, আবেদ উদ্দীন, সোহানুর রহমান, মাহবুব হোসেন, রেজাউল বাবু আছেন সম্ভাব্য তালিকায়। কোচের দায়িত্বে থাকবেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পিটার গেরহার্ড।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, ২৫ জন খেলোয়াড় নিয়ে ৮ জুলাই থেকে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে আবাসিক ক্যাম্প শুরুর পরিকল্পনা তাঁদের। যুব দলকেও খেলার সুযোগ করে দিতে আরও আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্টে যাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মমিনুল হক বলেন, ‘অক্টোবর-নভেম্বরে অনূর্ধ্ব-২১ এশিয়া কাপ। সেই টুর্নামেন্টের জন্যই তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। যুব এশিয়া কাপের আগে আমরা যে কয়টা টুর্নামেন্ট খেলব, সব কটিতেই যুব দলকে প্রাধান্য দেব। আর তরুণদের প্রাধান্য দিলে সিনিয়ররা বাদ পড়বে স্বাভাবিক।’
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, ২১ বছর ধরে জাতীয় দলে খেলা জিমির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার কি তাহলে শেষ? ‘শেষ না’ বললেও জিমির ভবিষ্যৎ নিয়ে মমিনুল হক কিছু ‘যদি’, ‘কিন্তু’ রেখে দিলেন, ‘ওর ওপর ১২ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা আছে। এখন সে যদি তাঁর শাস্তির ব্যাপারে আপিল করে তাহলে কমিটি তা দেখবে। জাতীয় দলে না ডাকার ব্যাপারে সাসপেনশনের বিষয়গুলোও মাথায় রাখছি আমরা। এখন যদি সে ভালো পারফর্ম করে তাহলে ভবিষ্যতে ডাক পেলেও পেতে পারে।’
এবারের লিগে জিমির পারফরম্যান্স একেবারে খারাপ না হলেও ফেডারেশন সম্পাদকের মত ভিন্ন, ‘একজন ফরোয়ার্ড হিসেবে গোলের হিসাবে সে সেরা দশে নেই। ফরোয়ার্ডদের ক্ষেত্রে গোলটাই আমরা বিবেচনা করি।’ অথচ পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা। স্থানীয় ও বিদেশি খেলোয়াড় মিলিয়ে এবারের লিগে গোলদাতাদের তালিকায় জিমির অবস্থান ষষ্ঠ। মোহামেডানের জার্সিতে গোল করেছেন ১২টি, মিমোর গোলও ১২টি। স্থানীয়দের মধ্যে তাঁর চেয়ে বেশি গোল আছে ডিফেন্ডার ও পেনাল্টি কর্নার নেওয়া আশরাফুল ইসলাম (২০টি) ও সোহানুর রহমানের (৩৮টি)।
জিমি এখন খেলেন অনেকটা প্লেমেকারের ভূমিকায়। গোলের সংখ্যা দিয়ে তাঁর মূল্যায়নটা তাই যথার্থ হয় না। জিমি তাই এখানেই তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ দেখছেন না, ‘আমি কেন ক্যারিয়ারে শেষ দেখব! লিগে আমার পারফরম্যান্স কেমন ছিল, তা সবাই দেখেছে। এ ব্যাপারে কিছু বলার নেই।’