ফ্রান্স, প্যারিস, আইফেল টাওয়ার।
ফ্রান্স কিংবা প্যারিসের কথা উঠলেই মানসচোখে ভেসে ওঠে আইফেল টাওয়ারের ছবি। ফ্রান্স ও প্যারিসের প্রতীক হয়ে গেছে আইফেল টাওয়ার। এবার সেই ছবির দেশে, কবিতার দেশেই বসছে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিকের আসর। জুলাই-আগস্টের সেই অলিম্পিকে আইফেল টাওয়ার তো থাকবেই! এতটাই যে পদকজয়ীরা আইফেল টাওয়ারের কিছু অংশ নিয়েই ফিরবেন বাড়িতে।
কীভাবে? এবারের অলিম্পিকের পদকেই যে থাকবে আইফেল টাওয়ারের কিছু অংশ। পদকের সামনের অংশে যোগ করা ষড়ভুজ আকৃতির বাড়তি একটা অংশটা বানানো হবে আইফেল টাওয়ারের পুরোনো লোহালক্কড় ব্যবহার করে। আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে পদকের নকশা উন্মোচন অনুষ্ঠানে আয়োজকেরা জানিয়েছেন এ তথ্য।
প্যারিস অলিম্পিকে সোনা, রুপা ও ব্রোঞ্জ মিলিয়ে পদক দেওয়া হবে ৫০৮৪টি। তিন ধরনের পদকের নকশা একই রকম। পদকের নকশা করেছে বিশ্ববিখ্যাত ফরাসি জুয়েলারি হাউস শোমে। ১৭৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটিই ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বিয়ের গয়না বানিয়েছিল। আইফেল টাওয়ারের নির্মাতা গুস্তাভ আইফেলসহ ফ্রান্সের অভিজাত শ্রেণির পছন্দের জুয়েলারি হাউস ছিল শোমেই।
প্যারিস অলিম্পিক কমিটির প্রধান টনি এস্তাজেঁই টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে বলেন অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিকে পদকজয়ী সবাই আইফেল টাওয়ারের কিছু অংশ নিয়ে বাড়ি ফিরবেন, ‘সোনা, রুপা ও ব্রোঞ্জের মতো মূল্যবান ধাতুর সঙ্গে আমাদের সম্পদ আইফেল টাওয়ার থেকে আহরিত সবচেয়ে মূল্যবান ধাতু মেশানো থাকবে।’
আইফেল টাওয়ারের লোহা দিয়ে বানানো ষড়ভুজ অংশে অলিম্পিক মশাল, অলিম্পিক রিং ও প্যারিস ২০২৪ লেখা খোদিত আছে। এই অংশটার নিচে পদকের মূল অংশে বিচ্ছুরিত সূর্যের আলোর নকশা খোদাই করা। মূল অংশের সঙ্গে ছয়টি রিভেট (গজাল) দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে ষড়ভুজাকৃতির অংশটিকে। আর পদকের পেছনে অংশে বরাবরের মতো অলিম্পিকের আদি ভূমি এথেন্সের প্যানাথিনাইকোস স্টেডিয়ামের ওপর দিয়ে উড়ন্ত গ্রিক দেবী নাইকির ছবি আছে। ২০০৪ অলিম্পিক থেকে পেছনের অংশের এই নকশা চলে আসছে।
তবে অলিম্পিক পদকে নকশার পরিবর্তন নিয়মিত ঘটনাই। ১৯০০ সালের প্যারিস অলিম্পিকে তো পদক ছিল চতুর্ভুজ আকৃতির। তবে ১৯২৮ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত টানা ৯টি অলিম্পিকে একই নকশার পদক দেওয়া হয়েছে।
আইফেল টাওয়ারের ধাতব অংশ সংগ্রহ করা হয়েছে ১৮৮৯ সালে উদ্বোধন করা টাওয়ারের দেখভাল করা সংস্থার গুদাম থেকে। প্যারিস অলিম্পিকের ব্র্যান্ডিং ও অনুষ্ঠান বিভাগের পরিচালক থিয়েরি রেবু জানিয়েছেন সেই প্রক্রিয়ার কথা, ‘আমরা দেখলাম প্রতিবছরই সংস্কারের সময় আইফেল টাওয়ার থেকে পুরোনো কিছু লোহালক্কড় সরিয়ে নেওয়া হয়। আমরা সেসব ধাতুই ব্যবহার করেছি। ও জিনিসের তো কোনো অভাব নেই।’
আইফেল টাওয়ারের অংশসহ পদকে ব্যবহৃত সব ধরনের ধাতুই এসেছে রিসাইক্লিং থেকে। সব মিলিয়ে একেকটি পদকের ওজন হবে প্রায় আধা কিলোগ্রাম। টোকিওতে সর্বশেষ অলিম্পিকেও জাপানি আয়োজকেরা এমন ধাতু ব্যবহার করেছিলেন পদকে। যার বেশির ভাগ এসেছিল ব্যবহৃত মুঠোফোন ও ল্যাপটপ থেকে।
আইফেল টাওয়ারের ধাতুগুলো মরিচারোধী হবে কি না, এই প্রশ্ন উঠতেই পারে। সংবাদ সম্মেলনে তা উঠেছেও। প্যারিস গেমসের হেড অব ডিজাইন জোয়াকিম রনসি এমন কিছু হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন।
শুধু কি পদকে, প্যারিস অলিম্পিক জুড়েই থাকছে আইফেল টাওয়ারের সাড়ম্বর উপস্থিতি। ২৬ জুলাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের অ্যাথলেটরা নৌপথে সিন নদী দিয়ে এসে উঠবেন আইফেল টাওয়ারের বিপরীত প্রান্তে। অলিম্পিক চলার পুরো সময়টায় আইফেল টাওয়ারের মাথায় মশাল জ্বলবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।