জাতীয় দল ছেড়ে দিয়েছেন আর্চার রোমান সানা
জাতীয় দল ছেড়ে দিয়েছেন আর্চার রোমান সানা

‘কী পেলাম’—আক্ষেপই বড় হয়ে উঠেছে রোমান সানার কাছে

ক্ষোভ, হতাশায় জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন রোমান সানা। এরই মধ্যে বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনকে চিঠি দিয়ে তা জানিয়েও দিয়েছেন। ফেডারেশনের আগামী সভায় ২৮ বছর বয়সী এই আর্চারের চিঠি নিয়ে আলোচনা হবে।

তবে ফেডারেশন কর্মকর্তাদের কথায় ইঙ্গিত, রোমানকে জাতীয় দলে ফেরানোর ব্যাপারে ফেডারেশন খুব মরিয়া চেষ্টা করবে না। কারণ, ফেডারেশন মনে করছে, রোমানের সেরা সময়টা আর নেই। দলে আর তিনি ‘অটোমেটিক চয়েস’ নন। তাঁর ইভেন্টে হাকিম আহমেদ এখন আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে। তবে মৌখিকভাবে রোমানকে বোঝানো হয়েছে জাতীয় দল থেকে অবসর না নিতে। রোমান অবশ্য ১৪ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দাঁড়ি টানার ব্যাপারে নিজের অবস্থানেই থাকতে চান।

কেন জাতীয় দল ছেড়েছেন, এ নিয়ে জানতে চাইলে রোমান সানা আজ প্রথম আলোকে তাঁর নানা হতাশার কথা বলেন। যে টাকা তিনি মাসে আয় করেন, তা দিয়ে চলছে না বলে জানান। সম্প্রতি বিয়ে করেছেন সতীর্থ আর্চার দিয়া সিদ্দিকীকে। টঙ্গীতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। কিন্তু বাসাভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিটছে না তাঁর আয় দিয়ে। এ ছাড়া বাংলাদেশকে বিশ্ব আর্চারি থেকে পদক এনে দিলেও ‘কী পেলাম আমি’, সেই আক্ষেপও অনেক বড় হয়ে উঠেছে তাঁর কাছে।

রোমান সানা বলেন, ‘একটু চোটের সমস্যা আছে। তবে এখন আর আসলে খেলতে ইচ্ছা করে না, ভালো লাগে না।’ এরপরই তাঁর মুখে পাওয়া না পাওয়ার আক্ষেপ, ‘বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেজাল্টধারী অ্যাথলেট হচ্ছি আমি। অথচ না পাইলাম কোনো জায়গা থেকে ভালো একটা অফার, না পাইলাম কোনো কিছু।’

হ্যাঁ, ভুল ছিল। যা–ই হয়েছে, সব আমারই ভুল। কারোই ভুল নেই। যত যা–ই করছি, সব আমারই ভুল (দীর্ঘশ্বাস)।
রোমান সানা

প্রতি মাসে আগে আর্চাররা ফেডারেশন থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে পেতেন। সেটা গত বছর থেকে তিন হাজার টাকা করা হয়েছে। এর সঙ্গে বিবাহিত হিসেবে আরও দুই হাজার টাকা পান। বিদেশে খেলতে গেলে দিনে ১০-১৫ ডলার করে পান। এতে হয়তো এক সফরে এক-দেড় শ ডলার পান। অথচ বাসাভাড়া ১০-১৫ হাজার টাকা লাগে জানিয়ে রোমানের হতাশা, ‘সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় আমাকে। বাংলাদেশ আনসার থেকে পাই ২৫ হাজার টাকা।’ সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা আয় দিয়ে জীবন চলছে না বলে হতাশ রোমান।

রোমানই বাংলাদেশের প্রথম আর্চার, যিনি সরাসরি অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করেছিলেন। অলিম্পিকে সরাসরি কোয়ালিফাই করা বাংলাদেশের প্রথম ক্রীড়াবিদ গলফার সিদ্দিকুর রহমান

গত মাসে বাগদাদে এশিয়া কাপের টিমে জায়গা পাননি। তাঁর পারফরম্যান্স আগের মতো নেই। তবে নিজের পারফরম্যান্স সব জায়গাতেই ভালো বলছেন রোমান। ব্যক্তিজীবনে শৃঙ্খলা ভেঙেছেন। সতীর্থ এক আর্চারের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে নিষিদ্ধ হয়েছেন ২০২২ সালের নভেম্বরে। এখন কি মনে হয় ওটা ভুল ছিল? রোমান বলেন, ‘হ্যাঁ, ভুল ছিল। যা–ই হয়েছে, সব আমারই ভুল। কারোই ভুল নেই। যত যা–ই করছি, সব আমারই ভুল (দীর্ঘশ্বাস)। কারোই হাত ছিল না। এটা নিয়ে দুঃখ নেই, কষ্ট নেই। ’

আন্তর্জাতিক আর্চারি থেকে অবসরে যাওয়ায় তাঁর ওপর খেলার চাপ কমে আসবে এখন। সময়টা কাজে লাগাতে চান কিছু ব্যবসা করে। তাঁর বাবা-দাদারা মাছের ঘেরের ব্যবসা করেছেন। সেই ব্যবসাকে এগিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা আছে রোমানের।

* রোমান সানার পুরো সাক্ষাৎকার পড়ুন আগামীকাল প্রথম আলোর ছাপা ও অনলাইন সংস্করণে।