হ্যালো, কেমন আছেন? রাতে ঘুম হয়েছে?
‘রাতে অনেকটা সময় গল্প করেছি। ঘুম হয়েছে ৫–৬ ঘণ্টা। কোনো সমস্যা নেই। আমি ঠিকঠাক আছি।’
টেলিফোনের অন্য প্রান্তে ইমরানুর রহমানের গলা শান্ত শোনায়। ভেতরে ভেতরে উত্তেজনা থাকলেও কথাবার্তায় সেটার প্রকাশ নেই। এমনিতেই ইংল্যান্ডপ্রবাসী অ্যাথলেট কথা বলেন কম। বাংলা বলেন ভাঙা ভাঙা। অনেক সময় বোঝা যায় না, কী বলতে চাইছেন। ইংল্যান্ডের জল–হাওয়ায় বেড়ে উঠেছেন বলে ইংরেজিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বেশি।
ইমরানুরের এই সাফল্যে তাঁকে ঢাকায় এনে সংবর্ধনা দিতে চায় বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন। কখন ঢাকায় ফিরবেন, সেটা এখনো ঠিক হয়নি। কাজাখস্তান থেকেই তাঁর লন্ডন ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। এখন তাঁকে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা হচ্ছে। আসবেন সম্ভবত আগামীকাল।
আর স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন ট্র্যাকে দৌড়াতে। যে কাজটা গত রাতে তিনি করেছেন কাজাখস্তানে। এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকসে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিতে রীতিমতো আলোড়ন ফেলেছেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। এশিয়ার মঞ্চে অতীতে যেখানে বাংলাদেশ পদকের ধারেকাছেই যেতে পারেনি, সেখানে ইমরানুর জিতে ফেলেছেন সোনা। এমন অভাবনীয় সাফল্যের কয়েক ঘণ্টা পর আজ মুঠোফোনে ইমরানুরকে যখন ধরা হলো, তিনি তখন সকালের নাস্তার টেবিলে।
তাঁর পাশেই ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব। দুজন কথা বলছিলেন এশিয়ান মঞ্চে প্রথমবার পদক জয়ের মাহাত্ম্য নিয়ে। ইমরানুর স্বীকার করলেন, সোনা জয়ের কথা তিনিও ভাবেননি, ‘আমি আসলে ভালো কিছু করার আশা নিয়ে এসেছিলাম কাজাখস্তানে। তবে সোনা এসে যাবে, এতটা মাথায় আনিনি। এ সাফল্যটা আমাকে উজ্জীবিত করছে। আমি এখন মনে করছি, সামনে আরও ভালো করা সম্ভব। এরপর আমার প্রথম লক্ষ্য, দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশকে সোনা জেতানো। এশিয়ান গেমসেও ভালো করতে চাই। আর অলিম্পিকের মতো বড় প্রতিযোগিতায় ভালো করার লক্ষ্য তো আছেই।’
শুনতে শুনতেই মনে হয়, বাংলাদেশের একজন অ্যাথলেটের গলায় এশিয়ান গেমসে ভালো করার প্রত্যয় বাড়াবাড়ি কি না! আসলে তা নয়। ইমরানুর নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তাঁর পক্ষে যে অনেক দূর যাওয়া সম্ভব, সেটা এরই মধ্যে নিজের কীর্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
সেই কীর্তির কারণেই তাঁর ওপর আলো। ৬০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিতে তাৎক্ষণিকভাবে স্টেডিয়ামে অনেক অভিনন্দন পেয়েছেন। নিজেই বললেন, ‘এখানে কাতার, জাপান, থাইল্যান্ড হংকংসহ বিভিন্ন দেশের অ্যাথলেটরা আমাকে বাহবা দিয়েছে। ওরাও ভাবতে পারেনি, আমি প্রথম হয়ে যাব। আর প্রথম হয়ে দেশ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা পেয়েছি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে। এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর হয় না।’
আমি খুব উদ্বেলিত। যে পুরস্কারের জন্য এত পরিশ্রম, অবশেষে সেটা পেতে যাচ্ছি। আমি বাংলাদেশে এসেছিলাম দেশের জন্য কিছু করতে। দেশের পতাকা হাতে বিদেশে নিজেকে মেলে ধরতে। সেটা আমি পেরেছি।ইমরানুর রহমান, বাংলাদেশের দ্রুততম মানব
ইমরানুরের এই সাফল্যে তাঁকে ঢাকায় এনে সংবর্ধনা দিতে চায় বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন। কখন ঢাকায় ফিরবেন, সেটা এখনো ঠিক হয়নি। কাজাখস্তান থেকেই তাঁর লন্ডন ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। এখন তাঁকে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা হচ্ছে। আসবেন সম্ভবত আগামীকাল। তার আগে আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে ৬০ মিটার স্প্রিন্টের সোনার পদকটা তাঁর গলায় উঠবে।
ইমরানুর যা নিয়ে রোমাঞ্চিত, ‘আমি খুব উদ্বেলিত। যে পুরস্কারের জন্য এত পরিশ্রম, অবশেষে সেটা পেতে যাচ্ছি। আমি বাংলাদেশে এসেছিলাম দেশের জন্য কিছু করতে। দেশের পতাকা হাতে বিদেশে নিজেকে মেলে ধরতে। সেটা আমি পেরেছি। সবার দোয়া চাই, যাতে এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারি।’
দেশের নিস্তরঙ্গ অ্যাথলেটিকসে ইমরানুর যেন আশার প্রদীপ জ্বেলে দিয়েছেন। এই প্রদীপের আলোয় আলোকিত বাংলাদেশ। ইমরানুর তো অভিনন্দনে সিক্ত হবেনই।
* ইমরানুর রহমানের পুরো সাক্ষাৎকার পড়ুন আগামীকাল প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকা ও অনলাইনে।