নাহ, ‘ব্যাডেস্ট ম্যান অন দ্য প্ল্যানেট’ এর ভেতরকার সেই আগুন দেখা গেল না। ৫৮ বছর বয়সের ভার তাঁকে বাস্তবতাই স্মরণ করিয়ে দিল। বক্সিংয়ে তিনি হতে পারেন কিংবদন্তি, হতে পারেন এই খেলার সর্বকালের সেরাদের একজন—কিন্তু বয়স যে কাউকে এতটুকু ছাড় দেয় না সেটাই টের পেলেন মাইক টাইসন। টেক্সাসে ডালাস কাউবয়েজের মাঠ এটিঅ্যান্ডটি স্টেডিয়ামে আলোচিত বাউটে বয়সে ৩১ বছরের ছোট জ্যাক পলের কাছে হেরে গেছেন কিংবদন্তি।
২০০৫ সালে অবসর নেওয়ার পর এটাই ছিল টাইসনের প্রথম পেশাদার লড়াই। কিন্তু সেই ফেরার স্কোরবোর্ডে অদৃশ্য কালিতে লেখা হলো, একপেশে হার। ৮ রাউন্ডের এই বাউটে পলকে খুব কমই পাঞ্চ করতে পেরেছেন টাইসন। ইউটিউবার থেকে গত পাঁচ বছরের মধ্যে পেশাদার বক্সার বনে যাওয়া ২৭ বছর বয়সী পল বিচারকদের সর্বসম্মত রায়ে জিতেছেন। টাইসনের বিপক্ষে পলকে ৮০-৭২, ৭৯-৭৩ এবং ৭৯-৭৩ স্কোরে এগিয়ে রেখেছিলেন বিচারকেরা।
ম্যাচের চূড়ান্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পলকে তাক করে মোট ৯৭টি পাঞ্চ মেরে ১৮টি লাগাতে পেরেছেন টাইসন। পল ২৭৮টি পাঞ্চ ফেরত দিয়ে লাগাতে পেরেছেন ৭৮টি। ৮ম রাউন্ড শেষের বেল বাজার পর টাইসনকে সম্মান দেখিয়ে তাঁকে কুর্নিশও করেন ‘প্রবলেম চাইল্ড’ নামে খ্যাতি পাওয়া পল।
আজ ম্যাচের আগে অবশ্য অনেকেই অনেক কিছু ভেবে রেখেছিলেন। সাবেক হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন টাইসন ছিলেন দর্শকদের চোখে ফেবারিট। ব্যাপারটি আরও উসকে ওঠে গত বৃহস্পতিবার যখন ম্যাচের আগে শেষবারের মতো মুখোমুখি হন টাইসন-পল। সেখানে টাইসনের পা মাড়িয়ে দেওয়ায় পলের মুখে পাঞ্চ (ঘুষি) বসিয়ে দেন কিংবদন্তি। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, টাইসনের ভেতরের আগুন বুঝি বেরিয়ে আসছে! কিন্তু ম্যাচ শেষে বোঝা গেল, পলের মুখে সবচেয়ে জোরালো পাঞ্চটা ম্যাচের আগের সেই মুখোমুখিতেই হয়ে গেছে। আনুষ্ঠানিক ম্যাচ হয়েছে আদতে একপেশে লড়াই, যেখানে ৮ রাউন্ডেই ‘জ্যাব’ ও পাঞ্চ ছাড়াও আপারকাট মেরে টাইসনের বিপক্ষে এই ‘আন্তঃপ্রজন্মের’ লড়াই জিতলেন পল।
নিজের সোনালি সময়ে রিংয়ে টাইসনের মুভমেন্টের জুড়ি মেলা ভার ছিল। কিন্তু বয়সের ভারে পায়ের চকিত মুভমেন্ট আর নেই। ডান পায়ের হাঁটুতে ‘ব্রেস’ বেঁধে রাখায় গতি আরও কমেছে। রিফ্লেক্সও নেই বললেই চলে। পল এ সুযোগে অপেক্ষাকৃত বেশি গতিময় ছিলেন এবং বলতে গেলে প্রায় ইচ্ছেমতো খেলেই জিতেছেন। তৃতীয় রাউন্ডে পাঞ্চ করেছেন সবচেয়ে বেশি, তখনই কিছুটা বোঝা গিয়েছিল লড়াইটি একপেশে হয়ে উঠছে। তবে পল পূর্বে দেওয়া একটি কথা রাখতে পারেননি। লড়াইয়ের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, টাইসনকে নকআউট করবেন। সেটি হয়নি। রিংয়ে হাঁটুর ওপর ভর করে দাঁড়িয়েই হার মেনে নিয়েছেন কিংবদন্তি।
ম্যাচের চূড়ান্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পলকে তাক করে মোট ৯৭টি পাঞ্চ মেরে ১৮টি লাগাতে পেরেছেন টাইসন। পল ২৭৮টি পাঞ্চ ফেরত দিয়ে লাগাতে পেরেছেন ৭৮টি। ৮ম রাউন্ড শেষের বেল বাজার পর টাইসনকে সম্মান দেখিয়ে তাঁকে কুর্নিশও করেন ‘প্রবলেম চাইল্ড’ নামে খ্যাতি পাওয়া পল। জয়ের পর বলেছেন, ‘সবার আগে বলতে চাই মাইক টাইসন,এটা অতুলনীয় সম্মান। আসুন মাইককে সবাই অভিনন্দন জানাই। সে সর্বকালের সেরা। সে-ই গোট (গ্রেটেস্ট অব অলটাইম)। একজন কিংবদন্তি। আমার প্রেরণা। তাকে ছাড়া এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। তার সঙ্গে লড়াই করতে পারাটাই সম্মানের। সে অবশ্যই এই গ্রহের সবচেয়ে কঠিন ও ভয়ংকর মানুষ। যেমন কঠিন হবে ভেবেছিলাম, লড়াইটা তেমনই হয়েছে।’
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এর আগে জানিয়েছিল, টাইসন এই লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার জন্য ২ কোটি ডলার পেয়েছেন। গত আগস্টে পল জানিয়েছিলেন তিনি এই লড়াই থেকে আয় করবেন ৪ কোটি ডলার।
টাইসন কিন্তু একপেশে হারে হতাশ নন। নিজের লড়াই নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট, ‘আমি এখানে লড়তে এসেছিলাম। নিজের কাছে ছাড়া কারও কাছে কিছু প্রমাণের ছিল না। যতটুকু পেরেছি তাতে আমি সন্তুষ্ট।’ ডান পায়ের ‘ব্রেস’কে হারের অজুহাত বানাতে চান না জানিয়ে বলেছেন, ‘এটাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চাই না। সেটা করলে এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না।’ পলকে ভালো বক্সার বলে আবারও তাঁর মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি টাইসন। রিংয়ে এটাই তাঁর শেষ লড়াই কি না, সে প্রশ্নেও ইতিবাচক ছিলেন টাইসন, ‘আমার মনে হয় না।’
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এর আগে জানিয়েছিল, টাইসন এই লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার জন্য ২ কোটি ডলার পেয়েছেন। গত আগস্টে পল জানিয়েছিলেন তিনি এই লড়াই থেকে আয় করবেন ৪ কোটি ডলার।
লড়াইটি গত জুনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মায়ামি থেকে লস অ্যাঞ্জেলস যাওয়ার পথে বিমানে অসুস্থ হয়ে পড়েন টাইসন। রক্তবমি করেন। আলসার ধরা পড়ে তাঁর শরীরে। এ কারণে গত মে মাসে নির্ধারিত সেই লড়াইয়ের দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়া হয় এবং সেটা অনুষ্ঠিত হলো আজ।
ইউটিউবার হিসেবে যাত্রা শুরু করা পল অভিনয়ের জগতেও জড়িয়েছেন। বক্সিংয়ে নামেন ২০১৮ সালে, দুই বছর পর অভিষেক পেশাদার বক্সিংয়ে। ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো পেশাদার বক্সার টিম ফিউরির মুখোমুখি হয়ে হেরে যান।
টাইসন অন্যদিকে বক্সিংয়ের ইতিহাসেই সর্বকালের সেরাদের একজন। মাত্র ২০ বছর ৪ মাস ২২ দিন বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে জিতেছেন হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব। প্রথম হেভিওয়েট বক্সার হিসেবে একই সঙ্গে জিতেছেন ডব্লুবিএ, ডব্লুবিসি ও আইবিএ খেতাব। হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব হারানোর পর ফ্লয়েড প্যাটারসন, মোহাম্মদ আলী, টিম উইদারস্পুন, ইভান্ডার হলিফিল্ড ও জর্জ ফোরম্যানের পর ষষ্ঠ বক্সার হিসেবে তা পুনরুদ্ধারও করেছেন। রিংয়ে ভয় ধরিয়ে দেওয়া আচরণের জন্যও আলাদা খ্যাতি ও কুখ্যাতি দুটোই আছে টাইসনের। ‘দ্য রিং’ সাময়িকীর বিবেচনায় সর্বকালের সেরা ১০০ ‘পাঞ্চার’দের মধ্যে টাইসন ১৬তম।
কিন্তু এসবই এখন অতীত। ৫৮ বছর বয়সী টাইসনের মাঝে এখন সেসব খুঁজতে গেলে যে ভুল হবে, তার প্রমাণ তো পলের একপেশে জয়!