ঘরোয়া হকি মাঠে নেই। কবে খেলা, তারও ঠিক নেই। অবশ্য খেলা হলেই–বা কী! হকি মানেই মাঠে শৃঙ্খলাভঙ্গ, যা অনেক সময় সার্কাসে পরিণত হয়।
মাঠের বাইরে সংগঠকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। এক পক্ষ উত্তর দিকে হাঁটলে আরেক পক্ষ দক্ষিণে হাঁটে। ওদিকে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘ক্যাসিনো সাঈদ’ নামে পরিচিত ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক দেশ ছেড়েছেন।
হকির অবস্থা এখন ঝড়ে পড়া ডুবন্ত নৌকার মতো। তার মধ্যেও সুখবর হয়ে এসেছিল ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের ছোট্ট কমিটিতে সদস্য হিসেবে সাবেক হকি খেলোয়াড় মেজর (অব.) ইমরোজ আহমেদের জায়গা পাওয়া।
কিন্তু তা আর হলো কই! উল্টো তাঁকে নিয়েই এখন বিতর্ক। ইমরোজ আহমেদের পক্ষে–বিপক্ষে মাঠে নেমেছে হকিরই দুটি অংশ। এই পাল্টাপাল্টিতে হকির চিরন্তন বিভক্তিই বেরিয়ে এল আবার। যেন যেখানে হকি, সেখানেই বিরোধ! হকি তাহলে আর ঠিক হবে কবে?
সার্চ কমিটি থেকে ইমরোজ আহমেদের অপসারণের দাবিতে ৩ অক্টোবর হকি খেলোয়াড়-সংগঠকের ব্যানারে সাবেক খেলোয়াড় রাসেল খান বাপ্পি, শহিদুল্লাহ টিটু, জাহিদ হোসেন, মাকসুদ আলমসহ কয়েকজন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সামনে। ছিলেন কয়েকজন ক্লাব কর্মকর্তাও। ক্রীড়া উপদেষ্টা বরাবর তাঁরা একটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
এই পক্ষের অভিযোগ, ১ অক্টোবর হকি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সার্চ কমিটির মতবিনিয়ম অনুষ্ঠানে ইমরোজ তাঁর পছন্দমতো খেলোয়াড়-সংগঠকদের ডেকেছেন। সাবেক খেলোয়াড় মামুন উর রশিদ, রফিকুল ইসলাম কামালকে কেন ডাকা হলো, তা নিয়েই বেশি আপত্তি।
ইমরোজকে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ উল্লেখ করে এই অংশের অভিযোগ, তিনি মতবিনিময় সভাকে ‘আওয়ামীকরণ’ করেছেন। তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে ইমরোজ পাল্টা বলেছেন, একটি পক্ষ অহেতুক ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে।
সেই সুর ধরে সার্চ কমিটির এই সদস্যের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা অপবাদ ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে’ আজ সমাবেশ করেছে হকি অঙ্গনেরই আরেকটি অংশ। তাদের দাবি, ৩ অক্টোবর সমাবেশ করা অংশটি অ্যাডহক কমিটিতে জায়গা পাবে না আঁচ করতে পেরেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।
সমাবেশে ছিলেন সাবেক হকি খেলোয়াড় হোসেন ইমাম, মামুন উর রশিদ, রফিকুল ইসলাম কামাল, আবু জাফর, বায়েজিদ হায়দারসহ কয়েকজন। বর্তমান খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন পুষ্কর খীসা মিমো, নাইমুদ্দিন, হাসান জুবায়ের, আবেদউদ্দিনসহ কয়েকজন। তবে হকির রাজনীতির এই খেলায় বর্তমান খেলোয়াড়দের নামিয়ে দেওয়াটা খেলাটির সংকট বাড়াতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জাতীয় দলের খেলোয়াড় পুষ্কর খীসা এ নিয়ে লিখেছেন, ‘সার্চ কমিটির অন্যতম সদস্য মেজর (অব.) ইমরোজ আহমেদের নাম কতিপয় সাবেক হকি খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থের জন্য কলুষিত করার চেষ্টা করছেন। আমরা বাংলাদেশের সকল হকি খেলোয়াড়ের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশের পর তাঁরা সার্চ কমিটির আহ্বায়ক ও ক্রীড়া পরিষদ সচিবের কাছে পৃথকভাবে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
হকির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে রফিকুল ইসলাম কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘হকির শোধরানোর কোনো লক্ষণ দেখি না। আমরা নিজেরাই একটা চক্রের মধ্যে পড়ে আছি। একজন আরেকজনকে অপবাদ দিই। যে কারণে হকিতে ভালো কিছু হচ্ছে না।’
পথ হারানো একসময়ের জনপ্রিয় খেলাটাকে উন্নতির পথে আনতে হকি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ঐক্যটাই বেশি জরুরি। কিন্তু সেটা যেন সুদূরপরাহত। উল্টো বিভেদের দেয়ালই উঁচু হচ্ছে দিনে দিনে।