ফাইনালের আগে দুদলে টান টান উত্তেজনা। কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও ছাড় দিতে নারাজ। দেশের বিভিন্ন খেলার মতো নারী কাবাডিতেও বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির তীব্র লড়াই চলে আসছে। অনেকটা এককালের আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথের মতো। সেই দ্বৈরথ আজ আবারও দেখা গেল কাবাডির দেশের কাবাডির পীঠস্থান পল্টন কাবাডি স্টেডিয়ামে।
এক বছর পর হওয়া নারী কাবাডি লিগের ফাইনালে আজ দুদলের লড়াইয়ে আনসার শুরুতে ভালোই জবাব দিচ্ছিল চ্যাম্পিয়ন পুলিশকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পেরে ওঠেনি আর। প্রথমার্ধে পুলিশ এগিয়ে ছিল ১৬-৭ পয়েন্টে। দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান আরও বাড়িয়েছে দলটি। দুই অর্ধ মিলিয়ে ৩০ মিনিটের ফাইনালে পুলিশের জয়ের ব্যবধান ২৮-১৬। এমন একটি ফাইনাল ১২ পয়েন্টের ব্যবধানে জিততে পারা পুলিশের জন্য অনেক বড় প্রেরণার। এর পেছনে বড় অবদান রেখেছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে আনা তিন খেলোয়াড়। তাঁরাই মূলত পুলিশকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছেন মনিশা বারা, সুরেশ্রি পাকিরা ও সরস্বতী কুণ্ডু। তিনজনই হুগলির বাসিন্দা। দ্বিতীয়জন এবারের এশিয়ান গেমসে ভারতীয় দলের ক্যাম্পে ছিলেন। তবে জায়গা পাননি চূড়ান্ত দলে। ঢাকায় প্রথমবার এসেই মাতিয়ে দিয়েছেন তিনজন ভারতীয়। সুরেশ্রি জিতেছেন লিগের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। সেরা রেইডার হয়েছেন মনিশা বারা। সেরা ক্যাচার আনসারের স্মৃতি আক্তার। সব কটি ব্যক্তিগত পুরস্কারই ১০ হাজার টাকা।
মনিশা পুরস্কার নিয়ে বললেন, ‘এই প্রথম আমরা ভারতের বাইরে কোনো দলের ঘরোয়া কাবাডিতে খেলতে এসেছি। ভালো লাগছে অনেক। বিশেষ করে আজকের দিনটি।’ বাংলাদেশের মেয়েদের কেমন দেখলেন জানতে চাইলে সুরেশ্রি পাকিরার ঝটপট জবাব, ‘এখানকার মেয়েরা কাবাডিতে ভালো। কিন্তু আরও ভালো কোচিং দরকার, কোচ দরকার। ওদের আরও অনুশীলন করতে হবে। এখানে দেখলাম দুই তিনটি দল বাদে বাকি দলগুলো অনেক পিছিয়ে। সেই দলগুলোকে আরও অনুশীলন করে আসতে হবে। বেশি বেশি অনুশীলন না করলে এগোনো কঠিন।’
পশ্চিমবঙ্গের মেয়েরা যখন কথাগুলো বলছিল এই প্রতিবেদককে, পুলিশ কাবাডি দলে যেন নেমে এসেছে ঈদের আনন্দ। প্রবল প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করার সঙ্গে যেমন বাধভাঙ্গা আনন্দে মেতেছেন পুলিশের মেয়েরা, বাংলাদেশের নারী কাবাডির জন্য তা নতুন দিনের ইঙ্গিত। পুলিশের উচ্ছ্বাসের মধ্যেই কিছুটা মনভার ছিল আনসারের।
দলটির কোচ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক শাহনাজ পারভীন বললেন, ‘আসলে পশ্চিমবঙ্গের মেয়েরা খুব ভালো খেলেছে। আমরাও ভালো খেলেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেরে উঠলাম না। তবে আশা করি, আগামীতে আমরা ফিরে আসব প্রবলভাবে।’
ফাইনালে পেরে না উঠলেও গতকাল সেমিফাইনালে আনসার ঝলক দেখায় শেষ দিকে। তিন নেপালি খেলায়াড় নিয়ে গড়া মেঘনা কাবাডি ক্লাব সেমিফাইনালে হারিয়ে দিয়েছে তারা। শেষ দেড় মিনিটে আনসার জয় ছিনিয়ে নেয় ২৭-২৫ পয়েন্টে। সে তুলনায় পুলিশ কাবাডি ক্লাব সহজে সেমিতে হারায় উত্তরবঙ্গ কাবাডি ক্লাবকে। ২০২১ সালে সর্বশেষ নারী কাবাডি লিগে পুলিশই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবার তারা শিরোপা ধরে রাখল। গত বছর ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা টুয়েলভ।
আগের চেয়ে এখন কাবাডিতে অর্থের প্রবাহ বেড়েছে। ১১ দলের এবারের লিগ পৃষ্ঠপোষণা করেছে সিটি গ্রুপ। স্টেডিয়ামে বসেছে ডিজিটাল স্কোরবোর্ড। সঙ্গে ফাইনাল উপলক্ষ ব্যান্ড পার্টি। সেই পার্টির ঢোলবাদ্যের তালে কান পাতাই দায় হয়ে পড়ল। প্রধান অতিথি আসতে সময় লাগায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর শুরু হয়েছিল ফাইনাল। আর ফাইনালে আগে ও বিরতিতে হলো পুলিশ সাংস্কৃতিক ক্লাবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে কাবাডি জন্য দারুণ এক সন্ধ্যা কাটল আজ।