ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের জন্য গঠিত সার্চ কমিটি ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেছে। আজ প্রথম দিনে কমিটি বসেছে হকি, বিলিয়ার্ড অ্যান্ড স্নুকার ও দাবা ফেডারেশনের সঙ্গে। টানা তিন দিনে নয়টি ফেডারেশনের সঙ্গে মতবিনিময় করবে কমিটি। আগামীকাল অ্যাথলেটিকস, স্কোয়াশ ও কাবাডি এবং বৃহস্পতিবার টেনিস, ফেন্সিং ও ব্রিজ ফেডারেশনের সঙ্গে মতবিনিময়।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ভবনে আয়োজিত মতবিনিময়ে এনএসসি থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয় সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনের দুজন করে কর্মকর্তা, একজন কোচ বা বিশেষজ্ঞ, চারজন করে বর্তমান জাতীয় দলের খেলোয়াড়, চারজন করে সাবেক কর্মকর্তা ও সাবেক চারজন খেলোয়াড়কে। সাবেকদের কমপক্ষে প্রিমিয়ার ডিভিশনে খেলার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়া দুজন করে কোচ/রেফারি/আম্পায়ার ও প্রবীণ তিন সংগঠককে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
হকির মতবিনিময়ে সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে ডাক পাওয়া মামুন উর রশিদ জানিয়েছেন, হকির উন্নয়নে সম্ভাব্য পদক্ষেপ কী হতে পারে, সে নিয়েই মূলত পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রে কেমন সংস্কার দরকার, নির্বাচনে কারা কাউন্সিলর হবেন, কাউন্সিলর হতে হলে কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হবে, সেই পরামর্শও চাওয়া হয়েছে।
মতবিনিময় শেষে মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বলেছি, ঘরোয়া হকি অনেক কমে গেছে। খেলাটা বাড়াতে হবে। সেটা গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং ফেডারেশনকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব বিষয় গঠনতন্ত্রে থাকলে জবাবদিহি আসতে পারে। তা ছাড়া বলেছি, বাংলাদেশের হকি এখন অনেকটাই জাতীয় দলভিত্তিক হয়ে গেছে। জাতীয় দলের বাইরের খেলোয়াড়দের খেলার মধ্যে ব্যস্ত রাখতে হবে। সব খেলোয়াড়ের জন্য কার্যক্রম থাকতে হবে। এগুলো গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সেই মতামত দিয়েছি।’
মামুন যোগ করেন, ‘হকি ফেডারেশনের সাব–কমিটিগুলো সাধারণ সম্পাদক নিজের হাতে রাখেন, নিজের ইচ্ছেমতো চালান। এই ধারা চলতে পারে না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাব–কমিটিগুলো সক্রিয় করতে হবে, তাহলে সাধারণ সম্পাদকের ক্ষমতা কমবে।’
হকির বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো জেলা চার বছরের মধ্যে দুবার যুব বা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ খেললেই ফেডারেশনের নির্বাচনে কাউন্সিলরশিপ পায়।
এই জায়গায় পরিবর্তনের দাবি তুলে মামুন উর রশিদের কথা, ‘সংশ্লিষ্ট জেলা লিগ আয়োজন করলে তবেই তাদের কাউন্সিলরশিপ দেওয়া যেতে পারে, এমন প্রস্তাব এসেছে। সাবেক জাতীয় খেলোয়াড়দের জন্য কাউন্সিলরশিপের কোটা থাকা উচিত বলেও মত দিয়েছি আমরা।’
রাসেল মাহমুদ জিমিসহ বর্তমান জাতীয় হকি দলের পাঁচজন খেলোয়াড় ছিলেন অনুষ্ঠানে। জিমি হকি খেলোয়াড়দের মাসিক বেতনের আওতায় আনার দাবি করেছেন। কেন এ দাবি, পরে তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘বাহিনীতে যারা খেলে, তারা মাসিক বেতন পায়। কিন্তু বাহিনীর বাইরের খেলোয়াড়েরা কিছুই পায় না। তাই হকি খেলোয়াড়দের বেতনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছি।’
যেসব সরকারি সংস্থা ঘরোয়া হকিতে খেলছে, সেসব সংস্থায় খেলোয়াড়ের চাকরি দেওয়ারও দাবি করেছেন জিমি। সম্প্রতি হকি ফেডারেশন প্রিমিয়ার লিগের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে খেলোয়াড়-কোচ-কর্মকর্তা মিলিয়ে ৪১ জনকে নানা মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে। শাস্তি পেয়েছেন জিমিও। তবে এই শাস্তি তিনি মানেন না, ‘ন্যায়বিচারে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছি।’ ফেডারেশনের কমিটিতে দুর্নীতিবাজেরা যেন আর আসতে না পারেন, সেই পথ বন্ধ করারও দাবি তুলেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক।
দাবা ফেডারেশনের সঙ্গে মতবিনিময়ে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুই গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার ও এনামুল হোসেন রাজীব। তাঁদের দাবি, ফেডারেশনের নির্বাচনে যেন দাবাড়ুরা কাউন্সিলর হতে পারেন। দাবার কমিটিতে সাবেকদের অন্তর্ভুক্ত করার নানা প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
সার্চ কমিটির আজকের সভায় ছিলেন না আহ্বায়ক জোবায়দুর রহমান। ছিলেন বাকি তিন সদস্য। ওদিকে সার্চ কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া মহিউদ্দিন আহমেদের জায়গায় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুনীরুল ইসলামকে।