আজকের রাত পোহালেই শুরু হয়ে যাবে খুশির ঈদ। নতুন কাপড় কেনা, ঈদের নামাজ পড়া, পরিবার আর আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তুতি—সব মিলিয়ে চারদিকে এখন ঈদের খুশির আমেজ। রাসেল মাহমুদ জিমির মনেও সেই আনন্দের বাতাবরণ আছে। তবে বাংলাদেশের এই হকি খেলোয়াড়ের মন আচ্ছন্ন আরেকটি ভাবনায়ও, তা শুধুই মোহামেডান!
প্রিমিয়ার হকি লিগ দাঁড়িয়ে মাহেন্দ্রক্ষণের সামনে। শিরোপা নির্ধারণী সুপার সিক্সের খেলা চলছে। প্রথম পর্ব আর সুপার সিক্সের প্রথম দুই ম্যাচ মিলিয়ে ৩২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে রাসেল মাহমুদের মোহামেডান। বাকি তিনটি ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ—আবাহনী, মেরিনার্স আর ঊষা; এই তিন প্রতিপক্ষই শিরোপা–লড়াইয়ে সাদাকালোদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী।
কঠিন এই তিন ম্যাচের অন্তত দুটিতে জিততে হবে মোহামেডানকে। তবেই নিশ্চিত হবে শিরোপা। এমন একটা সময় পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিন্তু ঈদের আনন্দটা যেন পুরোমাত্রায় উপভোগ করতে পারছেন না দেশের হকির অন্যতম সেরা এই তারকা।
ছুটি পেয়েছেন মাত্র দুই দিন—ঈদ আর ঈদের পরদিন। ঈদের আগের দিন, মানে আজও অনুশীলন করেছেন। সেই অনুশীলনে নামার আগে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘আসলে লিগ এমন একটা পর্যায়ে দাঁড়িয়ে, সেটা ছাড়া আর অন্য কিছু নিয়ে ভাবার উপায় নেই। মোহামেডানের পরের তিনটি ম্যাচই কঠিন। দুটি ম্যাচে অন্তত জিততেই হবে লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে। ঈদের আনন্দটা তাই লিগ জিতেই উপভোগ করব।’
পুরান ঢাকার বাসিন্দা রাসেল মাহমুদ এবার রোজার মাসে পরিবারকে সময়ই দিতে পারেননি। স্ত্রী ও কন্যা নিয়ে একান্নবর্তী পরিবারে বাস তাঁর। মা আর ভাইয়ের সংসার আর তাঁর ছোট্ট সংসার মিলেমিশে একাকার, ‘রমজান মাসে পরিবারকে সময়ই দিতে পারিনি লিগ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে। এবার ঈদে ওদেরও কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে। আমার স্ত্রী মেনে নিয়েছে ব্যাপারটা। লিগ জয়ের হাতছানি সামনে। মনোযোগে কোনো ঘাটতি যেন না থাকে। ঈদের দিন ছুটি থাকবে। সেদিন পরিবারের সঙ্গেই কাটাব। ঘোরাঘুরি হয়তো খুব বেশি হবে না। আত্মীয়স্বজন বাড়িতে আসবে। এলাকায় বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা হবে, এবারের ঈদ এভাবেই কাটবে।’
রাসেল মাহমুদের বাবা প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক সোনা মিয়া এ দেশের হকির কিংবদন্তি খেলোয়াড়। ছিলেন জাতীয় দলের কোচও। ২০০৩ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এশিয়া কাপ হকিতে রাসেল মাহমুদ যেবার প্রথম জাতীয় দলের সুযোগ পান, বাবা আবদুর রাজ্জাক ছিলেন তখন জাতীয় দলের কোচ। বাবার হাত ধরে জাতীয় দলে ঢুকেছিলেন। এরপর কেটে গেছে ২১ বছর। রাসেল মাহমুদ এখনো খেলে চলেছেন।
জাতীয় দলে এখনো তিনি অপরিহার্য। এরই মধ্যে খেলে ফেলেছেন ৬টি এশিয়া কাপ। এ দেশের ক্রীড়াঙ্গনে রাসেল মাহমুদ যেন একাগ্রতা আর অধ্যবসায়ের দারুণ এক গল্প।
ঈদ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পুরোনো দিনগুলোর কথা মনে পড়ল রাসেল মাহমুদের, ‘আগের ঈদগুলো অন্য রকম ছিল।
আমাদের পুরান ঢাকায় ঈদের আমেজই অন্য রকম। ঈদের আমেজ শুরু হয়ে যেত প্রথম রমজান থেকেই। আমরা সাধারণত চাঁদরাতে বাজারহাট করি। সবাই মিলে একসঙ্গে বের হতাম বাজার করতে। সেই দিনগুলো এখন আর ফেরাতে পারি না। তা ছাড়া বাবা চলে যাওয়ার পর ঈদের আনন্দ আর আগের মতো নেই। তা–ও নিজেদের মতো যতটুকু সম্ভব, ঈদ উপভোগের চেষ্টা করি।’
এবারের প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাসেল মাহমুদ। এখন পর্যন্ত একমাত্র অপরাজিত দল সাদাকালোরাই, ‘আমরা হয়তো দল হিসেবে খুব শক্তিশালী ছিলাম না। কিন্তু আমাদের টিমওয়ার্ক ভালো। বিশেষ করে মালয়েশিয়ান তিনজন দারুণভাবে মিশে গেছে দলের সঙ্গে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেশিরাও পারফর্ম করেছে। এখন শেষ ভালোটা হলেই হয়ে যায়।’
‘শেষ ভালো’টা যে হকি লিগের শিরোপা, সেটি না বললেও চলছে। সেটি পেতে একটা ঈদের আনন্দে ছাড় দেওয়া রাসেল মাহমুদের কাছে কোনো ব্যাপার নয়!