ধর্ষণের দায়ে এক বছর জেল খেটেছেন। এমন একজনকে কিনা প্যারিস অলিম্পিকে খেলার সুযোগ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)। আজ নেদারল্যান্ডস বিচ ভলিবল দলের হয়ে অলিম্পিকে অভিষেকও হলো সাজাপ্রাপ্ত ধর্ষক স্টিভেন ফন ডি ফেলডের। তবে প্রথমবার অলিম্পিকে খেলার অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি তাঁর। মাঠের লড়াইয়ে ইতালির কাছে ২-১ সেটে হেরেছে ডি ফেলডের দল নেদারল্যান্ডস, গ্যালারি থেকে তাঁর উদ্দেশে এসেছে একের পর এক দুয়ো।
আইফেল টাওয়ার স্টেডিয়ামে আজ ছেলেদের বিচ ভলিবলে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে প্রতিনিধিত্ব করেন ডি ফেলডে ও ম্যাথু ইমার্স। ইতালির হয়ে খেলেন আদ্রিয়ান কারামবুলা ও আলেক্স রানঘিয়েরি। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ইতালির চেয়ে ১৫ ধাপ এগিয়ে থাকা নেদারল্যান্ডসকে এ ম্যাচেও ফেবারিট মনে করা হচ্ছিল। তবে ডি ফেলডে ও ইমার্সকে চমক দিয়েছেন কারামবুলা-রানঘিয়েরি জুটি।
ডি ফেলডে-ইমার্স মাঠে নামার মুহূর্তে প্রত্যাশিতভাবেই নেদারল্যান্ডস সমর্থকেরা করতালি দিয়েছেন। তবে বাকি যেসব দর্শক খেলা দেখতে গিয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই ডি ফেলডেকে উদ্দেশ করে দুয়ো দিয়েছেন। অবশ্য ম্যাচ শেষে ডি ফেলডের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন প্রতিপক্ষ কারামবুলা ও রানঘিয়েরি। সতীর্থ ইমার্স তাঁর প্রশংসাও করেছেন।
২০১৬ সালে ১২ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ডি ফেলডের বিরুদ্ধে। ফেসবুকে পরিচয়ের পর আমস্টারডাম থেকে ইংল্যান্ডে গিয়ে মিলটন কিনেস অঞ্চলে ওই ঘটনায় জড়িয়েছিলেন তিনি। আদালত তাঁকে চার বছর কারাদণ্ড দিলেও এক বছর পর কারামুক্ত হয়ে বিচ ভলিবলে স্টেফেন। ২৯ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়কে গত জুনে ডাচদের বিচ ভলিবলের অলিম্পিক স্কোয়াডে ডাকা হয়।
প্যারিস অলিম্পিকে ডি ফেলডে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়ায় কদিন ধরেই বেশ সমালোচনা চলছে। একজন ধর্ষক কীভাবে অলিম্পিকে খেলতে পারে—এই প্রশ্ন ছুড়ে আইওসিকে ব্যাপারটি তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছিল। নারীসুরক্ষা গোষ্ঠী তাঁকে অলিম্পিক দলে রাখার বিরোধিতা করেছিল। আজ অলিম্পিকে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগপর্যন্ত তাঁকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ৯০ হাজার মানুষ অনলাইনে পিটিশন দিয়েছেন। এত কিছুর পরও তাঁর মাঠে নামা আটকানো যায়নি।
ডি ফেলডেকে অলিম্পিকে খেলতে দেওয়ায় অনেকেই হতাশ। এক দর্শক বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমি বিস্মিত হয়েছি। তাঁকে খেলার অনুমতি দেওয়া উচিত হয়নি।’ ব্রিটেনের এক সমর্থক বলেছেন, ‘তারা (নেদারল্যান্ডস বিচ ভলিবল দল) বিতর্ক এড়াতে অন্য কাউকে দলে নিতে পারত। তিনি যদি ব্রিটিশও কেউ হতেন, আমি তাঁকে আমাদের দলে দেখতে চাইতাম না।’ আরেক সমর্থক বলেছেন, ‘তাঁকে খেলার সুযোগ করে দেওয়া অলিম্পিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে না।’
ডি ফেলডে অবশ্য স্বদেশি সমর্থকদের পাশে পেয়েছেন। এক ডাচ সমর্থক বিবিসিকে বলেছেন, ‘তিনি (তাঁর অপরাধের) সাজা পেয়েছেন এবং সেটা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। অন্য অনেকের মতো তিনিও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন।’
ডি ফেলডের সতীর্থ ইমার্স আজ ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘সেই ব্যাপারটি (ধর্ষণ ও কারাদণ্ড) নিয়ে আমি একবার ওর সঙ্গে কথা করেছি। অলিম্পিকে জায়গা করে নিতে গত তিন বছর নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গেছি। এত বড় মঞ্চে এসে আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করা। আমার চোখে স্টিভেন (ডি ফেলডে) খুব ভালো মানুষ।’
বিবিসি জানিয়েছে, প্যারিসে পা রাখার পর থেকেই ডে ফেলডেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি দলের সঙ্গে অলিম্পিক ভিলেজে থাকছেন না এবং ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনেও তাঁকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
অলিম্পিকে খেলতে যাওয়ার আগেই অবশ্য ডাচ সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ওই ঘটনা (ধর্ষণ) আমি এড়িয়ে যেতে পারব না। এর ফল আমাকেই ভোগ করতে হবে। সেটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।’
অলিম্পিক বিচ ভলিবলে ডি ফেলডে-ইমার্স জুটির পরের ম্যাচ আগামী বুধবার চিলির বিপক্ষে।