সুপার সিক্সে আগের ম্যাচেই মেরিনার ইয়াংসের বিপক্ষে হেরে প্রিমিয়ার লিগে প্রথম হারের স্বাদ পেয়েছিল মোহামেডান। লিগ শিরোপার লড়াইয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তাই দেখা দিয়েছিল সাদা–কালোদের। আজ ঊষা ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে হেরে গেলে শিরোপা–দৌড়ে টিকে থাকাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ত।
কিন্তু তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ঊষাকে ৬–৫ গোলে হারিয়ে লিগের লড়াইয়ে ভালোভাবেই টিকে রইল মোহামেডান। ১৯ এপ্রিল শেষ ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেডকে হারালেই গ্রিন ডেল্টা প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগ জিতবে মোহামেডান।
খেলাটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হয়েছে, সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাঠ ত্যাগের ঘটনাও ঘটেছে। বিকেলের বৃষ্টিতে খেলা কিছুটা দেরিতেও শুরু হয়েছিল। নানা প্রতিবন্ধকতায় ৬০ মিনিটের খেলা গড়িয়েছে দুই ঘণ্টায়। ম্যাচের একপর্যায়ে মোহামেডান ৫–১ গোলে এগিয়ে ছিল। এগিয়ে থাকার কারণেই হয়তো গা–ছাড়া একটা ভাব চলে এসেছিল দলটির। এই সুযোগই কাজে লাগিয়েছে ঊষা।
দারুণভাবে খেলায় ফিরে একপর্যায়ে স্কোরলাইন ৫–৪ করে ফেলেছিল তারা। নাটকীয় পরিসমাপ্তির অপেক্ষায় যখন সবাই, তখন মোহামেডান এগিয়ে যায় ৬–৪ গোলে। এরপর ঊষা খেলা শেষ হওয়ার ৮ মিনিট বাকি থাকতে ব্যবধান ৬–৫ করে ফেললে সবাই নড়েচড়েই বসেছিলেন। খেলার শেষ দিকে মোহামেডানের তিন খেলোয়াড়কে হলুদ কার্ড দিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হয়। তবে সংখ্যাধিক্যের সুবিধাটা ঊষা নিতে পারেনি। চাপ সামলে মোহামেডান ঊষাকে প্রতিরোধ করে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে।
প্রথম মিনিটেই মোহামেডানকে পেনাল্টি কর্নারে গোল করে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন মালয়েশিয়ান খেলোয়াড় ফয়সাল বিন সারি। এরপর তৃতীয় মিনিটে স্কোরলাইন ২–০ করেন আল নাহিয়ান। এই গোল নিয়ে বিতর্কে ঊষার খেলোয়াড়েরা মাঠ ত্যাগ করেন। খেলা বেশ খানিকক্ষণ বন্ধ থাকে। পরে তাঁরা মাঠে ফেরেন। ১৩ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে ফয়সাল বিন সারি গোল করে মোহামেডানকে ৩–০ গোলে এগিয়ে দেন। পরের মিনিটেই ঊষাকে গোল উপহার দেন ভারতীয় খেলোয়াড় ইশরাত ইকতিদার। প্রথম কোয়ার্টারে মোহামেডান এগিয়ে ছিল ৩–১ গোলে।
দ্বিতীয় কোয়ার্টারের প্রথম মিনিটেই ফয়সাল বিন সারি হ্যাটট্রিক করেন। মোহামেডান এগিয়ে যায় ৪–১ গোলে। ৩২ মিনিটে স্কোরলাইন ৫–১ করেন আরেক মালয়েশিয়ান ফিতফি বিন সারি। ৩৪ মিনিটে ঊষা গোলের ব্যবধান কমায় (৫–২)। গোল করেন সেই ইশরাত ইকতিদার। এর পরের সময়টা পুরোপুরি ঊষার ৪৪ ও ৪৭ মিনিটে ঊষা স্কোরলাইন ৫–৪ করে ফেলে। গোল দুটি করেন যথাক্রমে ভারতীয় মোহাম্মদ শরীক ও রাজু আহমেদ তপু। মোহামেডানের ষষ্ঠ গোলটি দারুণ। অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমি প্রায় একক প্রচেষ্টায় এঁকেবেঁকে বল নিয়ে ঊষার সীমানায় ঢুকে বল ক্রস করলে তা থেকে গোল করেন দ্বীন ইসলাম ইমন। এই গোল নিয়েও অসন্তুষ্টি ছিল ঊষার।
রিভিউয়ের কারণে খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। ৪৯ মিনিটে আরশাদ ঊষার পক্ষে পঞ্চম গোলটি করেন। খেলা শেষ হওয়ার ৫ মিনিট আগে একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে মাঠে উত্তেজনা দেখা দেয়। মোহামেডানের তিন খেলোয়াড়কে হলুদ কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হয়। তাঁদের একজন খোদ অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ।
লিগে এখন ত্রিমুখী লড়াই। শিরোপা জেতার সুযোগ আছে আবাহনী, মেরিনার্স দুই দলেরই। মোহামেডানের সংগ্রহ এখন ১৪ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে আবাহনীর সংগ্রহ ৩৪ পয়েন্ট। তাদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলা মেরিনার্সের সংগ্রহ ৩১ পয়েন্ট। অর্থাৎ এই তিন দলের যে কারও ঘরেই যেতে পারে শিরোপা। মেরিনার্সের পরের দুটি ম্যাচ আবার মোটামুটি সহজ প্রতিপক্ষ অ্যাজাক্স ও বাংলাদেশ পুলিশের বিপক্ষে।