স্বাধীনতার আগে খেলেছেন পাকিস্তান হকি দলে। এরপর দুই মেয়াদে ছিলেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশের হকির সমস্যা ও সংকট কাছ থেকে দেখা সাবেক খেলোয়াড় ও সংগঠক আবদুস সাদেক ওল্ড ডিওএইচএসে নিজের বাসায় বসে কথা বলেছেন হকির বর্তমান অবস্থা নিয়ে—
২০১৯ সালে আপনি হকি ফেডারেশন থেকে বিদায় নেন। দূর থেকে এখন কেমন দেখছেন দেশের হকি?
আবদুস সাদেক: গত মাসে ওমানে এশিয়ান হকি ফেডারেশন কাপ অনূর্ধ্ব–২১ টুর্নামেন্টে আমাদের ছেলেরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এটা খুবই ভালো লেগেছে। সম্প্রতি আমাদের জাতীয় দলও ভালো করেছে। কিন্তু এর বাইরে বাকি সবই হতাশার। সব লিগ অনিয়মিত। এত সুন্দর একটা স্টেডিয়াম আছে, যেখানে ৩৬৫ দিনে অন্তত ৬০০টা ম্যাচ হওয়া উচিত। নভেম্বরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে যা কটা ম্যাচ হয়েছে, এর বাইরে ঘরোয়া খেলা নেই।
কেন এ অবস্থা?
আবদুস সাদেক: ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটি গঠিত হয় মূলত ঢাকার ক্লাব প্রতিনিধিদের নিয়ে। সমস্যা হলো আমাদের দেশে ক্লাবগুলো খেলতে চায় না। ফেডারেশনের ভেতর দলাদলি প্রবল। আমার সময়ে এটা দেখেছি, এখনো তা কমেনি। দেশে প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হয়েছে, আমার ছেলে ইশতিয়াক সাদেক এটার ব্যবস্থাপনায় ছিল। সে ভেতরে ঢুকে দেখেছে আসলে কী অবস্থা। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদককে কেউ নাকি মানেই না!
প্রথম বিভাগের দলবদল হয়েছে গত নভেম্বরের শেষ দিকে। অথচ এখনো খেলা শুরু হয়নি। ফেডারেশন আর্থিক অনুদান না দিলে ক্লাব খেলতে রাজি নয়। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
আবদুস সাদেক: এটা নজিরবিহীন ঘটনা। ফেডারেশন ক্লাবকে টাকা দেবে বলে থাকলে অবিলম্বে দেওয়া উচিত। আর্থিক সংকট থাকলেও প্রথম বিভাগটা চালু করা কঠিন কিছু নয়। ২৪ লাখ টাকার ব্যাপার তো, আমি দুই কোটি টাকার ওপর স্থায়ী আমানত রেখে এসেছি। দরকারে সেটা ভাঙতে হবে।
আপনার কী মনে হয়, হকির উন্নয়নে বাধা কোনটা? নেতৃত্ব আর আর্থিক সমস্যা নাকি সদিচ্ছার অভাব?
আবদুস সাদেক: নেতৃত্বের সমস্যা পুরোনো। আর্থিক সমস্যাও আছে। তারপরও খেলা মাঠে রাখা চাই। সেটার জন্য বেশি টাকা তো লাগে না। ঘরোয়া হকির জন্য বছরে ৫০ লাখ টাকাও খরচ হতে দেখি না। আমি বলব, ফেডারেশনের অবস্থাপন্ন লোকেরা আপাতত নিজেরা ধার দিয়ে হলেও প্রথম বিভাগ মাঠে নামাক। মুশকিল হলো ফেডারেশনে তেমন লোক দেখি না।
ঢাকার বাইরেও তো হকি হারিয়ে যেতে বসেছে...
আবদুস সাদেক: এটাও অনেক বড় হতাশার। আমরা খেলাটার চর্চা নিয়মিত রাখতে পারলাম না। অথচ দেখুন, কাবাডির মতো ফেডারেশন আইজিপির নেতৃত্বে কত আয়োজন করছে!
এ দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে আপনার পরামর্শ কী?
আবদুস সাদেক: দলাদলি ভুলতে হবে, ফেডারেশন সভাপতিকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। লিগ শুরুর জন্য সভাপতিকে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে হবে। কোনো ক্লাব না খেললে তাদের বাদ দিয়েই লিগ হবে। আর একটা কথা, বিমানবাহিনীর প্রধানেরা হকি ফেডারেশনের সভাপতি হচ্ছেন। এর ভালো–মন্দ দুটি দিকই আছে।
ভালো হলো একটা শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর প্রধান তিনি। কিন্তু তাঁর অগ্রাধিকার তো বিমানবাহিনী। তা ছাড়া তাঁরা আসেন এক–দেড়–দুই বা বড়জোর তিন বছরের জন্য। সবকিছু বুঝতে বুঝতেই প্রথম ছয় মাস চলে যায়। সভাপতিকে লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব দিতে হবে। বাহিনী থেকে অবসর নিলেও তাঁকেই হকি ফেডারেশনের সভাপতি পদে রাখলে অসুবিধা কি? বাইরে থেকেও কাউকে নেওয়া যায়, যিনি লম্বা সময় থাকবেন এবং হকির উন্নয়নে কাজ করবেন। অনায়াসে দু–চার কোটি টাকার স্পনসর আনার ক্ষমতা থাকবে তাঁর। আমার মনে হয়, দ্বিতীয়টাই তুলনামূলক ভালো সমাধান।
এত দলাদলি আর ফেডারেশনের ব্যর্থতার পরও হকির আন্তর্জাতিক ফল ভালো। সেটা কীভাবে সম্ভব হচ্ছে?
আবদুস সাদেক: মূল কারণ, বিকেএসপি খেলোয়াড় সরবরাহ করছে। জাতীয় দলের ৯৫ ভাগ খেলোয়াড়ই বিকেএসপির। গত মাসে ওমানে অনূর্ধ্ব–২১ চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলের ১৩ জনই বিকেএসপির। তবে জিমি, চয়নদের মানের খেলোয়াড় আসছে না। সেটার জন্য লিগ, টুর্নামেন্ট নিয়মিত আয়োজনের বিকল্প নেই।