১৯৮৪ সাল থেকে অলিম্পিক গেমসে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত গেছেন ৪৯ জন ক্রীড়াবিদ। এবার প্যারিস অলিম্পিকে যাচ্ছেন ৫ জন। সব মিলিয়ে ৩০ বছরে মাত্র ৫৪ জন। সংখ্যাটা নগণ্যই। বাংলাদেশ যখনই অলিম্পিকে যায়, বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যমে বলা হয় বিশ্বের নবম জনবহুল দেশ বাংলাদেশ, যারা এখন পর্যন্ত অলিম্পিকে কোনো পদক পায়নি। সেই নেতিবাচক সমালোচনা বন্ধ করতে বাংলাদেশ কি অলিম্পিকে পদক জিততে দীর্ঘ মেয়াদে কোনো পরিকল্পনা করতে পারে না?
বহুদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্নটি উঠেছিল আজ প্যারিস অলিম্পিক উপলক্ষে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে। বিওএ ভবনে হওয়া সংবাদ সম্মেলনে বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজার উত্তরে সুনির্দিষ্ট কোনো পথরেখা নেই। তবে আছে যথারীতি ভবিষ্যতের আশাবাদ, ‘আমাদের একটা লক্ষ্য থাকতে হবে। যেটা নিয়ে মাননীয় যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। যেমন স্মার্ট বাংলাদেশ একটা কর্মসূচি, তেমনটি ৫-১০ বছর মেয়াদে পরিকল্পনা নিতে হবে। আলাদা একটা বাজেট করে খেলোয়াড় নির্বাচন করে অনুশীলন করাতে হবে। ওই পর্যায়ে না আসতে পারলে রাতারাতি পদক পাওয়া সম্ভব নয়।’
লিখিত বক্তব্যে অনুমিতভাবেই বিওএ মহাসচিব প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশ দলের পদকের কোনো আশবাদ রাখেননি। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা থাকবে খেলোয়াড়েরা সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং দেশের জন্য সম্মানজনক ফল বয়ে আনবেন। ‘সম্মানজনক ফল’ বলতে কী বোঝাচ্ছেন, জানতে চাইলে সৈয়দ শাহেদ রেজার কথা, ‘প্রথমেই যেন আউট না হই। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেন যেতে পারি।’
তাঁর পাশে বসে বিওএর সহসভাপতি ও মিডিয়া কমিটির প্রধান শেখ বশির আহমেদ আর্চার সাগর ইসলামের ওপর বাড়তি প্রত্যাশার কথা বলেন, ‘আশা করছি, সাগর আটজনে চলে যাবে। আটে এলে যেকোনো কিছু হতে পারে। তার স্কোর ভালো।’ অন্যদিকে প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের শেফ দ্য মিশন ইন্তেখাবুল হামিদের আশা, ‘আমাদের লক্ষ্য ফাইনালে যাওয়া। ফাইনালে উঠতে পারলে যেকোনো ফল হতে পারে।’
অলিম্পিকে বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত সরাসরি যোগ্যতা অর্জন করেছেন মাত্র তিনজন খেলোয়াড়। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে গলফার সিদ্দিকুর রহমান, ২০২১ টোকিও অলিম্পিকে আর্চার রোমান সানা এবং এবার প্যারিসে আর্চার সাগর ইসলাম। সংখ্যাটা বাড়াতে বাংলাদেশের পরিকল্পনা কী, সংবাদ সম্মেলনে এসেছে এমন প্রশ্নও। বিওএ মহাসচিব বলেন, ‘এই ব্যাপারটা নিয়ে মাননীয় যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলছেন, অলিম্পিকের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন। মন্ত্রী আন্তরিক, আমরা একসঙ্গে কাজ করব।’
সঙ্গে মনে করিয়ে দেন শুধু স্বপ্ন দেখলেই হয় না, টাকাও দরকার, এখানে আর্থিক ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ দল যাচ্ছে অলিম্পিকে, কিন্তু সরকার থেকে এখনো কোনো টাকা পাইনি। টাকা এলে সমন্বয় করব।’
ওদিকে বিওএর সহসভাপতি শেখ বশির আহমেদ তাকিয়ে আছেন ২০২৮ অলিম্পিকের দিকে, ‘বিওএ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। মন্ত্রীর কাছ থেকে সমর্থন পাচ্ছি। এবার কী ফল পাব, জানি না। তবে ২০২৮ সালে অনেকেই সরাসরি কোয়ালিফাই করবে বলে আশা করছি। আমরা ২০২৮-কে লক্ষ্য করে এগোচ্ছি। আর্চারি, শুটিংকে বিশেষ প্রাধান্য দিচ্ছি। এ ব্যাপারে ফেডারেশনগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ঘোষণা এসেছে, ২৬ জুলাই প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের পতাকা থাকবে আর্চার সাগরের হাতে। সংবাদ সম্মেলনে শেষে মঞ্চে এসে সাগর ও বাংলাদেশ আর্চারি দলের কোচ মার্টিন ফ্রেডেরিখ কথা বলেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। অলিম্পিকে প্রথমবার অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েই দেশের পতাকা বহন করবেন। এটা ভেবে সাগর বেশ উচ্ছ্বসিত, ‘অলিম্পিকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করা অত্যন্ত গৌরবের। বিওএ আমাকে এ সুযোগ দেওয়ায় ধন্যবাদ।’
অলিম্পিকে খেলার সময় যেমন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন সাগর, তেমন একটা পরিবেশ তৈরি করে তাঁকে টঙ্গীতে অনুশীলন করাচ্ছেন কোচ ফ্রেডেরিখ। সেটি কেমন, সাগর দিলেন সেই বর্ণনাও, ‘কোচ যতটুকু পেরেছেন, অলিম্পিকের আবহে একটা স্টেজ তৈরি করে অলিম্পিকে একটা আবহ দেওয়ার চেষ্টা করছেন আমাকে। খেলার সময় ক্যামেরা, সাউন্ড অনেক কিছু থাকবে...যেভাবে আমাকে ডিস্টার্ব করা যায়, সেভাবে চেষ্টা করছেন তিনি। চেষ্টা করব ভালো কিছু যেন করতে পারি।’
সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে সম্প্রতি প্রয়াত ক্রীড়া সংগঠক কুতুবউদ্দিন আকসির, গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান ও শুটার আতিকুর রহমানের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।