সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের ১৪ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। সুজাউদ্দিন দাবা অঙ্গনে পরিচিত মুখ। ছিলেন দাবা ফেডারেশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিবও তিনি। কাজ করেছেন যুব ও ক্রীড়াসচিব হিসেবেও।
কিন্তু ২০০৫ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া সুজাউদ্দিনকে দাবা ফেডারেশনের সভাপতি পদে মানতে পারছেন না উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ। আগে দায়িত্বে থাকার সময় সুজাউদ্দিন খেলোয়াড়দের মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছিলেন বলে অভিযোগ তাঁর। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ১৭ বছর পর সভাপতির দায়িত্বে ফেরা সুজাউদ্দিন।
কেন সুজাউদ্দিনকে সভাপতি চান না? এ বিষয়ে নিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অতীতে তো তাঁকে আমরা দেখেছি। তিনি খেলোয়াড়দের মধ্যে বিভেদ তৈরি করেন। এ কারণেই আমরা সার্চ কমিটিকে বলেছিলাম সুজা ভাইকে সভাপতির পদ না দিতে। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেননি।’
আমাদের বলতে নিয়াজ বুঝিয়েছেন তিনি আর রানী হামিদের কথা। সার্চ কমিটির দুজন সদস্য রানী হামিদের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে নিয়াজও ছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে নিয়াজ বলেন, ‘সুজা ভাই আগে থেকে বিতর্কিত। ফলে তাঁকে আমরা চাইনি। আর কি লোক ছিল না, যিনি স্পনসর আনতে পারবেন!’
দাবার কমিটি দেখে যারপরনাই হতাশ ও ক্ষুব্ধ নিয়াজ। এ জন্য তিনি সুজাউদ্দিনের দিকে আঙুল তুলেছেন, ‘আসলে সুজা ভাই যে কমিটি দিয়েছে, সেটাই পাস হয়েছে। তাহলে আর সংস্কারটা কোথায় হলো? যদি তা–ই হয়, তাহলে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে কেন সার্চ কমিটি। এটা খুবই বিরক্তিকর। যা হয়েছে, আমি বলব প্রহসন।’
২০০২ থেকে ২০০৭ সময়ে সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সুজাউদ্দিনকে না চাওয়ার পেছনে আরেকটি যুক্তিও দিয়েছেন নিয়াজ, ‘দাবায় কখনো অবসরপ্রাপ্ত কেউ সভাপতি ছিলেন না। সবাই বিভিন্ন পদে ছিলেন। সুজা ভাই ৭৭ বছর বয়সে দাবার জন্য কী করতে পারবেন, জানি না।’
সুজাউদ্দিনের কমিটির অন্যদের নিয়েও প্রশ্ন নিয়াজের, ‘আসলে তিনি (সুজাউদ্দিন) যাঁদের চেয়েছেন, তাঁদেরই নেওয়া হয়েছে কমাটিতে। আমরা জানি কে কার লোক।’ আবার কমিটির সবাইকে চেনেন না বলেও ক্ষোভ তাঁর, ‘কমিটিতে কিছু লোক আছে যাদের চিনিই না, দেখিওনি। লাজনিন ইসলাম নামে একজনকে যুগ্ম সম্পাদক করেছে। কে সে? নামও শুনিনি? ট্রেজারার কে? সে কী দাবার সাথে জড়িত?’ সাধারণ সম্পাদক তৈয়বুর রহমান সুমন সরকারের যুগ্ম সচিব ও ফিদে মাস্টার। এ নিয়ে নিয়াজের কথা, ‘সে কতটা কাজ করতে পারবে জানি না। সরকারি কাজেই তার ব্যস্ততা অনেক।’ এই কমিটিকে ভালো বলব কীভাবে প্রশ্ন তুলে নিয়াজ বলেন, ‘সুজা ভাইয়ের কথায় সব হলে সার্চ কমিটির সভা, এটা-ওটা, আলোচনা, এসবের কী দরকার ছিল।’
নিয়াজের অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে দাবার নতুন সভাপতি বলেন, ‘নিয়াজের কথার কোনো পাল্টা দেব না। ও অনেক বড় খেলোয়াড়। তবে একটা কথা বলতে পারি নিয়াজ ছাড়া অন্য কেউ যদি বলে আমি বিভেদ তৈরি করেছিলাম আগে, তাহলে সভাপতি পদে থাকব না।’
যোগ্য কারও হাতে দায়িত্ব দিয়ে চলে যেতে চান জানিয়ে সুজাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভালো সংগঠক হতে হলে চারটি গুণ লাগে। খেলাটার ওপর জ্ঞান, খেলার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি, সততা ও সাংগঠনিক দক্ষতা। এই চারটির একটি কম হলেও সফল হওয়া যায় না। আমি আশি করি দাবা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে। এখন জেলায় খেলা নেই। জিএম টুর্নামেন্ট নেই। আগে স্কুল টুর্নামেন্ট খেলে অনেক ছেলেমেয়ে আসত। এখন সেটাও নেই। তরুণদের তুলে আনতে হবে। এটাই আমাদের আজকের অঙ্গীকার।’
সুজাউদ্দিনের পছন্দেই কমিটির অন্য সদস্যদের নেওয়া হয়েছে অভিযোগের বিষয়ে তাঁর জবাব, ‘দাবার কমিটির ব্যাপারে সার্চ কমিটি অনেকের কাছ থেকে মতামত নিয়েছে। আমার লোকজনই এই কমিটিতে, কথাটা ঠিক নয়। কমিটির ৫ জনকে আমি চিনিই না।’