ঘরোয়া হকিতে এবার দলগঠনই কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল মেরিনার ইয়াংসের। শেষ পর্যন্ত আর্থিক সংকট সামাল দেন কর্মকর্তারা। তবে তারকাসমৃদ্ধ দল তারা গড়তে পারেনি, যেটি গড়েছে আবাহনী। কাগজে–কলমের শক্তিতে এগিয়ে থাকা সেই আবাহনীকে হারিয়েই ক্লাব কাপ হকির শিরোপা নিজেদের কাছে রেখে দিল মেরিনার্স।
মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে আজ ক্লাব কাপ হকির ফাইনালে বোঝাই যায়নি কাগজের শক্তিতে আবাহনী এ মৌসুমের সেরা দল। আর এই দলে খেলছেন জাতীয় দলের ১০-১২ জন খেলোয়াড়; বরং মেরিনার্স নিজেদের চিনিয়েছে আবার। ফাইনালে আবাহনীকে তারা হারিয়ে দিয়েছে ২-০ গোলে।
শুরুর কয়েক মিনিট চড়াও হয়ে খেলছিল আবাহনী। সুযোগ এসেছিল গোল করারও। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ান মেরিনার্সের গোলকিপার। পাল্টা আক্রমণে এসেছে মেরিনার্সও। মিনিট কয়েক তারা চাপে রাখে আবাহনীকে। তবে প্রথম কোয়ার্টার গোলের দেখা পায়নি কোনো দলই।
দ্বিতীয় কোয়ার্টারের পঞ্চম মিনিটে এগিয়ে যায় মেরিনার্স। ভারতীয় খেলোয়াড় দীপক কোনাকুনি জায়গা থেকে দারুণ এক হিটে এগিয়ে নেন তাঁর দলকে। আবাহনী চেষ্টা করছিল ম্যাচে ফিরে আসতে। কিন্তু ম্যাচের গতিটা তখন পাল্টে যায় অন্যদিকে। বারবার দুই দলের রিভিউর আবেদনে খেলা স্থগিত হয়। রিভিউতে আবাহনী একটি পেনাল্টি কর্নার পেলেও তা মানতে চাইছিল না মেরিনার্স। এ নিয়ে মাঠে তৈরি হয় অচলাবস্থা।
খেলা আবার শুরু করতে তৎপরতা শুরু করেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক, হকি লিগ কমিটির সম্পাদক খাজা তাহের লতিফ। তাঁরা দুজনই মাঠে ঢোকেন। একটা ফাইনালের মাঝখানে মাঠে ঢুকে ফেডারেশন কর্তাদের দৌড়ঝাঁপ অবশ্য নতুন কিছু না, ঘরোয়া হকিতে অতীতে বহুবার এমন হয়েছে।
যাহোক, ১৫ মিনিট পর খেলা আবার শুরু হয়েছে। এবং দ্বিতীয় কোয়ার্টার থেকেছে ১-০–তেই। প্রথম ৩০ মিনিটের খেলা শেষ হয়েছে পাক্কা এক ঘণ্টায়।
তৃতীয় কোয়ার্টারে ম্যাচে ফিরে আসতে আবাহনী আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। পরপর আদায় করে নেয় পেনাল্টি কর্নার। কিন্তু গ্রুপ পর্বের আবাহনীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, যারা ঊষাকে ৬-২ ও মোহামেডানকে ৩-২ গোলে হারিয়েছিল। ভারতের জাতীয় দলের সাবেক ফরোয়ার্ড যুবরাজ বাল্মীকি চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু তাঁকে রুখতে ঊষার রক্ষণে প্রস্তুত ছিলেন আরেক ভারতীয় প্রদীপ মোর, যিনি ভারতের অলিম্পিক দলে ছিলেন।
রক্ষণ সামলে তৃতীয় কোয়ার্টারের শেষ মিনিটে মেরিনার্স ২-০ করেছে। পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে গোল করেন অধিনায়ক ফজলে হোসেন। এই গোলের পর মেরিনার্সের সমর্থকদের আনন্দ-উল্লাস বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তারা অনবরত ভুভুজেলা বাজাতে থাকেন। অন্যদিকে চুপসে যান আবাহনীর সমর্থকেরা।
ক্লাব কাপে এটি ছিল মেরিনার্সের তৃতীয় ফাইনাল। টানা দ্বিতীয় এবং দুটি ফাইনালেই আবাহনীকে তারা হারাল। ২০২১ সালে সর্বশেষ আসরে হারায় ৩-০ গোলে।
আবাহনীর এটি ছিল দশম ফাইনাল। ঐতিহ্য ও শক্তিতে গিয়ে থাকা আকাশি-নীলেরা আসল দিনে জ্বলে উঠতে পারেনি। আবারও হতাশাই সঙ্গী হলো তাদের।