বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান জিমন্যাস্ট সাইক সিজার ও বক্সার জিনাত ফেরদৌস
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান জিমন্যাস্ট সাইক সিজার ও বক্সার জিনাত ফেরদৌস

ঢাকায় নবীন জিমন্যাস্টদের উজ্জীবিত করলেন যুক্তরাষ্ট্রের অলিম্পিক ট্রেনিং সেন্টারের কোচ সাইক সিজার

‘২০১১ সালে ঢাকায় দক্ষিণ-মধ্য এশিয়ার জিমন্যাস্টিকসে আমি সোনা জিতেছিলাম বাংলাদেশের হয়ে। সেই অনুভূতি কখনো ভোলার নয়। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিলাম। যে পতাকা ওড়াতে আমি বাংলাদেশে এসেছিলাম।’

ঢাকায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জিমনেসিয়ামে বসে আজ দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে কথাগুলো বেশ গর্ব নিয়ে বলছিলেন সাইক সিজার। সাইকের পরিচয়টা অনেকেই হয়তো জানেন। তারপরও আবার বলে নেওয়া যাক। সাইক সিজার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান, বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে। খেলেছেন ২০১৪ ইনচন এশিয়ান গেমস, একই বছর গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমস এবং দুটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে।

সেই সাইক কদিন আগে পারিবারিক কাজে বাবা সাবেক ফুটবলার কাজী সিজারের সঙ্গে ঢাকা আসেন। এই সুযোগে বাংলাদেশের তরুণ জিমন্যাস্টদের উজ্জীবিত করতে সাইককে নিয়ে আজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জিমনেসিয়ামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন।

বাংলাদেশের জিমন্যাস্টদের সঙ্গে সাইক সিজার

গত ৯-১২ জুন সিঙ্গাপুরে ১৬তম এশিয়ান জুনিয়র আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকসে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের ৬ জন জিমন্যাস্টকে ঘিরেই মূলত অনুষ্ঠানটা। এই অনুষ্ঠানে ছয় খেলোয়াড়কে আর্থিক পুরস্কার দিয়েছে বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন। পুরস্কার তুলে দেন সাইক সিজার, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা ও জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সভাপতি শেখ বশির আহমেদ।

এশিয়ান জুনিয়র আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকসে চতুর্থ হওয়া বিকেএসপির ছাত্র রাফিল আহমেদ পেয়েছেন দেড় লাখ টাকা। বাকি ৫ জন জিমন্যাস্টকে দেওয়া হয়েছে ৩০ হাজার টাকা করে। বাংলাদেশ দলের কোরীয় কোচ পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। তাঁর দুই সহকারী কোচ ২৫ হাজার টাকা করে।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে বাংলাদেশের জিমন্যাস্টরা সাইককে কিছু পারফরম্যান্স দেখান। তা দেখে মুগ্ধ সাইক বলেন, এ দেশের ছেলেদের মধ্যে অনেক সম্ভাবনা আছে। ভালোভাবে এগিয়ে নিতে পারলে ওরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক ভালো করবে। অনেকবার বাংলাদেশে আসার কথা স্মরণ করে ৩২ বছর বয়সী সাইক যোগ করেন, ‘জিমন্যাস্টিকস যুক্তরাষ্ট্রে অনেক জনপ্রিয়, সে তুলনায় বাংলাদেশে কম। আমি এই অডিটরিয়ামে এসেছি, অনুশীলন করেছি। ২০১১ সালে সোনা জিতেছি। সেটা ছিল বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকসে প্রথম আন্তর্জাতিক সোনা।’

নিজের জীবনের নানা অভিজ্ঞতাও এই ফাঁকে তুলে ধরেন সাইক। উজ্জীবিত করেন তরুণদের। বাংলাদেশের হয়ে খেলা যে কত বড় গর্বের সেটাও বলতে ভোলেননি। তরুণেরা কীভাবে ভালো করতে পারেন, সে নিয়ে দিয়েছেন কিছু পরামর্শও। সাইক বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষ জিমন্যাস্টিকস দলের অন্যতম কোচ। ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অলিম্পিক ট্রেনিং সেন্টারের প্রধান কোচ। নিজের কোচিং অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকসে বাড়াতে চান সহায়তার হাত,‌ ‘বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক ফেডারেশন যখনই চাইবে আমি সহায়তা করব, যেটা যেভাবেই হোক।’

বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক ফেডারেশনের সভাপতি শেখ বশির আহমেদও চান সাইকের সহায়তা। তিনি বলেছেন, ‘সাইককে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম চেনে। তাকে দেখে যদি নতুনেরা উদ্বুদ্ধ হয়, সেটা ভেবেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। সাইকের নিজেরও ইচ্ছা ছিল এমন একটি অনুষ্ঠানে থাকার। মূলত তার সৌজন্যেই আমরা অনুষ্ঠানটা করেছি। আমরা চাই সে আমাদের পাশে থাকুক। সাইকও বলেছে বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিক উন্নয়নে সহায়তা করবে।’

অনুষ্ঠানে ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বক্সার জিনাত ফেরদৌস। তিনিও যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছেন। বাংলাদেশের হয়ে আগামী এশিয়ান গেমসে খেলবেন বলে জানান জিনাত।

আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আজকের জিমন্যাস্টিকসের অনুষ্ঠানে আসেন জিনাত

আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আজকের জিমন্যাস্টিকসের অনুষ্ঠানে আসেন জিনাত। ২৯ বছর বয়সী জিনাতের জন্ম নিউইয়র্কে। তাঁর বাবার বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জে। মায়ের বাড়ি পাবনায়। ১৯৮৭ সালে এই দম্পতি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা জিনাতের। খেলেন ৫০ কেজি ওজন শ্রেণিতে। তিনি বলেন, ‘আমি নিউইয়র্ক অঞ্চলে আমার ওজন শ্রেণিতে চ্যাম্পিয়ন।’

বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগটা কীভাবে হলো, সেই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘সঠিক সময়ে সঠিক লোকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। মামুন আঙ্কেল (বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সভাপতি শেখ বশির আহমেদ) এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেছেন আমাকে। আশা করছি, আগামী এশিয়ান গেমসে আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলব। এটিই হবে আমার প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা।’

এ নিয়ে ষষ্ঠবার এলেন বাংলাদেশে। তবে খেলার উদ্দেশ্যে এবারই প্রথম আসা। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে প্রবাসী অ্যাথলেট অবশ্য এবারই প্রথম নয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাইক সিজার এসেছেন, ফুটবলে ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়া, ফিনল্যান্ডের তারিক কাজী, লন্ডনপ্রবাসী সাঁতারু জুনাইনা আহমেদ, অ্যাথলেট ইমরানুর রহমান খেলছেন বাংলাদেশের জার্সিতে। তাতে এবার যুক্ত হয়েছেন জিনাত ফেরদৌস।