প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের পতাকা এভাবে তুলে ধরতে চান দিয়া সিদ্দিকী
প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের পতাকা এভাবে তুলে ধরতে চান দিয়া সিদ্দিকী

অলিম্পিক কমিটির বৃত্তি পেয়ে দিয়া তাকিয়ে প্যারিসে

সর্বশেষ ২০২১ টোকিও অলিম্পিকের আর্চারিতে মেয়েদের রিকার্ভ এককের চূড়ান্ত পর্বে খেলেছিলেন দিয়া সিদ্দিকী। রোমান সানার সঙ্গে জুটি গড়ে সেবার খেলেছিলেন মিশ্র দ্বৈত ইভেন্টেও। আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিকেও খেলার স্বপ্ন দেখছেন দেশসেরা নারী আর্চার।

টোকিও অলিম্পিকে দিয়া সুযোগ পেয়েছিলেন বিশ্ব আর্চারি সংস্থার আমন্ত্রণমূলক বিশেষ কোটা প্লেসে। কিন্তু ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে খেলতে চান সরাসরি। দিয়ার স্বপ্নের পরিধি বাড়িয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) থেকে পাওয়া বৃত্তি।

প্যারিস অলিম্পিকে প্রশিক্ষণের জন্য আইওসি গত বছর বাংলাদেশের পাঁচ খেলোয়াড়কে বৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই পাঁচজনের মধ্যে আর্চারি থেকে বৃত্তি পাচ্ছেন দিয়া সিদ্দিকী, আবদুর রহমান ও হাকিম আহমেদ। বাকি দুজন শুটার—রাব্বি হাসান ও নাফিসা তাবাসসুম।

গত বছর বৃত্তির জন্য মনোনীত হলেও আজই প্রথম বৃত্তির টাকা হাতে পেয়েছেন দিয়া। তাঁর মতো বাকি দুজন আর্চার আবদুর রহমান ও হাকিম আহমেদও বৃত্তির টাকা হাতে পেয়েছেন। আইওসি দিয়াকে বৃত্তি হিসেবে দিচ্ছে মাসিক ১২৫০ মার্কিন ডলার (প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা)।

এ বছর নিজেকে টপকে যেতে চান দিয়া

তবে আইওসির নিয়ম অনুসারে পুরো অর্থ তিনি হাতে পাবেন না। জাতীয় দলে থাকাকালীন তাঁর আবাসন, প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ার ভ্রমণ খরচ, পড়াশোনা, চিকিৎসা, খেলাধুলা, ফিজিও খরচ রেখে বাকি টাকা দেওয়া হবে। এক বছরের সেসব খরচ বাদ দিয়ে আজ টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে দিয়ার হাতে ২ লাখ ১৪ হাজার ৭০০ টাকার চেক তুলে দেন আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ।

টঙ্গীর স্টেডিয়ামে বর্তমানে জাতীয় দলের ক্যাম্পে আছেন দিয়া। সেখানেই দুই বেলা নিয়মিত অনুশীলন করছেন। মূলত প্যারিস অলিম্পিকে চোখ রেখেই অনুশীলন চলছে দিয়ার, ‘টোকিওতে আমি আমন্ত্রণমূলক কোটা প্লেসে খেলেছি। এবার প্যারিস অলিম্পিকে সরাসরি খেলার স্বপ্ন আমার।’

২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জেতেন রোমান সানা। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে আর্চারিতে প্রথম পদক জেতার সুবাদে টোকিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলার সুযোগ পান রোমান। কিন্তু দিয়াকে সরাসরি প্যারিসে খেলতে হলে বাছাইপর্বের সিঁড়ি পার হতে হবে। এ জন্য অবশ্যই তাঁকে খেলতে হবে এশিয়া কাপ, বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ ও বিশ্বকাপে। এ বছর রয়েছে আর্চারির ব্যস্ত সূচি। মার্চে চীনা তাইপেতে এশিয়া কাপের স্টেজ ওয়ান, এপ্রিলে উজবেকিস্তানে স্টেজ টু ও জুনে সিঙ্গাপুরে স্টেজ থ্রি। এ ছাড়া আগস্টে প্যারিসে বিশ্বকাপ, জুলাইয়ে বার্লিনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হবে। নভেম্বরে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ হবে ব্যাংককে। এই প্রতিযোগিতাগুলোর যেকোনো একটি থেকে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার টিকিট পেতে পারেন দিয়া।

গত ডিসেম্বরে ছুটিতে গেছেন জাতীয় দলের জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ। ২২ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশে ফিরবেন। ফ্রেডরিখ ফিরলেই জোরেশোরে অলিম্পিকের জন্য অনুশীলন শুরু হবে আর্চারদের।

তুরস্কে ইসলামি সলিডারিটি গেমসে পদক হাতে দিয়া

বৃত্তির টাকা হাতে পেয়ে নতুন উদ্যোমে অনুশীলন শুরু করতে চান দিয়া, ‘বৃত্তির এই টাকা আমার জন্য অনেক অনুপ্রেরণার। নিজেকে সব সময় বলি, ভালো কিছু করতে হবে। নিজের সেরাটা দিয়েই ভালো খেলার চেষ্টা করব। গত বছরের চেয়েও যেন পারফরম্যান্স আরও ভালো হয় সেই লক্ষ্য থাকবে আমার। সব থেকে বড় কথা, সরাসরি অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করার জন্য যা কিছু করার সেটা করব।’

দিয়া ছাড়াও মেয়েদের রিকার্ভ ইভেন্টের জাতীয় দলে আছেন বিউটি রায়, শ্রাবণী আক্তার, ফাহমিদা সুলতানা ও নতুন মুখ জ্যোতি রানী বর্মণ। এদের নিয়ে এককের পাশাপাশি দলগত ইভেন্টেও অলিম্পিকে খেলার আশা দিয়ার, ‘আমাদের আত্মবিশ্বাস আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আমরা পাঁচ আর্চারের সবাই পরিশ্রম করছি। আমার যে স্বপ্ন সেটা পূরণ করতে হলে সবাইকেই এক সঙ্গে কঠোর অনুশীলন করতে হবে। আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য আমার পক্ষ থেকে সতীর্থদের যতটুকু সাহায্য করার, এর চেয়েও বেশি করব।’