রাসেল মাহমুদ জিমি এখন এশিয়ান গেমসের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত
রাসেল মাহমুদ জিমি এখন এশিয়ান গেমসের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত

‘জিমিকে চাইলেই বাদ দেওয়া যায় না’

কোথায় গিয়ে থামবেন?

সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্নটি হরহামেশাই শুনতে হয় রাসেল মাহমুদ জিমিকে। শুনতে হলো আজ আরেকবার। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চীনের হাংজু শহরে হতে যাওয়া এশিয়ান গেমসের জন্য জাতীয় দলের প্রস্তুতির প্রথম দিনের অনুশীলন তখন প্রায় শেষ। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে পড়ন্ত বিকেল। প্রায় অন্ধকার নেমে এসেছে। এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নে জিমি বললেন, ‘যত দিন সম্ভব খেলে যাব, যদি দল আমাকে চায়।’

এশিয়ান গেমসগামী ১৮ জনের দলে থাকবেন কি না, জিমি সেটা ছেড়ে দিয়েছেন কোচদের ওপর। তবে নিজেকে সব সময় তৈরি রাখেন জানিয়ে বলতে ভুললেন না, ‘নিজেকে তৈরি না রাখলে তো ২১ বছর ধরে খেলা সম্ভব নয়। আমার সমকালীন খেলোয়াড়েরা বেশ আগেই বিদায় নিয়েছে। তবে যত দিন পারফরম্যান্স থাকবে, আমি খেলে যাব। অবসরের চিন্তা মাথায় আনছি না।’

হকি স্টেডিয়ামে প্রস্তুতির ফাঁকে রাসেল মাহমুদ জিমি

জিমি নিজের প্রথম এশিয়ান গেমস খেলেছেন ২০০৬ সালে, দোহায়। ২০১০ গুয়াংজু এশিয়ান গেমস খেলার পর শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ২০১৪ বুসান এশিয়ান গেমসে যেতে পারেননি। ২০১৮ সালে জাকার্তা এশিয়ান গেমস খেলে এখন আশায় আছেন ২০২৩ হাংজু এশিয়াডেও থাকবেন।

গত এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ ষষ্ঠ হয়েছিল। এবার সেই অবস্থান ধরে রাখা কি কঠিন হবে? জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘জাকার্তায় দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে আমরা ষষ্ঠ হই। এবার চেষ্টা করব আরও ভালো করার।’

ভালো মানে কি পঞ্চম হওয়া? সেটা আপাতদৃষ্টে অসম্ভবই মনে হচ্ছে। তবে জিমির প্রশ্ন, ‘কেন অসম্ভব? চেষ্টা করলে সম্ভব।’ তবে সমস্যাটাও জানেন তিনি, ‘সমস্যা হলো আমরা বড় ম্যাচ খেলি কম। ভারত, পাকিস্তান, কোরিয়া, জাপানের মতো দলগুলোর সঙ্গে আমরা সর্বশেষ খেলেছি ঢাকায় ২০২১ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। এরপর আর খেলিনি। অথচ এই সময়ে ওরা অনেক ম্যাচ খেলেছে। তাই আমাদেরও খেলতে হবে। নইলে আমরা নিজেদের আরও ওপরের দিকে আনতে পারব না।’

জিমি জাতীয় দলে খেলা শুরু করেন ২০০৩ সালে। সেই থেকে রেকর্ড ৬টি এশিয়া কাপ খেলেছেন। ২০০৩, ২০০৭, ২০০৯, ২০১৩, ২০১৭ ও ২০২২। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা এশিয়াতেই জিমির মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়া কঠিন এখন।

বয়স হলেও এখনো ফিটনেস ভালো জিমির। ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ৪০ জনের মধ্যে ৩৬ জন এসেছেন এবং তাঁদের যে ফিটনেস টেস্ট হয়েছে গতকাল সকালে, তাতে অন্য অনেকের চেয়ে ভালো নম্বর পেয়েছেন জিমি। বাংলাদেশ দলের সহকারী কোচ শহিদুল্লাহ টিটু যেমন বললেন, ‘ফিটনেস টেস্টে দু–একজন ছাড়া মোটামুটি সবাই পাস। জিমিও ভালো করেছে। আসলে পারফরম্যান্স থাকলে যে কেউ খেলে যেতে পারে। জিমিরও পারফরম্যান্স আছে। ফলে তাকে চাইলেই বাদ দিতে পারবেন না। মেসিকে আপনি বাদ দেবেন কীভাবে?’

দল যত দিন চায়, খেলে যেতে চান রাসেল মাহমুদ জিমি

শুক্রবার বিকেলে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন জাতীয় দলের সাবেক মিডফিল্ডার শহিদুল্লাহ। স্টেডিয়ামে ঢুকে অবশ্য মনেই হলো না জাতীয় দল অনুশীলন করছে। কারণ, কারও গায়েই জাতীয় দলের জার্সি ছিল না। যে যার মতো জার্সি পরে নেমেছেন অনুশীলনে। ৩৫ জনের গায়ে ৩৫ রকম জার্সি। তবে খেলোয়াড়েরা জানালেন, দু–তিন দিনের মধ্যেই তাঁরা অনুশীলন জার্সি পেয়ে যাবেন।

এশিয়ান গেমসের ক্যাম্পে শহিদুল্লাহ টিটু ছাড়াও সহকারী কোচের দায়িত্বে আছেন রাসেল খান বাপ্পি ও আশিকুজ্জামান। শহিদুল্লাহ ও রাসেল খান এই প্রথম জাতীয় দলের সহকারী কোচ হয়েছেন। আশিক গত এশিয়ান গেমসে সহকারী ছিলেন। জাতীয় দলের সাবেক এই খেলোয়াড়েরা খেলা ছেড়েছেন বেশি দিন হয়নি। তাঁরা এবার জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তিনজনই বললেন, জাতীয় দলকে কিছু দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য।

রাসেল খান যেমন বললেন, ‘সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন দলকে অনুশীলন করিয়েছি। জাতীয় বয়সভিত্তিক দলকে করিয়েছি। এবার জাতীয় দলে এসে অন্য রকম অভিজ্ঞতা হচ্ছে। আশা করছি, জাতীয় দলকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারব।’ রাসেল খান দীর্ঘদিন জাতীয় দলের গোলকিপার ছিলেন। এবার জাতীয় দলের গোলকিপার অসীম গোপ, বিপ্লব কুজুরদের কেমন মনে হচ্ছে? সাবেক গোলকিপার বলেন, ‘হকির গোলকিপিং কঠিন একটা কাজ। তবে আমাদের ছেলেরা বেশ ভালো করছে।’

জুলাইয়ে প্রথম সপ্তাহে কোরিয়ান কোচের বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা।