জুঁই আক্তারের লক্ষ্য এখন স্থির। বড় সাঁতারু হতে হবে। দেশসেরা সাঁতারু হতে হবে। দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে হবে।
কুষ্টিয়ার সাঁতারের গ্রাম আমলার মেয়ে জুঁইয়ের বয়স মাত্র ১৫ বছর। বিকেএসপির দশম শ্রেণির ছাত্রী। আমলার খালে, মজা পুকুরে সাঁতারে অনেকেই উঠে এসেছেন জাতীয় পর্যায়ে। তাঁদের মধ্যে আছেন নৌবাহিনীর রুবেল রানা, অনিক ইসলাম, আসিফ রেজা, নাজমা খাতুন, সীমা খাতুন, সুবর্ণা খাতুন, ‘জলকন্যা’খ্যাত সবুরা খাতুন, লাবণী আক্তার, ববিতা খাতুনসহ আরও অনেকেই। ৩৬তম বয়সভিত্তিক জাতীয় সাঁতারে তিনটি জাতীয় রেকর্ড গড়া জুঁইও এগোচ্ছে সে পথে।
অনেক বাধা এসেছে। মা–বাবার হাতে মার খেয়েছি। কিন্তু আমার তো সাঁতার খুব ভালো লাগে, আমি কী করব!জুঁই আক্তার, বিকেএসপির সাঁতারু
শনিবার প্রতিযোগিতার প্রথম দিন মেয়েদের ৪০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে ৫ মিনিট ২০.৮৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে রেকর্ড গড়ে জুঁই। পরশু দ্বিতীয় দিনে গড়েছে আরও দুটি রেকর্ড। একটি ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে, অন্যটি ৮০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে। জুঁইয়ের প্রিয় ইভেন্ট ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোক। সাবেক জাতীয় সাঁতারু মাহফুজা আক্তার তাঁর আদর্শ, জুঁই যাঁকে ডাকে ‘শিলা আপু’ বলে। ২০১৬ সালে শিলং-গুয়াহাটি এসএ গেমসে ১০০ মিটার ও ৫০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে বাংলাদেশের হয়ে সর্বশেষ দুটি সোনা জিতেছিলেন মাহফুজা। জুঁইয়েরও আপাতত লক্ষ্য এসএ গেমস, ‘পরের এসএ গেমস কবে জানি না, তবে আমি এসএ গেমসের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। আমি চাই বড় কিছু করতে।’
জুঁইয়ের বাবা কৃষিকাজ করেন। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই তার পরিবারের। ওদিকে মেয়ে কেন সাঁতার কাটবে—এ নিয়ে নানা প্রশ্ন! কিন্তু জয় হয়েছে জুঁইয়ের জেদেরই, ‘অনেক বাধা এসেছে। মা–বাবার হাতে মার খেয়েছি। কিন্তু আমার তো সাঁতার খুব ভালো লাগে, আমি কী করব!’
প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছে জুঁই। এখানে এসেই সে বুঝতে পারে, খালে–বিলে সাঁতার কেটে ভালো কিছু করা যাবে না। খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে অনুশীলন—সবই থাকতে হবে নিয়মের মধ্যে, ‘সাঁতারে অনেক শক্তি লাগে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। অনেক খরচেরও ব্যাপার। বিকেএসপিতে ভর্তি না হলে হয়তো সাঁতার ছেড়ে দিতে হতো। আমার পরিবারের পক্ষে এত খাবারের খরচ জোগাড় করা সম্ভব নয়।’