উসাইন বোল্ট অবসর নিতেই যেন অবসান ছেলেদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে জ্যামাইকান রাজত্বের। ২০১৭ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের নিজের শেষ ১০০ মিটারটা অবশ্য জিততে পারেননি সর্বকালের দ্রুততম মানব। যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিন গ্যাটলিন ও ক্রিস্টিয়ান কোলম্যানের পেছনে থেকে তৃতীয় হয়েছিলেন বোল্ট। এরপর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ছেলেদের ১০০ মিটার মানেই যেন যুক্তরাষ্ট্রের দাপট।
তবে শেলি-অ্যান ফ্রেজার-প্রাইসরা মেয়েদের ১০০ মিটারে ধরে রেখেছিলেন জ্যামাইকার আধিপত্য। এবার বুদাপেস্টেও ফেবারিট ছিলেন ফ্রেজার-প্রাইস ও শেরিকা জ্যাকসনরা। কিন্তু কাল রাতে সবাইকে চমকে দিয়ে বিশ্বের নতুন দ্রুততম মানবী হয়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের শা’কারি রিচার্ডসন। সেই রিচার্ডসন, মাদক-বিতর্কে যার ক্যারিয়ার শঙ্কার মুখে পড়েছিল।
দুবছর আগে গাঁজা টেনে মাদক পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়ার কারণে টোকিও অলিম্পিকের যুক্তরাষ্ট্র দল থেকে বাদ পড়েছিলেন রিচার্ডসন। এরপর গত বছর দেশের মাটিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের দলেও জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ট্রায়ালে খারাপ করে। সেই রিচার্ডসন কাল নয় নম্বর লেনে কী দৌড়টাই না দৌড়ালেন। ১০.৬৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে ফেবারিট দুই জ্যামাইকানকে পেছনে ফেলে হয়ে গেলেন বিশ্বের দ্রুততম মানবী।
১০.৬৫ সেকেন্ড—বিশ্ব অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে মেয়েদের ১০০ মিটারে নতুন রেকর্ড এটি। মেয়েদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে এর চেয়ে কম সময় নিয়ে শেষ করেছেন মাত্র চারজন। ১০.৭২ সেকেন্ড সময় নিয়ে শেরিকা জ্যাকসন দ্বিতীয় ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ষষ্ঠবার দ্রুততম মানবী হওয়ার স্বপ্ন দেখা ফ্রেজার-প্রাইস ১০.৭৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে হয়েছেন তৃতীয়।
ফাইনালের আগে শা’কারি রিচার্ডসন নিজেও জয়ের চিন্তা করেছেন কি না সন্দেহ! সেমিফাইনালটা যে ভাগ্যক্রমেই পেরিয়েছিলেন ২৩ বছর বয়সী স্প্রিন্টার। তিনটি সেমিফাইনাল থেকে শীর্ষ দুজন করে মোট ছয়জন সরাসরি ওঠেন ফাইনালে। বাকি দুজনকে বেছে নেওয়া হওয়া টাইমিংয়ের হিসেবে। নিজের দৌড়ে সেরা দুইয়ে থাকতে না পারা রিচার্ডসন সুযোগ পেয়েছেন সেই টাইমিংয়ের হিসেবেই (১০.৮৪ সেকেন্ড)। সেমিফাইনাল শেষ হওয়ার ৭০ মিনিট পরে সেই রিচার্ডসনই ইতিহাস হলেন।
কোনোরকমে সেমিফাইনাল পাড় হওয়াতে চূড়ান্ত দৌড়ে নয় নম্বর লেনে জায়গা হয় রিচার্ডসনের। সবচেয়ে ডানের সেই লেন থেকেই ক্যারিয়ারের সেরা দৌড়টা দিলেন। সবার আগে সমাপ্তিরেখা পেরোনোর পর রিচার্ডসন যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কী করেছেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন আকাশের দিকে। এরপর বিস্ময়ে চোখ বড় করে মূক হয়ে রইলেন আরও কিছুক্ষণ। কী করবেন সেটিই যেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। একটু ধাতস্থ হওয়ার পর বিকট এক চিৎকার দিয়েই বাচ্চাদের মতো লাফাতে শুরু করে দিলেন।
উজ্জ্বল রঙের নেলপালিশ রাঙানো নখ আর বাহারি চুলের মেয়ে এরপর সগর্বে ঘোষণা দিলেন, ‘আমি এখানে, আমিই চ্যাম্পিয়ন। আপনাদের সবাইকে তো আগেই বলেছিলাম। এটা প্রত্যাবর্তন নয়, আমি আগের চেয়ে আরও ভালো হয়েছি!’
দুবছর অলিম্পিকের ট্রায়ালে সেরা হয়েই যুক্তরাষ্ট্রের দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। গাঁজা নেওয়ার ঘটনায় বাদ পড়তেও সময় লাগেনি রিচার্ডসনের। মাদক পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়ার পর ভুল স্বীকার করে নিয়ে রিচার্ডসন জানিয়েছিলেন মায়ের মৃত্যুর পর বাজে বন্ধুদের জড়িয়েই সর্বনাশ করেছেন নিজের।
গাঁজা যেহেতু পারফরম্যান্স-বর্ধক মাদক নয়, তাই সে সময়ে রিচার্ডসনের পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্কও কম হয়নি। সেখান থেকে ফিরে এসে বিশ্বজয় করলেন শা’কারি রিচার্ডসন।