আবার কবে এভাবে শুটিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন, জানেন না শুটাররা
আবার কবে এভাবে শুটিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন, জানেন না শুটাররা

কেনা হয়েছে ৫ কোটি টাকার রাইফেল-পিস্তল, তবু বসে আছেন শুটাররা

স্থবিরতা কাটিয়ে অনেক ক্রীড়া ফেডারেশন সক্রিয় হয়েছে আগেই। কিন্তু ৫ আগস্ট দেশে পটপরিবর্তনের পাঁচ মাস পার হলেও এখনো স্থবির শুটিং। ঘরোয়া কোনো খেলা নেই। নেই ফেডারেশনের কোনো অনুশীলন কার্যক্রমও। আগামী মাসে ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপেও দল পাঠানো হচ্ছে না। যদিও গত পাঁচ মাসের মধ্যেই কেনা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকার রাইফেল ও পিস্তল।

গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ হওয়ার কথা ছিল। একই সময়ে ফেডারেশনের সাধারণ সভাও। কিন্তু দেশের পরিবর্তিত অবস্থায় কোনোটাই হয়নি। চলতি মাসে হওয়ার কথা ছিল হামিদুর রহমান জাতীয় যুব শুটিং প্রতিযোগিতা। সেটাও হচ্ছে না। ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদের বাবার নামে কয়েক বছর ধরেই বছরের শুরুতে হয়ে আসছে এই টুর্নামেন্ট। সরকার পতনের পর দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীর ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ। তাঁর জায়গায় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হয়েছেন যুগ্ম সম্পাদক-১ মোহাম্মদ আলী সোহেল।

ঘরোয়া খেলা ও অনুশীলন না থাকার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও। ৯ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ব্যাংককে এশিয়ার রাইফেল-পিস্তল কাপে নিবন্ধনের শেষ সময় ছিল ২৫ ডিসেম্বর। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কোনো শুটারের নাম নিবন্ধন করা হয়নি। অথচ এই টুর্নামেন্টে যুব বিভাগে এর আগে মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে দলীয় পদক পেয়েছে বাংলাদেশ। এবার যুব (অনূর্ধ্ব-১৮) বিভাগ নেই, জুনিয়র (অনূর্ধ্ব-২১) ও সিনিয়র বিভাগে খেলা হবে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা একটা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন।

২০২৪ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে জাতীয় এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপ

এশিয়া কাপে দল না পাঠানো প্রসঙ্গে ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ভাষ্য, জাতীয় দলের অনুশীলন নেই। বিদেশি কোচ নেই। এ কারণেই পাঠানো হচ্ছে না। ডিসেম্বরে বিজয় দিবস ওপেন প্রীতি টুর্নামেন্ট হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে ফেডারেশনের কোনো খেলার সূচি নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ না করার কারণ হিসেবে বলেছেন, অসুস্থতার কারণে মহাসচিব দেশের বাইরে। ফেডারেশনের সভাপতিকে সরকার অব্যাহতি দিয়েছে। আর্থিক সমস্যাও ছিল। এসব কারণে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ও বার্ষিক সাধারণ সভা স্থগিত হয়ে গেছে।

গত ৫ আগস্ট দুই ইরানি কোচের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তার আগেই তাঁরা বাংলাদেশ ছাড়েন। বিদেশি কোচ না থাকায় ফেডারেশনের অধীন অনুশীলন হচ্ছে না। তবে কদিন ধরে ফেডারেশনে এসে অনুশীলন করছেন নৌবাহিনীর শুটাররা।
ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক ওয়াইজ বলছেন, কেউ কেউ অনুশীলন করছে। তবে পরিবেশ–পরিস্থিতির কারণে খেলা আয়োজন করতে না পারা এবং দল বিদেশে পাঠাতে না পারার ব্যর্থতা সবার।

ডিসেম্বরে এয়ার রাইফেলের চালান এসেছে শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনে

গত পাঁচ মাসের মধ্যে শুটিং ফেডারেশন বিদেশ থেকে ৯৪টি রাইফেল ও পিস্তল এনেছে। এ বাবদ ফেডারেশনের ১ কোটি ২০ লাখ টাকা শুল্ক খরচ হয়েছে বলে জানান মোস্তাক। তাঁর দেওয়া তথ্য, ৫০টি রাইফেলের দাম শুল্কসহ ৬ লাখ ৮০ হাজার করে মোট ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা পড়েছে। ৪৪টি পিস্তলের একেকটির দাম শুল্কসহ ৩ লাখ ৫১ হাজার, মোট ১ কোটি ৫৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

সব মিলিয়ে ৯৪টি রাইফেল ও পিস্তল কিনতে খরচ হয়েছে ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৪৪টি পিস্তলের মধ্যে বিকেএসপি নিয়েছে ২০টি। বাকিগুলো ফেডারেশনে আছে। ক্লাবগুলো টাকা দিয়ে এগুলো নেবে। কিন্তু রাইফেল-পিস্তল নিয়েই বা কী করবে ক্লাব? খেলা তো নেই।

খেলা না থাকায় হতাশ সাফে সোনাজয়ী সাবেক শুটার ও শুটিং ফেডারেশনের কোচ শারমিন আক্তার রত্না বলেন, ‘ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি দেওয়া হবে শোনা যাচ্ছে। কমিটি নিয়ে সিদ্ধান্ত যা–ই হোক, সেটা দ্রুত করা উচিত। কমিটি যত দ্রুত হবে, খেলাও তত দ্রুত শুরু হবে।’