অবসরপ্রাপ্ত সচিব সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে গঠিত বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের ১৪ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি নিয়ে গতকাল ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ।
তবে কমিটি নিয়ে খুশি গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার ও এনামুল হোসেন রাজীব। এ বিষয়ে গ্র্যান্ডমাস্টার আবদুল্লাহ আল রাকিবের মতামত জানা যায়নি। আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান অকাল প্রয়াত হয়েছেন গত জুনে।
রাজীব গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে শুধু একটা কথাই বলেছেন, ‘আমরা যেমন চেয়েছিলাম তেমন কমিটিই হয়েছে।’ পরে তিনি এক ফেসবুক পোস্টে নতুন সভাপতি সৈয়দ সুজাউদ্দিনকে নিয়ে নিয়াজের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন।
ফেসবুক পোস্টে রাজীব লেখেন, ‘নিয়াজ ভাই মোকাদ্দেস সাহেবের কমিটিকে সমর্থন দিয়েছিলেন, যাঁদের কারণে আজকে দাবার এই অবস্থা। আর সুজা আঙ্কেলের কমিটি দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন, কারণ সুজা আঙ্কেলের সময়কালে চারজন গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছে। আমার দেখামতে, দাবায় যদি কেউ বিভেদ তৈরি করে থাকে, সেটা সব সময় নিয়াজ ভাই করেছেন। উনি সংগঠক থেকে খেলোয়াড়, সবার নামে আজেবাজে কথা বলেছেন।’ প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আজ যোগাযোগ করলে রাজীব ফোন ধরেননি।
নতুন কমিটির ব্যাপারে রিফাত বিন সাত্তারও বেশ ইতিবাচক। তিনি কমিটিকে সময় দিতে চান এবং আশা করছেন কমিটি ভালো কিছু করবে। রিফাত বলেন, ‘একটু দেখি, কমিটি কেমন কাজ করে। আগেই নেতিবাচক বলা ঠিক না। এখানে খুব ভালো ভালো মানুষ আছেন। আমরা সব সময় ভাবি, একে থাকতে হবে, ওকে থাকতে হবে। এটা ঠিক নয়। সহসভাপতি হিসেবে ড. আরিফ দৌলাহ আছেন। দাবা সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে তাঁর। সহসভাপতি ড. সোয়েব রিয়াজ আলম আছেন। সভাপতি পদে সুজা আঙ্কেল আছেন। আরও বেশ কয়েকটি নাম আছে। অনেক দিন ধরে তাঁরা কাজ করছেন দাবা নিয়ে।’
নতুন সাধারণ সম্পাদক তৈয়বুর রহমান সুমনকে নিয়ে একটু বেশিই উচ্ছ্বসিত রিফাত। তৈয়বুর সরকারের যুগ্ম সচিব ও ফিদে মাস্টার। অনেক দিন ধরে দাবা খেলছেন। তাঁকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পাওয়া দাবার জন্য ভালো মনে করেন রিফাত। তাঁর কথা, ‘এর চেয়ে ভালো আসলে কী হতে পারে।’
একটু দেখি, কমিটি কেমন কাজ করে। আগেই নেতিবাচক বলা ঠিক না। এখানে খুব ভালো ভালো মানুষ আছেন।রিফাত বিন সাত্তার
তবে নিয়াজ, সুজাউদ্দিনের মতো রিফাতও বলেছেন গঠিত কমিটির কয়েকজনকে চেনেন না তিনি। উদাহরণ হিসেবে যুগ্ম সম্পাদক নাজনীন ইসলামের কথা বলেছেন রিফাত। সঙ্গে যোগ করেন, ‘সবাইকে চিনতে হবে কথা নেই। যিনি কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন, তিনি চার্টার্ড অ্যাকাউটেন্ট। তাঁর তো দাবা বোঝার দরকার নেই। নিজের দায়িত্বটা ঠিকঠাক করতে পারলেই হলো।’
সৈয়দ সুজাউদ্দিন দাবা ফেডারেশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিবও তিনি। ফেডারেশনের সভাপতি পদ অনেকটা আলংকারিক। সভাপতির কাজ মূলত পৃষ্ঠপোষক আনা। ৭৭ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত এই সরকারি কর্মকর্তা সেটা এখন আর পারবেন না মনে করেন নিয়াজ। তাঁকে না চাওয়ার এটাও অন্যতম কারণ জানিয়ে নিয়াজ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘সার্চ কমিটির দুজন সদস্য রানী আপার (রানী হামিদ) বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে আমিও ছিলাম। সুজা ভাই আগে থেকে বিতর্কিত। ফলে তাঁকে আমরা চাইনি। আর কি লোক ছিল না, যিনি স্পনসর আনতে পারবেন!’
নিয়াজের এমন বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত রিফাতের। নতুন সভাপতিকে বেশ পারদর্শী মনে করেন তিনি, ‘নিয়াজ ভাই, রানী আপা লেজেন্ড। সবার ব্যক্তিগত মতামত থাকতেই পারে। তাঁরা সুজা আঙ্কেলের ব্যাপারে একটু নেতিবাচক। সেটা হতেই পারে। সুজা আঙ্কেলের ভালো দিকই দেখেছি বেশি। আমি মনে করে তিনি ভালো করবেন।’
রিফাত গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছেন ২০০৬ সালে। বাংলাদেশের তৃতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার তিনি। বর্তমানে পেশাগত কারণে দাবা নিয়মিত খেলতে পারছেন না। তবে দাবা নিয়ে ভাবেন। সার্চ কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে দাবার কমিটি নিয়ে নিজের পরামর্শও দেন। শোনা গিয়েছিল, তিনি অ্যাডহক কমিটিতে সহসভাপতি হতে পারেন। কিন্তু তাঁকে রাখা হয়নি কমিটিতে।
তবে গঠিত কমিটির ওপর আস্থা রাখছেন রিফাত। কমিটি চেষ্টা করবে, এমনটাই তাঁর আশা। এ নিয়ে রিফাত বলেন, ‘দাবায় আগে থেকেই আর্থিক সমস্যা আছে। সেটা কাটাতে হবে। অ্যাডহক কমিটি দায়িত্ব নিচ্ছে ভিন্ন পরিস্থিতিতে। তাদের কাজ হবে সবকিছু সিস্টেমে নিয়ে আসা। সেটা হতে পারে আর্থিক সিস্টেম, হতে পারে পারফরম্যান্স সিস্টেম। কমিটি কী করতে চায়, সেটা নির্ধারণ করে এগোতে হবে।’