রোমানিয়া জিমন্যাস্টিকস দলের সঙ্গে কিংবদন্তি নাদিয়া কোমানেচ
রোমানিয়া জিমন্যাস্টিকস দলের সঙ্গে কিংবদন্তি নাদিয়া কোমানেচ

জিমন্যাস্টিকস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে নাদিয়া কোমানেচের রোমানিয়া

অলিম্পিক এলেই আলোচনায় চলে আসে নাদিয়া কোমানেচের নাম। এই জিমন্যাস্টস ১৯৭৬ সালে মন্ট্রিয়ল অলিম্পিকে যে ইতিহাস গড়েছিলেন, তাতে তাঁর নামটি হয়তো চিরদিনই আলোচনায় থাকবে।

জিমন্যাস্টিকসের আন ইভেন বার ইভেন্টে অলিম্পিক ইতিহাসে একমাত্র নাদিয়া কোমানেচই ‘পারফেক্ট টেন’-এর অধিকারী। অর্থাৎ কোমানেচই একমাত্র জিমন্যাস্টস, যিনি ১০-এ ১০ স্কোর করতে পেরেছিলেন। অনন্য এই কীর্তি তিনি গড়েছিলেন ১৪ বছর ৮ মাস বয়সে।

কিংবদন্তি এই জিমন্যাস্টসের দেশ রোমানিয়ার একটা সময় জিমন্যাস্টিকসে ছিল সোনালি ঐতিহ্য। শুধু জিমন্যাস্টিকসেই রোমানিয়া পেয়েছে ৭২টি পদক। এর মধ্যে আছে ২৫টি সোনা, ২১টি রুপা ও ২৬টি ব্রোঞ্জ। তবে এমন ঐতিহ্য যাদের, তারাই ২০১২ সালের পর জিমন্যাস্টিকসে কোনো পদকই জিততে পারেনি। পদক জেতা দূরের কথা, পদকের লড়াইয়ে জায়গাই করতে পারেনি দেশটি।

তবে এবার প্যারিসে হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে লড়বে রোমানিয়া। ১৭ বছর বয়সী সাবরিনা ভোইনিয়ার ওপর ভরসা করছে দেশটি। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ইউরোপীয় জিমন্যাস্টিকসে দুটি রুপা ও ব্রোঞ্জ জেতা এই ভোইনিয়া অলিম্পিকে একটা পদক জিততে রীতিমতো মরিয়া। তবে জিমন্যাস্টিকসে রোমানিয়া নিজেদের ঐতিহ্য এতটাই হারিয়েছে যে ভোইনিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ইভেন্টের পদক জয়ের আশা থাকলেও দলগত ইভেন্টে এমন কিছু ভাবাই যাচ্ছে না।

নাদিয়া কোমানেচকে সর্বকালের অন্যতম সেরা অলিম্পিয়ান মনে করা হয়

সাবরিনা ভোইনিয়ার কোচ তাঁর মা ক্যামেলিয়া ভোইনিয়া। তিনি নিজেও অলিম্পিকে রোমানিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন জিমন্যাস্টিকসে। ১৯৮৮ সিউল অলিম্পিকে তিনি দলীয় রুপা জিতেছিলেন।

তবে ক্যামেলিয়া নিজেও মনে করেন মেয়ের পক্ষে অলিম্পিক পদক জয় অনেকটাই কঠিন কাজ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জিমন্যাস্টিকসে নিজেদের অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছি। এখন আমাদের প্রচুর কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের সময় আমরা অলিম্পিকে একটা পদক জয়ের জন্য যেভাবে পরিশ্রম করতাম, সেই কাজটাই আমাদের এখন করতে হবে।’

নাদিয়া কোমানেচের দেশ জিমন্যাস্টিকসে কীভাবে নিজেদের হারিয়ে ফেলল—এমন প্রশ্নে ক্রীড়ালেখক আন্দ্রিয়া গিউকলিয়া বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘প্রধান কারণ পরিকল্পনার অভাব। দেশটির অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ভালো কোচদের বেশির ভাগই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন, ভালো সংগঠকের অভাব, অবকাঠামোর বাজে অবস্থা—সব মিলিয়েই রোমানিয়ার জিমন্যাস্টিকস তার ঐতিহ্য হারিয়েছে। অন্য দেশের সঙ্গে খেলাটিতে রোমানিয়ার মানের পার্থক্য এসব কারণেই শুধু বেড়েছেই।’

২০২৩ সালে রোমানিয়ার জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন রাজধানী বুখারেস্টের বিভিন্ন জিমন্যাস্টিকস হলের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পৃষ্ঠপোষকদের সাহায্য আহ্বান করে। সেই সময় ৩ লাখ ইউরো তহবিলে জমা হয়। সেটি দিয়ে হলগুলোর উন্নয়ন করা হয়, বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কেনা হয়। মোটকথা, নতুন করে খেলাটি গুছিয়ে তোলার প্রাথমিক কাজ করে ফেডারেশন।  

সাবরিনা ভোইনিয়াকে নিয়ে প্যারিস অলিম্পিকে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছে রোমানিয়া

২০২৩ সালে নেদারল্যান্ডসের প্যাট্রিক কিয়েনস রোমানিয়ার কোচের দায়িত্ব নেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, রোমানিয়ার কোনো জিমন্যাস্টিকস হলের অবস্থাই ভালো নয়। খেলোয়াড়েরা চোটে পড়লে চিকিৎসা দেওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই। কোনো সুযোগ-সুবিধাই আসলে ঠিকঠাক নেই।