ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কার

ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর সভাপতি খুঁজে পাচ্ছে না সার্চ কমিটি

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের লক্ষ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সার্চ কমিটি গঠন করে ২৯ আগস্ট। শুরুতে দুই মাসের মধ্যে কমিটিকে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করতে বলা হলেও পরে পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি পুনর্গঠন করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।

নতুন প্রজ্ঞাপনে সার্চ কমিটিকে কাজ শেষ করার কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। সার্চ কমিটিও দায়িত্ব নেওয়ার চার মাসেও কোনো সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারেনি।

তবে অক্টোবরের শেষ দিকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ৯টি ফেডারেশনের জন্য প্রস্তাবিত অ্যাডহক কমিটি জমা দেয় সার্চ কমিটি। ১৪ নভেম্বর হকি, কাবাডি, অ্যাথলেটিকস, দাবা, বাস্কেটবল, বিলিয়ার্ড অ্যান্ড স্নুকার, টেনিস, স্কোয়াশ ও ব্রিজ ফেডারেশনের কমিটি ঘোষণা করে সরকার।

এর পরপরই সার্চ কমিটি হ্যান্ডবল, ভলিবল, শুটিং, তায়কোয়ান্দোসহ আরও ৯টি ফেডারেশনের প্রস্তাবিত কমিটি জমা দিয়েছে। কিন্তু প্রথম ধাপের ৯টি কমিটি ঘোষণার পর এক মাস পেরিয়ে গেলেও এরপর কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। অবশ্য পরশু যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, দ্রুতই এগুলো ঘোষণা করা হবে।

জানা গেছে, সার্চ কমিটি আরও ৭-৮টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি মোটামুটি চূড়ান্ত করে ফেলেছে। কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘সব কটিরই কাঠামো হয়ে গেছে।’

কিন্তু সেই কাঠামো কি শুধুই কিছু মুখ বদল? প্রশ্নটা উঠছে, ফেডারেশনে সংস্কার বলতে এত দিনেও কিছু মুখ বদল ছাড়া আর কিছুই না হওয়ায়। সার্চ কমিটির ওই সদস্য অবশ্য বলছেন, ‘মুখই তো বদল হবে। এটাই সংস্কার।’ তাহলে ক্রীড়া উপদেষ্টা ঘোষিত ‘সিস্টেমের’ বদলের কী হবে? তাঁর জবাব, ‘সিস্টেম কী বদল হবে, জানি না। ফেডারেশনগুলোর গঠনতন্ত্রে কিছু বদল আসবে, এটা নিশ্চিত। ক্রিকেট, ফুটবল বাদে বাকি ফেডারেশনগুলোর গঠনতন্ত্র পুরোনো হয়ে গেছে।’

নতুন প্রজ্ঞাপনে সার্চ কমিটিকে কাজ শেষ করার কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। সার্চ কমিটিও দায়িত্ব নেওয়ার চার মাসেও কোনো সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারেনি।

ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে যাওয়ায় নতুন এক সমস্যায়ও পড়েছে সার্চ কমিটি। একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রথম দিকে ফেডারেশনের সভাপতি হতে অনেকে রাজি থাকলেও এখন অনেকেই সে দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। এ ব্যাপারে সার্চ কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘যাদের সভাপতি করব ভেবেছি, তাদের অনেকে এখন সদস্য হতে চান, সভাপতি নয়। তারা আসলে আসতে চাইছেন না।’

আমাদের বড় কাজ ফেডারেশনের গঠনতন্ত্র সংশোধন। সেটা নিয়ে কাজ চলছে।
সার্চ কমিটির প্রধান জোবায়দুর রহমান

কেন আসতে চান না, এমন প্রশ্নে তাঁর উত্তর, ‘তাঁরা হয়তো চিন্তা করেন, দুদিন পর নির্বাচিত সরকার আসবে। নির্বাচিত সরকারের সময় থাকতে চান। একজন তো সরাসরি বলেছেন, “আমি ফেডারেশনকে এক কোটি টাকা স্পনসর করে দেব। তবু আমাকে কমিটিতে রাখবেন না।” তাহলে কি সভাপতি হতে অনেকে ভয় পাচ্ছেন? ‘একটু’, সংক্ষেপে বললেন সার্চ কমিটির ওই সদস্য।

গত ১০ সেপ্টেম্বর একসঙ্গে ৪৩টি ফেডারেশনের সভাপতিকে অব্যাহতি দেয় সরকার। ৫২টি ফেডারেশনের মধ্যে প্রথম ধাপে কাবাডির সভাপতি করা হয় যথারীতি আইজিপিকে। হকিতে আগে থেকেই ছিলেন বিমানবাহিনী প্রধান, এখনো তিনিই আছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই ফেডারেশনগুলোর প্রধানের পদ পুলিশ ও বিমানবাহিনী প্রধানের জন্য স্থায়ী বন্দোবস্তই হয়ে গেছে।

সব মিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের চার মাসে ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারকাজ খুব একটা এগোয়নি।

২১ আগস্ট ভেঙে দেওয়া সব জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কমিটিও এখনো নতুন করে হয়নি। এসব সংস্থায় একজন করে ছাত্র প্রতিনিধি ও স্থানীয় সাংবাদিকসহ সাতজনের অ্যাডহক কমিটি করার কথা। গত চার মাসে ৩২টি জেলা ও তিনটি বিভাগ থেকে প্রস্তাবিত কমিটি পাঠানো হলেও এখনো কোনোটাই অনুমোদন হয়নি বলে জানিয়েছেন এনএসসির এক কর্মকর্তা। জেলা ও বিভাগে সাতজনের কমিটি গঠন নিয়ে ভিন্নমত আছে সার্চ কমিটির। সাতজনের কাঠামোতে ক্রীড়া সম্পৃক্ত ব্যক্তি কম হওয়ায় ১১ জনের কমিটি চাইছে সার্চ কমিটি।

সব মিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের চার মাসে ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারকাজ খুব একটা এগোয়নি। সার্চ কমিটির প্রধান জোবায়দুর রহমান অবশ্য বলেছেন, ‘আমাদের বড় কাজ ফেডারেশনের গঠনতন্ত্র সংশোধন। সেটা নিয়ে কাজ চলছে। জেলাগুলোর কমিটি না হওয়ায় তাদের সঙ্গে বসতে পারছি না। ফেডারেশনগুলোর কমিটি আশা করি দ্রুতই ঘোষণা হয়ে যাবে।’