বাংলাদেশ হকি দলের জার্মানি সফর বাতিল করা হয়েছে
বাংলাদেশ হকি দলের জার্মানি সফর বাতিল করা হয়েছে

খেলাবিহীন সময়ে বাংলাদেশের হকিতে হতাশা

ক্যাম্প করতে দুই মাসের জন্য জার্মানি যাওয়ার কথা ছিল খেলোয়াড়দের। কিন্তু দলে বিতর্কিত কর্মকর্তারা থাকায় সফরটি বাতিল করা হয়েছে।

উন্নত প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশ হকি দলকে জার্মানি পাঠানোর কথা ছিল এ মাসেই। ২১ আগস্ট থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাসের সফরের জন্য ২৪ খেলোয়াড়সহ ৩০ জনের দলের সরকারি আদেশও (জিও) পেয়েছিল হকি ফেডারেশন। কিন্তু দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সফরটি আর হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি হকি ফেডারেশন। তবে সূত্র জানিয়েছে, হকি ফেডারেশন সভাপতি বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের নির্দেশে সফর বাতিল করা হয়েছে।

সফরে বাংলাদেশ দলের কর্মকর্তাদের তালিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। ম্যানেজার করা হয়েছিল হকির সঙ্গে সম্পর্কহীন বিতর্কিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে। দলনেতা হন ক্যাসিনো–কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত আরেক যুবলীগ নেতা ও হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ। বিতর্কিত ব্যক্তিরা থাকায় বাংলাদেশ দলের জিও বাতিল করতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে হকি ফেডারেশন।

জার্মানি সফরে অনূর্ধ্ব-২১ দলের ১০-১২ খেলোয়াড় রাখা হয়েছিল। বাকিরা জাতীয় দলের। কিন্তু আগামী নভেম্বরে জুনিয়র এশিয়া কাপ সামনে রেখে পুরো অনূর্ধ্ব-২১ দলটাকেই জার্মানি পাঠালে ঠিক হতো মনে করছে হকি ফেডারেশন। খণ্ডিতভাবে অর্ধেক পাঠিয়ে লাভ নেই। সফর বাতিল করার এটাও একটা কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

খেলাবিহীন সময়ে হকি খেলোয়াড়েরা তাকিয়ে ছিলেন জার্মানি সফরের দিকে। সেটি বাতিল হওয়ায় হতাশ জাতীয় দলের রাইটব্যাক রেজাউল করিম, ‘কোচ পিটার গেরহার্ড সব ব্যবস্থা করেছিলেন। সবাই তাকিয়ে ছিল এই সফরের দিকে। আমিসহ চারজন খেলোয়াড়ের জার্মানির একটি ক্লাবের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছিল। আরও কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে কথা হয় অন্যদের। সফর বাতিল হওয়ায় সবারই ক্ষতি হলো।’

ক্যাসিনো–কাণ্ডে জড়িত মমিনুল হক সাঈদ আবার হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ফিরেছিলেন

আপাতত ঘরোয়া কোনো খেলাও নেই হকিতে। কবে হবে কেউ জানে না। হকিতে কখনো বর্ষপঞ্জিও ছিল না। সামনে শুধু অনূর্ধ্ব-২১ এশিয়া কাপের চূড়ান্ত পর্ব, বাংলাদেশের পুরুষ-মহিলা দুই দলই তাতে খেলবে। এই টুর্নামেন্টে ৫-৬ নম্বরে থাকতে পারলেও প্রথমবারের মতো জুনিয়র বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ আসতে পারে। তাই জুনিয়র এশিয়া কাপের জন্য ভালো প্রস্তুতি চায় হকি ফেডারেশন। আপাতত এ নিয়েই তারা কাজ করছে।

৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মমিনুল হক আর ফেডারেশনে আসছেন না। তিনি নেপালে পালিয়েছেন বলে গুঞ্জন। ফেডারেশনে আসছেন না যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল এহছানসহ আওয়ামী লীগপন্থী কর্মকর্তাদের কেউই। এ অবস্থায় ফেডারেশনের কাজকর্ম একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে তত্ত্বাবধান করছেন ফেডারেশন সভাপতি নিজেই, যেটি সাধারণত করেন সাধারণ সম্পাদক।

মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের এ শূন্যতা যেন দেশের হকিরই প্রতীকী ছবি

সঙ্গে আছেন ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক খেলোয়াড় আরিফুল হক। বিএনপির সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক আরিফুলকে এত দিন মমিনুল সক্রিয় হতে দেননি। উল্টো গত প্রিমিয়ার লিগে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তাঁকে চার বছর নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যেটি ‘অন্যায়ভাবে’ হয়েছে বলে দাবি আরিফুলের। সরকার পরিবর্তনের পর ফেডারেশন সভাপতি তাঁকে কাজ করতে বলেছেন জানিয়ে আরিফুল বলেন, ‘আমরা দু-তিনজন ফেডারেশনে যাচ্ছি। সভাপতির দিকনির্দেশনায় আমাদের মূল কাজ দ্রুত এশিয়া কাপের ক্যাম্প শুরু করা।’ তবে ক্যাম্প শুরু করতেও সংকট দেখছেন তিনি, ‘ফেডারেশনের তহবিলে মাত্র ৩৪ হাজার টাকা আছে। এই টাকা দিয়ে একটা ফেডারেশন চলতে পারে না।। চেষ্টা চলছে আর্থিক সংকট কাটানোর।’

আরেকটি প্রস্তুতিও চলছে হকিতে। গত প্রিমিয়ার লিগে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা মিলিয়ে ৪১ জনকে নজিরবিহীনভাবে বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন সাঈদ। এই শাস্তি নিয়ে বিতর্ক হয়েছে অনেক। সাধারণ সম্পাদকসহ শাস্তিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সভাপতিকে চিঠি দেওয়া হবে শিগগিরই।

মমিনুলের নেতৃত্বে বর্তমান কমিটি গত বছরের জুনে একতরফা নির্বাচন করে দায়িত্ব নেওয়ার পর এশিয়ান গেমস, জুনিয়র এশিয়া কাপ বাছাইয়ে দল পাঠাতে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম হয়েছে বলেও দাবি আরিফুলের। এসবের বিচারও চাওয়া হচ্ছে ফেডারেশন সভাপতির কাছে।