যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশের হয়ে খেলতে এসেছিলেন জিন্নাত ফেরদৌস। হাংজু এশিয়ান গেমস খেলতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) যে কয়েকজন ক্রীড়াবিদকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিল, জিন্নাত তাঁদের একজন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাদেশিক পর্যায়ে বক্সিংয়ে নিয়মিতই অংশ নেন তিনি। বাংলাদেশি–আমেরিকান জিন্নাত এবারের এশিয়ান গেমসে দেশের হয়ে খেলতে চাওয়ায় তাঁকে সুযোগ করে দিয়েছিল বিওএ ও বক্সি ফেডারেশন।
জিন্নাতের অভিষেকটা অবশ্য আজ খুব ভালো হয়নি। যদিও তিনি প্রথম রাউন্ডে ‘বাই’ পেয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে লড়েছেন। ৫০ কেজি ওজন শ্রেণিতে তিনি মঙ্গোলিয়ার প্রতিযোগী ইয়ুসগেনের বিপক্ষে হেরেছেন ৫-০ ব্যবধানে। এ ম্যাচ হেরে এশিয়াড থেকে বিদায় নিয়েছেন জিন্নাত।
এশিয়াডে বক্সিংয়ে তিন প্রতিযোগী নিয়ে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের। দুজন পুরুষ—আবু তালহা (৫১ কেজি ফ্লাইওয়েট) ও সেলিম হোসেন (৫৭ কেজি ফেদারওয়েট)। জিন্নাত অংশ নিয়েছিলেন মেয়েদের ৫০ কেজি ফ্লাইওয়েট বিভাগে। বাংলাদেশ দলের কোচ শফিউল আজম অবশ্য জিন্নাতের লড়াইয়ের প্রশংসাই করেছেন, ‘দেখুন, জিন্নাত মাত্র দুই বছর হলো বক্সিংয়ে এসেছে। মঙ্গোলিয়ার প্রতিযোগী খুবই অভিজ্ঞ। সে ১২-১৩ বছর ধরে বক্সিং করছে। জিন্নাত লড়েছে, ভালোই লড়েছে। আমি আশাবাদী ওকে নিয়ে। সে যদি কঠোর অনুশীলন চালিয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে।’
জিন্নাত নিজেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাদেশিক পর্যায়ের বক্সিং আর এশিয়াডের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে পেরেছেন, ‘এশিয়াডের মান সম্পর্কে আগেই ধারণা ছিল। দারুণ অভিজ্ঞতা হলো। এশিয়ান গেমসে বক্সারদের মান অনেক উন্নত। আমি এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে দারুণ গর্বিত। ভবিষ্যতেও আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাই।’
গতকাল পুরুষদের ৫৭ কেজি ফেদারওয়েট বিভাগে সেলিম হোসেন শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগীকে হারিয়ে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছেন। তাঁর পরের লড়াই ৩০ সেপ্টেম্বর। তাজিকিস্তানের বক্সারের বিপক্ষে লড়তে হবে সেলিমকে। লড়াইটা যে যথেষ্ট কঠিন, সেটি বললেন কোচ শফিউল, ‘এশিয়াডে যত ওপরের দিকে উঠবেন, তত শক্তিশালী প্রতিযোগীর সঙ্গে লড়তে হবে। এটা খুবই স্বাভাবিক। মধ্য এশিয়ার প্রতিটি দেশই বক্সিংয়ে ভালো। শারীরিক দিক দিয়েও তাঁরা শক্তিশালী। তাজিকিস্তানের প্রতিযোগী সেলিমের জন্য কঠিন হবে, এটা বলতেই হবে। তবে সেলিম শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগীর বিপক্ষে জিতে আত্মবিশ্বাসী। সে লড়াই করবে। দেখা যাক কী হয়!’
পুরুষদের ৫১ কেজি ফ্লাইওয়েট বিভাগে তালহা প্রথম রাউন্ডে ‘বাই’ পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলবেন সৌদি আরবের বক্সারের বিপক্ষে। কোচ শফিউল তালহাকে নিয়ে আশাবাদী, ‘সৌদি আরবের প্রতিযোগীর সঙ্গে খেলবে বলেই আশাবাদী। তালহা বর্তমানে দেশের সম্ভাবনাময় বক্সার হিসেবে পরিচিত। আমি তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছি।’
এশিয়ান গেমসে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তিগত পদকটি এসেছে বক্সিং থেকেই। ১৯৮৬ সালে সিউল এশিয়ান গেমসে দেশকে ব্রোঞ্জ উপহার দিয়েছিলেন মোশাররফ হোসেন। ৩৭ বছর আগে পদক এলেও বক্সিং খেলাটাই সেভাবে আলোচনায় আসতে পারেনি। এ অবস্থা পরিবর্তনে কোচ শফিউল আবারও জোর দিয়েছেন বেশি বেশি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার ওপর, ‘সারা বছর ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিয়োগিতায় খেলতে হবে। বিদেশে বা দেশে। বক্সিং অভিজ্ঞতার খেলা। জিন্নাত যেটা আজ বুঝেছে। হয়তো খেলাটি এক ঘুষির খেলা। কিন্তু সেই ঘুষিটি দিতে গেলে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। আমি চাই আমাদের বক্সাররা বেশি করে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাক।’