জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার মরদেহ। কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন অনেকেই
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার মরদেহ। কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন অনেকেই

ক্রীড়াঙ্গনের ভালোবাসায় অন্তিমযাত্রা গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার

পল্টনে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনে সেই ছোটবেলা থেকেই ছিল তাঁর আসা–যাওয়া। নিজের সেই প্রিয় স্থানে আর যাবেন না গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। শেষবারের মতো আজ গিয়েছিলেন বেলা ১১টার দিকে, তবে কফিনে শুয়ে। পুরোনো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিচতলায় হলো জিয়ার জানাজা।

ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন জানাজায়। মাত্র ৫০ বছর বয়সে অকালপ্রয়াত এই দাবাড়ুর কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ), দাবা ফেডারেশন, তায়কোয়ান্দো ফেডারেশন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে জিয়ার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মোহাম্মদপুরে তাজমহল রোডে। বাবার কবরের পাশে হচ্ছে তাঁর শেষ ঠিকানা।

জিয়ার চলে যাওয়ায় বাংলাদেশের দাবার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম। জানাজায় এসে তিনি বলেন,‌ ‘অনেকেই টুর্নামেন্টের পুরস্কার ও নানা সুযোগ-সুবিধা কম হলে খেলতে চাইতেন না। জিয়া কখনোই এ রকম ছিলেন না। সব টুর্নামেন্টেই তিনি অংশগ্রহণ করতেন। যেন অন্যরা তার মাধ্যমে শিখতে পারে।’

জিয়ার স্মৃতি ধরে রাখার পরিকল্পনার কথাও জানান ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনেই আলাদা একটি ফ্লোর পাওয়ার কথা ছিল আমাদের । সেখানে গ্র্যান্ডমাস্টার কর্নারের পরিকল্পনা ছিল। সেটা যত দিন না হয় আমরা বর্তমান দাবা ফেডারেশন ক্রীড়াকক্ষকেই জিয়ার নামকরণ করার উদ্যোগ নেব।’

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান

জিয়াকে চিরবিদায় জানিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘জিয়ার অকালমৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। তার যে পবিত্র স্থান, যে স্থানকে সে ভালোবাসত, সেখান থেকেই সে চলে গেল। দাবা খেলা অবস্থাতেই মারা গেল। ভালো একজন খেলোয়াড়কে হারিয়েছি আমরা।’

জিয়ার পরিবারকে আর্থিক সহায়তার কথাও বলেন বিওএ মহাসচিব, ‘আমরা তার পরিবারের পাশে থাকব। দাবা ফেডারেশনের সঙ্গে কথা বলে একসঙ্গে কাজ করব। প্রয়োজনে তারা যেখানে যেতে বলবে আমরা যাব। একটা তহবিল গঠনের দরকার আছে।’

দাবা ফেডারেশনের সহসভাপতি তরফদার রুহুল আমিনও তহবিল গঠনের কথা বলেছেন। গতকাল রাতে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসানের সঙ্গে এ নিয়ে তাঁদের কথা হয়েছে জানিয়ে রুহুল আমিন যোগ করেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী এ ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন। দাবা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আমরাও ব্যবস্থা নেব। সবাই মিলে একটা তহবিল গঠন করে দিতে পারলে ভালো হবে। জিয়ার ছেলেকেও পরিচর্যা করে গ্র্যান্ডমাস্টার বানাতে পারি কি না, চেষ্টা করব। এ ব্যাপারে সবাই একযোগে কাজ করব।’

এ সময় উপস্থিত দুই গ্র্যান্ডমাস্টার আবদুল্লাহ আল রাকিব ও এনামুল হোসেন রাজীব জিয়াকে নিয়ে নানা স্মৃতিচারণা করেন। আবদুল্লাহ আল রাকিব যেমন বলেন, ‘ঝরনার মতো ছিল তাঁর সরলতা। আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম। কিন্তু একজন আরেকজনকে শুভকামনা জানাতাম। বড় ভাই, বন্ধু হিসেবে দারুণ ছিলেন মানুষটা।’

জিয়ার জানাজায় ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই এসেছিলেন

রাকিবের সঙ্গে জিয়ার শেষ দেখা হয়েছিল ২০২১ সালে। নিজেই সেটা জানিয়ে বাংলাদেশের চতুর্থ গ্র্যান্ডমাস্টার বলেন, ‘আম্মা মারা যাওয়ার পর আমি দাবা থেকে দূরে আছি। গতকাল যখন শুনেছি জিয়া ভাইয়ের মৃত্যুর খবর, অনুভূতি ব্যক্ত করার মতো নয়। জিয়া ভাই তাঁর জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড দাবায় ব্যয় করেছেন। আমার দেখা তিনি বাংলাদেশের দাবায় সেরা পারফরমার ও সেরা খেলোয়াড়। মানুষ হিসেবেও অসাধারণ। জিয়া ভাইয়ের ক্যারিয়ার, তাঁর চিন্তাচেতনায় একাগ্রতা দেখে আমরা শিখতাম।’

মনন রেজার শেষ রাউন্ড আজই

১২ রাউন্ড পর্যন্ত শীর্ষে থাকা মনন রেজা আগামীকাল শ্রীলঙ্কা যাচ্ছেন একটি টুর্নামেন্ট খেলতে। ফলে তাঁর শেষ রাউন্ড আজই হয়ে যাবে। শেষ রাউন্ডে আজ ড্র করলেই জাতীয় দাবার প্রথমবারের মতো মনন রেজা চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবেন। বাকি ম্যাচগুলো আপাতত আজ ও কাল স্থগিত করা হয়েছে।

৪৮তম জাতীয় দাবার ১২তম রাউন্ডে গতকাল গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের বিপক্ষে খেলতে খেলতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জিয়াউর রহমান। ২৫ চালের পর ম্যাচটা থেকে যায় অসমাপ্ত। নিয়ম অনুযায়ী অসমাপ্ত ম্যাচ আবার শুরু করতে হয়। কিন্তু জিয়ার মৃত্যুতে ওই ম্যাচে পূর্ণ পয়েন্ট পেয়ে যাবেন রাজীব। তবে মানসিকভাবে তিনি বিপর্যস্ত। জানাজায় এসে বললেন, ‘আমার সামনেই জিয়া ভাইয়ের এমন মৃত্যু জীবনে দুঃসহ স্মৃতি হয়ে থাকবে। এটা না হলেই ভালো হতো।’