দেশের যেখানেই মেয়ের প্রতিযোগিতা থাকে, সেখানেই ছুটে যান বাবা আফজাল হোসেন। বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে শেখ কামাল জাতীয় যুব গেমসে আজ যখন তাসমিয়া হোসেন হাই জাম্পে অংশ নেয়, পাশেই দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন আফজাল।
লাফ শেষ হতেই তাসমিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরেন আফজাল। বাবার চোখে তখন আনন্দের কান্না। প্রথমবার জাতীয় যুব গেমসে অংশ নিয়েই রেকর্ড গড়ে সোনা জিতেছে তাসমিয়া।
রংপুর বিভাগের হয়ে সোনা জিততে বিকেএসপির নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসমিয়া লাফিয়েছে ১.৫২ মিটার। শোনা গেছে, যুব গেমসে মেয়েদের হাই জাম্পের আগের রেকর্ডটি ১.৩৪ মিটর। তবে সেই রেকর্ডের কোনো নথি ফেডারেশনে নেই।
এর আগে ২০২১ সালে জাতীয় জুনিয়র মিটে এই ইভেন্টে রুপা জেতে তাসমিয়া। সেবার সে লাফিয়েছিল ১.৩৬ মিটার। এবার আরও বেশি উচ্চতায় লাফিয়ে খুশি তাসমিয়া, ‘আমি যুব গেমসের জন্য কঠোর অনুশীলন করেছি। শীতের মধ্যে ভোরবেলা উঠতে হতো অনুশীলনের জন্য। প্রথমে খুব কষ্ট হতো। কিন্তু পরে অভ্যাস হয়ে যায়। অবশেষে কষ্টের ফল পেয়ে ভালো লাগছে।’
আশির দশকে নিয়মিত কাবাডি খেলতেন আফজাল। মেয়েকেও খেলোয়াড় বানানোর ইচ্ছা ছিল। একমাত্র মেয়েকে শুরুতে রাগবি ও ক্রিকেট খেলতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তাসমিয়ার উচ্চতা (৫ ফুট সাড়ে সাত ইঞ্চি) দেখে রংপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ওয়ালিদা বেগম হাই জাম্পে অংশ নিতে পরামর্শ দেন।
রংপুরে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন আফজাল। ঢাকায় এসেছেন মেয়ের যুব গেমসের ইভেন্টগুলো সরাসরি দেখতে। মেয়ে যে সোনার পদক জিতবেন, সেটা জানতেন। কিন্তু রেকর্ড গড়তে দেখে অবাকই হয়েছেন তিনি, ‘মেয়ের পারফরম্যান্স নিয়ে আত্মবিশ্বাস ছিল। কিন্তু ও রেকর্ড গড়বে সেটা বুঝিনি। আমি খুব খুশি।’
বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকসে হাই জাম্পে আশার আলো ছড়াচ্ছেন মাহফুজুর রহমান, উম্মে হাফসা রুমকি, রিতু আক্তাররা। সর্বশেষ এসএ গেমসে ২০১৯ সালে নেপালে রুপা জেতেন মাহফুজুর। গত বছর ডিসেম্বরে জাতীয় অ্যাথলেটিকসে নতুন রেকর্ড গড়ে সোনা জেতেন রিতু আক্তার। তিনি লাফিয়েছিলেন ১.৭৫ মিটার। তাসমিয়া এবার এই রেকর্ড ভাঙার স্বপ্ন দেখছেন, ‘রিতু আপু এবার রেকর্ড গড়েছিল, সেটা আমি জানি। আমি এবার রিতু আপুর রেকর্ড ভাঙতে চাই। এসএ গেমসে সোনা জিততে চাই।’