গ্যালারিতে থাকা একজনকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছেন আরশাদ নাদিম। এক্সে এ ভিডিওটা শেয়ার করে একজন লিখেছেন, ‘দুনিয়ার যা কিছু ভালো, সব এই লোকটার প্রাপ্য। দেশের জন্য যা করেছেন, সেটিও একেবারে একা একাই।’
এক্সের ওই ব্যবহারকারী যে খুব একটা ভুল বলেছেন, তা নয়। দেশটির নাম যখন পাকিস্তান, ক্রিকেট বাদে অন্য খেলার সুযোগ-সুবিধার অবস্থা সেখানে সুবিধার নয় মোটেও। নাদিম একসময় ক্রিকেট বেশ ভালোই খেলতেন। তবে জ্যাভেলিনে মজে ক্রিকেটে আর এগোননি। যেটিকে জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তিনি।
বেশ কয়েক বছরের পুরোনো নিজের জ্যাভেলিন বা বর্শাটা কয়েক মাস আগেও বদলানোর মতো অবস্থা ছিল না নাদিমের। এগিয়ে আসে পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) দল মুলতান সুলতানস। প্যারিস অলিম্পিকে নাদিমের পৃষ্ঠপোষক হওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।
এমন অবস্থা থেকে উঠে এসে অলিম্পিকে অংশগ্রহণই হয়তো অনেক বড় ব্যাপার। নাদিম সেখানে জিতেছেন সোনা!
টোকিওতে ২৭ বছর বয়সী নাদিম হয়েছিলেন পঞ্চম। সর্বশেষ কমনওয়েলথ গেমসে জিতেছিলেন সোনা, যদিও সেখানে ছিলেন না মূল প্রতিদ্বন্দ্বী নীরাজ চোপড়া। ভারতের থ্রোয়ার টোকিওতে জিতেছিলেন সোনা।
সেই নীরাজকে টপকে, অলিম্পিকের রেকর্ড ৯২.৯৭ মিটার পেরিয়ে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাথলেটিকসে পাকিস্তানের প্রথম সোনা এনে দিয়েছেন নাদিম। যেটি ব্যক্তিগত কোনো ইভেন্ট এবং ১৯৯২ সালের পর যেকোনো ইভেন্টেই পাকিস্তানের প্রথম পদক।
রেকর্ড গড়া থ্রো নিয়ে নাদিম বলেছেন, ‘যখনই জ্যাভেলিনটা ছুড়লাম, হাত থেকে বেরোনোর ওই অনুভূতিটা হয়েছে। মনে হয়েছে অলিম্পিক রেকর্ড হতে পারে।’
এবারের সোনা জয়ে যে টোকিওর আগের গেমস অনুপ্রেরণা ছিল, নাদিম জানিয়েছেন সেটিও, ‘আমি টোকিওতে ভালো করার মতো যথেষ্ট ফিট ছিলাম, কিন্তু তখন ভালো করতে পারিনি। অলিম্পিকের পর কঠোর পরিশ্রম করি, এরপর কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতি। এরপর নিজের ছন্দ ধরে রাখতে আরও বেশি পরিশ্রম করি। আজ দেশের জন্য সোনা জিতলাম।’
নাদিমের এ ইভেন্টে আলাদা করে চোখ ছিল পাকিস্তান ও ভারত দুই দেশেরই। এমনিতে ট্র্যাকের বাইরে দুজন বেশ ভালো বন্ধু। নীরাজের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রসঙ্গে নাদিম বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো ছিলই, কোনো সন্দেহ নেই। ক্রিকেটের মতো জ্যাভেলিন থ্রোতেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল! দুই দেশেই সবাই আগ্রহ নিয়ে দেখেছে—আমরা যাতে একে অন্যকে হারাই। নীরাজ ভাইকে রুপা জিততে দেখে ভালো লাগছে।’
তবে এ প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে নাদিম দেখছেন ইতিবাচক হিসেবেই, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসলে ক্রিকেট ম্যাচে, অন্য খেলায় যখন দুই দেশ খেলে। কিন্তু আমাদের খেলা দেখা এবং আমাদের অনুসরণ করাটা দুই দেশের তরুণদের জন্য ভালো ব্যাপার। উভয় দেশের জন্যই ইতিবাচক দিক।’
নাদিমের সঙ্গে এ ব্যাপারে একমত নীরাজও। এর মাধ্যমে দুই দেশের মানুষ অ্যাথলেটিকস, বিশেষ করে জ্যাভেলিনে আরও মানুষ আগ্রহী হবে বলেও আশাবাদ তাঁর।
নিজের পারফরম্যান্সের জন্য সাম্প্রতিক চোটকেও দুষেছেন নীরাজ, ‘গত দুই-তিন বছর ভালো ছিল না। সব সময়ই চোটে ছিলাম। অনেক চেষ্টা করেছি, তবে আমার চোট ও টেকনিক নিয়ে কাজ করতে হবে।’
নীরাজের পারফরম্যান্স তাঁর আশা অনুযায়ী না হলেও দারুণই ছিল। ভারতের প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে কোনো ব্যক্তিগত ইভেন্টে টানা দুটি অলিম্পিকে পদক পেলেন। নীরাজ বলেছেন, ‘সামনে অনেক খাটব। আজকের (গতকালের) প্রতিযোগিতা দারুণ ছিল। আরশাদের থ্রো সত্যিই ভালো ছিল। তাকে এবং তার দেশকে অভিনন্দন।’
সোনা জিতলে ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশে কী হয়, নীরাজ তো সেটি জানেন ভালোভাবেই!