গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব
গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব

বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াড

ইসরায়েলের বিপক্ষে ওয়াকওভার, ব্যবস্থা নেওয়া হবে গ্র্যান্ডমাস্টার রাজীবের বিরুদ্ধে

বুদাপেস্টে বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে দশম রাউন্ডে ওপেন বিভাগে আজ ইসরায়েলের বিপক্ষে গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবকে ছাড়াই খেলছে বাংলাদেশ। চার বোর্ডের মধ্যে এক বোর্ডে তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়াকওভার পাচ্ছে ইসরায়েল। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাতটায় শুরু ম্যাচে বাংলাদেশের বাকি বোর্ড খেলছেন আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ রহমান, ফিদে মাস্টার মনন রেজা ও তাহসিন তাজওয়ার জিয়া। ইসরায়েলের বিপক্ষে এভাবে না খেলার ঘোষণা দেওয়ায় গ্র্যান্ডমাস্টার রাজীবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।

হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে চলমান প্রতিযোগিতায় গতকাল নবম রাউন্ডের পর ঠিক হয়, দশম রাউন্ডে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ইসরায়েল। এটা জানার পর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব জানান, ইসরায়েলের বিপক্ষে তিনি খেলবেন না। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘২০২২ সালে চেন্নাই দাবা অলিম্পিয়াডসহ ২০২৪ হাঙ্গেরি দাবা অলিম্পিয়াডে রাশিয়া ও বেলারুশ দল অংশ নিতে পারেনি। তাহলে বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসরায়েল কীভাবে অংশ নিতে পারে? আমি বয়কট করলাম।’


বর্জনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়া ও বেলারুশকে দাবা অলিম্পিয়াডে খেলতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি নিজ দেশের পতাকা নিয়ে দেশ দুটির দাবাড়ুদের বিশ্ব আসরে খেলার সুযোগ নেই। ফিদে তাদের নিষিদ্ধ করে রেখেছে। ইসরায়েল নির্বিচার ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে। এর প্রতিবাদেই আমি ইসরায়েলের বিপক্ষে খেলছি না।’

তবে খেলার জন্য অনুরোধ করা হলেও নিজের সিদ্ধান্তে রাজীব অটল ছিলেন। এই তথ্য জানিয়ে বুদাপেস্ট থেকে দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দীন শামীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজীব খেলবে না ঘোষণার পর আমরা ঢাকায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সচিব আমাদের জানিয়েছেন, ইসরায়েল এই টুর্নামেন্টে খেলছে জেনেই সরকার বাংলাদেশ দাবা দলকে জিও (সরকারি আদেশ) দিয়েছে। খেলোয়াড়েরা জানতেন ইসরায়েল এই টুর্নামেন্টে খেলছে। কোনো খেলোয়াড় ইসরায়েলের বিপক্ষে খেলতে না চাইলে তিনি আগে বলেননি কেন? সচিব আমাদের বলেছেন, কেউ না খেললে আমরা যেন দেশে ফিরে রিপোর্ট দিই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে। ক্রীড়া পরিষদ ব্যবস্থা নেবে।’

গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব


রাজীবের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এভাবে একজন খেলোয়াড় কোনো একটি দেশের বিরুদ্ধে না খেলার অবস্থান নিতে পারে না। ম্যাচের দিন সকাল ১০টার মধ্যে ৫ জনের মধ্যে ৪ জনের নামের তালিকা জমা দিতে হয়। সে অনুযায়ী আমরা রাজীবসহ চারজনের নাম জমা দিই। জমা দেওয়ার পর নাম আর প্রত্যাহার করা যায় না। ফলে রাজীব না খেলায় কিছু করার নেই। তার বোর্ডে আমাদের কেউ থাকছে না। ইসরায়েল ওয়াকওভার পাবে।’

যোগাযোগ করলে সন্ধ্যায় রাজীব প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ইসরায়েলের বিপক্ষ খেলবেন না গত রাতেই দলীয় অধিনায়ককে (মাসুদুর রহমান) জানিয়ে দিয়েছিলেন। তারপরও কেন তাঁর নাম দেওয়া হলো, সেই প্রশ্ন তুলেছেন রাজীব, ‘পাঁচজনের মধ্যে নিয়াজ ভাই (নিয়াজ মোরশেদ) ও নীড়ও (মনন রেজা) ইসরায়েলের বিপক্ষে খেলতে চাইছিল না। কিন্তু চারজনের নাম তো দিতে হবে। তাই আমার নাম দিয়েছে। কিন্তু আগেই জানানোর পরও কেন আমার নাম দেওয়া হলো? আমি তো আমার অবস্থান আগেই জানিয়ে দিয়েছি।’

বুদাপেস্টে গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব


ইসরায়েল এই টুর্নামেন্টে খেলছে। তাদের সঙ্গেও বাংলাদেশের ম্যাচ পড়তে পারে। এটা জানার পরও তাহলে কেন গেলেন অলিম্পিয়াডে? প্রশ্ন করলে রাজীবের উত্তর, ‘আশা করিনি ইসরায়েলের সঙ্গে ম্যাচ পড়বে আমাদের। তাই এসেছি।’ রাজীব জানিয়েছেন, এর আগে ১৯৯৬ অলিম্পিয়াডে একবার ইসরায়েলের সঙ্গে ম্যাচ পড়েছিল বাংলাদেশের। তখন মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে ম্যাচ না খেলতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছিল। তবে সেবার বাংলাদেশ খেলেছে ইসরায়েলের সঙ্গে। রাজীব নিজে অবশ্য সেই দলে ছিলেন না।
এবার না খেলার সিদ্ধান্তে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এমন ইঙ্গিত প্রসঙ্গে রাজীবের কথা, ‘ফেডারেশন চাইলে ব্যবস্থা নিলে নেবে। কী করার আছে।’