ঢাকায় কেনাকাটা করেছেন?
‘না, না, করিনি।’ কেন করেননি বললেন সেটাও, ‘আপনাদের এখানে অনেক দাম। আমাদের হুগলিতে যেটা ১০০ টাকা, এখানে ডাবল। একটা চকলেট যেখানে ২০ টাকা, এখানে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ডিমের হালি আমাদের ওখানে ২০ থেকে ২২ টাকা। এখানে প্রায় ৫০ টাকা। জিনিসের যা দাম, তাতে কেনাকাটার কোনো সুযোগই নেই।’
মুখে কিছুটা হাসি ছড়িয়ে প্রথম আলোর প্রশ্নে এক ঝটকায় বলে যান পশ্চিমবঙ্গের কাবাডি খেলোয়াড় মনিশা বারা। গতকাল ঢাকার পল্টন কাবাডি স্টেডিয়ামে শেষ হওয়া সিটি গ্রুপ নারী কাবাডি লিগে বাংলাদেশ পুলিশকে চ্যাম্পিয়ন করার পর তাঁকে পাওয়া গেল বেশ ফুরফুরে মেজাজে। তাঁর সঙ্গী পুলিশ দলে খেলা পশ্চিমবঙ্গের আরও দুজন খেলোয়াড় সুরেশ্রি পাকিরা ও সরস্বতী কুণ্ডু।
তিনজনই একই জেলার বাসিন্দা। হুগলিতে কাছাকাছি বাড়ি। ঢাকায় খেলে এতক্ষণে হয়তো তাঁরা বাড়ি পৌঁছে গেছেন। ফাইনাল শেষে গতকাল রাত ১১টায় সড়কপথে তাঁরা বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। আগামীকালই তাঁদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নারী কাবাডি দলের হয়ে পাঞ্জাবে ভারতের জাতীয় নারী কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার কথা। এ কারণেই ঢাকায় গতকাল ফাইনাল শেষে বাড়ি ফেরার তাড়া ছিল তিনজনেরই।
এই প্রথম ভারতের বাইরে কোনো দেশের ঘরোয়া কাবাডিতে খেললেন। ঢাকায়ও এসেছিলেন প্রথমবার। স্বাভাবিকভাবে তাঁদের কাছে প্রশ্ন ছিল ঢাকা থেকে কী নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে? মনিশা বলেন, ‘এখানকার ভালোবাসা। আর কী নেব বলুন!’ পাল্টা প্রশ্ন হলো, নতুন জায়গায় এলে অনেক কিছুই নেওয়ার থাকে? শুনে মনিশা বললেন, ‘কিছুই কেনার আগ্রহ নেই। প্রচুর দাম এখানে। আমরা তো অবাক হয়ে গেছি দাম দেখে।’ একটা শাড়ি তো কিনতে পারতেন...। এবার মনিশা হেসে বলেন, ‘শাড়ি তো পরি না দাদা।’
মনিশা ঢাকার এই নারী কাবাডি লিগে সেরা রেইডার হয়েছেন। সুরেশ্রি পাকিরা সেরা খেলোয়াড়। গত এশিয়ান গেমসে সুরেশ্রি ভারতীয় দলের ক্যাম্পে ছিলেন। তবে জায়গা পাননি চূড়ান্ত দলে। ঢাকায় সেরা খেলোয়াড় হয়ে ১০ হাজার টাকা করে পুরস্কার পেয়েছেন। সমপরিমাণ টাকা পেয়েছেন মনিশাও। পুরস্কার পেয়ে দুজনই ছিলেন উচ্ছ্বসিত। এতটা তাঁরা ভাবতে পারেননি।
বাংলাদেশের মেয়েদের কেমন দেখলেন জানতে চাইলে সুরেশ্রি পাকিরার ঝটপট জবাব, ‘এখানকার মেয়েরা কাবাডিতে ভালো। কিন্তু আরও ভালো কোচিং দরকার, কোচ দরকার। ওদের আরও অনুশীলন করতে হবে। এখানে দেখলাম দু–তিনটি দল বাদে বাকি দলগুলো অনেক পিছিয়ে। সেই দলগুলোকে আরও অনুশীলন করে আসতে হবে। বেশি বেশি অনুশীলন না করলে এগোনো কঠিন।’ মনিশা যোগ করেন, ‘প্রথম তিনটি দল ছাড়া বাকি যারা খেলেছে, তাদের চেয়ে আমাদের সাব–জুনিয়রের মেয়েরা আরও ভালো।’
পশ্চিমবঙ্গে কেমন কাবাডি খেলা হয় জানতে চাইলে সরস্বতী বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে খেলা হয়। রাজ্য টুর্নামেন্ট হয়। ন্যাশনাল হয়। অনেক মেয়ে খেলে।’ পশ্চিমবঙ্গ থেকে এখন কেউ ভারতের জাতীয় দলে নেই। কেন নেই, মনিশা বললেন সেই কারণটা, ‘ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া অনেক কঠিন। আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু সুযোগ আসছে না। হরিয়ানার মেয়েরাই এখন জাতীয় দলে বেশি খেলে। হরিয়ানা রাজ্য সরকার কাবাডির বড় পৃষ্ঠপোষক।’
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার নারী কাবাডিতে তেমন পৃষ্ঠপোষণ করতে পারছে না বলে জানান মনিশা। দুই বাংলার নারী কাবাডিতে একটা পার্থক্যও দেখেন তিনি, ‘আপনাদের এখানে একটা ন্যাশনাল খেললে সব পাওয়া যায়। আমাদের ওখানে কিছু পাওয়া যায় না। দেখুন, পুলিশ ও আনসার কত টাকা খরচ করছে। আমাদের ওয়েস্ট বেঙ্গলে মেয়েরা কাবাডি খেলে চাকরি পায় না। এখানে পুলিশ ও আনসার চাকরি দিচ্ছে।’
ডিগ্রি শেষ করেছেন মনিশা। সুরেশ্রি হুগলির শ্রীগোপাল কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়েন। মনিশা খেলার প্রেরণা পান পরিবার থেকেই। মনিশা বলেন, ‘পরিবারে সবাই কাবাডি খেলা পছন্দ করে। পরিবারই আমাকে কাবাডিতে দিয়েছে। বাবারা–কাকারা–জেঠুরা খেলতেন।’ পরিবার থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়ার কথা বলেন সুরেশ্রিও।
এবারের লিগে চার নেপালি খেলোয়াড় এনেছিল সেমিফাইনালে হেরে যাওয়া মেঘনা কাবাডি ক্লাব। বাংলাদেশের ঘরোয়া কাবাডিতে বিদেশি আসার একটা দুয়ার যেন খুলেছে। এই প্রথম বিদেশি খেলেছে। আগামীতে দেশের নারী কাবাডি লিগে আরও বিদেশি খেলোয়াড় আসবে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। দলগুলোর আগ্রহ বেড়েছে বিদেশির প্রতি। পশ্চিমবঙ্গের মেয়েরা সেই আগ্রহ তৈরি করতে পেরেছেন।
বাংলাদেশ নারী কাবাডি দলের সাবেক অধিনায়ক ও নারী কাবাডি লিগে রানার্সআপ বাংলাদেশ আনসারের নারী কাবাডি দলের কোচ শাহনাজ পারভীন তাই তো বলেন, ‘আসলে পশ্চিমবঙ্গের মেয়েরা খুব ভালো খেলেছে। যে কারণে ফাইনালে পুলিশ ২৮-১৬ পয়েন্টে জিতেছে আমাদের বিপক্ষে। আশা করি, আগামীতে আরও ভালো বিদেশি আসবে। বাংলাদেশের নারী কাবাডি আরও এগোবে।’