সেই কবে ২০১৯ সালে একবারই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলেছে বাংলাদেশের মেয়েদের হকি দল। সেটি ছিল সিঙ্গাপুরে এশিয়ান হকি ফেডারেশন কাপ অনূর্ধ্ব-২১ টুর্নামেন্ট। চার বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক হকির স্বাদ পাবেন তাঁরা, সেটাও ভিন্ন এক টুর্নামেন্টে। এই প্রথম বাংলাদেশের মেয়েরা খেলবেন ‘ফাইভ এ সাইড’ হকি টুর্নামেন্ট। যার পোশাকি নাম ‘বিশ্বকাপ বাছাই এশিয়া হকি ফাইভ’। টুর্নামেন্টটি ওমানের সালালাহ শহরে চলবে ২৫-২৮ আগস্ট।
২৯ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর একই শহরে বসছে ছেলেদের বিশ্বকাপ বাছাই এশিয়া হকি ফাইভ আসর। এই টুর্নামেন্টেও খেলবে বাংলাদেশ। এর আগে থাইল্যান্ডে যুব অলিম্পিকের ‘ফাইভ এ সাইড’ বাছাইপর্ব পেরিয়ে ২০১৮ সালে আর্জেন্টিনায় চূড়ান্ত পর্ব খেলেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৮ যুব হকি দল। তবে ছেলেদের সিনিয়র দলও এই প্রথম ‘ফাইভ এ সাইড’ টুর্নামেন্ট খেলছে। ‘ফাইভ এ সাইড’ হকির স্কোয়াডে থাকে একজন গোলকিপারসহ ৮ জন খেলোয়াড়। ম্যাচ খেলেন একজন গোলকিপারসহ ৫ জন। মাঠের মাপ লম্বায় ৫৫ ও পাশে ৪৪ মিটার। ফিল্ড হকির সঙ্গে এখানে পার্থক্য হলো, এই মাঠটা বোর্ড দিয়ে ঘেরা। ফলে বোর্ডের কারণে বল মাঠের ভেতরেই থাকে। ম্যাচের সময় ২০ মিনিট।
বাংলাদেশের মেয়েরা পরশু রাতে যাচ্ছে সালালাহ। ছেলেরা যাবে ২৬ আগস্ট। দুটি দলেরই প্রস্তুতি চলছে বিকেএসপিতে। টুর্নামেন্টে ছেলেদের ও মেয়েদের কোনো গ্রুপিংই এখনো হয়নি। ফলে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে বাংলাদেশ এখনো ধারণা পায়নি। তবে ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, চীন, জাপান, ওমানসহ এশিয়ার দেশগুলো খেলার কথা এই টুর্নামেন্টে।
‘ফাইভ এ সাইড’ খেলার অনভিজ্ঞ এই দলের ফলাফল নিয়ে বাংলাদেশের নেই কোনো উচ্চাশা। ওমান অভিযানে বাংলাদেশের দুটি দলেরই কোচ বিকেএসপির হকির বিভাগীয় প্রধান জাহিদুর রহমান যেমন বলছেন, ‘মেয়েরা অনেক দিন পর আন্তর্জাতিক হকি খেলছে। তবে আমি মনে করি ওরা যা শিখেছে, সে অনুযায়ী খেলতে পারলে খারাপ করবে না। এক দুটি ম্যাচ জিততেও পারে।’ মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের নিয়ে আশা বেশি কোচের, ‘ছেলেদের দলটা মেয়েদের চেয়ে তুলনামূলক ভালো। কারণ, এই দলের খেলোয়াড়েরা আন্তর্জাতিক হকিতে অভিজ্ঞ।’
এমনিতে আন্তর্জাতিক হকিতে বাংলাদেশের মেয়েরা নবীন। এর ওপর ‘ফাইভ এ সাইড’ হকি খেলবে এই প্রথম। ফলে একটা রোমাঞ্চ কাজ করছে মেয়েদের মধ্যে। দলে থাকা ৮ জনের মধ্যে ২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরে খেলা সেই দলের সদস্য আছেন ৫ জন—ফারদিয়া আক্তার, মুক্তা খাতুন, সুমী আক্তার, অর্পিতা পাল ও সানজিদা আক্তার। বাকি তিনজন রিয়াসা আক্তার, কনা আক্তার, আইরিন আক্তার।
মেয়েদের দলের অন্যতম মুখ কিশোরগঞ্জের ফারদিয়া আক্তারের কাছে এই সফরটা লাগছে স্বপ্নের মতো। বিকেএসপি থেকে ফোনে বললেন, ‘আমরা এই প্রথম যাচ্ছি ফাইভ এ সাইড টুর্নামেন্ট খেলতে। বিকেএসপিতে এসে আমরা খেলাটা সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। এখন মোটামুটি সবার একটা ধারণা হয়েছে। অবশ্যই ভালো কিছু আশা করছি।’
যশোরের মেয়ে মুক্তা খাতুনের অনুভূতিও প্রায় একই, ‘অনেক ভালো লাগছে। আনন্দ যেমন হচ্ছে, রোমাঞ্চিতও আমরা। নতুন করে আবার স্বপ্ন দেখছি। মনে হচ্ছে, আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব। ২০১৯ সালের পর আমাদের আর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলা হয়নি। আমরা ভীষণ উজ্জীবিত। অনুশীলনে যা করেছি, মাঠে তা দিতে পারলে ভালো করব আশা করি।’