১৯৮০ সাল থেকে ২০-২২ বার বাংলাদেশে এসেছেন। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারি কখনো এপার বাংলায় কাটাননি। ভাষাশহীদদের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানও দেখা হয়নি তাঁর।
সেই অতৃপ্তি এবার দূর হচ্ছে ভারতীয় দাবাড়ু দিব্যেন্দু বড়ুয়ার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ ঢাকায় নিজের মতো করে পালন করবেন নিয়াজ মোরশেদের পর দ্বিতীয় বাঙালি গ্র্যান্ডমাস্টার।
৪৫ বছরের পুরোনো বন্ধু নিয়াজের আমন্ত্রণে গ্র্যান্ডমাস্টার দাবায় খেলতে ঢাকায় এসেছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় জন্ম নেওয়া দিব্যেন্দু। সেদিক থেকে বাংলাদেশ তাঁর শিকড়ও। বাংলাদেশের সংস্কৃতির প্রতি একটা আলাদা টানও অনুভব করেন সব সময়।
সেই টান থেকেই নিয়াজ আয়োজিত গ্র্যান্ডমাস্টার-১ টুর্নামেন্টটা ১৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে গেলেও বাড়তি দুই দিন ঢাকায় রয়ে গেছেন ১৯৯১ সালে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পাওয়া দিব্যেন্দু। এক দিন পরই যেহেতু একুশে ফেব্রুয়ারি, এবার আর তাড়াহুড়া করেননি কলকাতায় ফিরতে।
রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্ট খেলার ফাঁকে দিব্যেন্দু এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসলে কী হয়? রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শুরু হয় কর্মসূচি। ফুলে ফুলে ঢেকে যায় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদি।
এসব বিস্তারিত জানার পর দিব্যেন্দু বলছিলেন, ‘আমার খুব ইচ্ছা কাছ দেখে একুশ দেখব। এমনিতে টিভি, খবরের কাগজে একুশ নিয়ে জেনেছি। কখনো দেখা হয়নি। বাংলাদেশে এতবার এলেও কখনো একুশে ফেব্রুয়ারি সময়টায় ছিলাম না বা তখন খেলাও পড়েনি। এবার একুশ দেখার জন্য রয়ে গেছি।’
দিব্যেন্দু কাল গিয়েছিলেন পদ্মা সেতু দেখতে। বিকেলে ফোনে বললেন, ‘আমি এখন নিয়াজের সঙ্গে মাওয়া যাচ্ছি। পদ্মা সেতু দেখা আর ইলিশ মাছ খাওয়া হবে।’ আজ সকালে শহীদ মিনারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেও জানালেন, ‘নিয়াজের কাল (আজ) খেলা আছে, ও যেতে পারলে তো ভালো। নইলে সকালে একাই চলে যাব শহীদ মিনারে। আমি আসলে মুখিয়ে আছি। শুনেছি, কলকাতা থেকে অনেকেই ঢাকায় এসেছেন একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে।’
কলকাতায়ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে কিছু আয়োজন থাকে। তবে সেগুলো বাংলাদেশের মতো হয় না। দিব্যেন্দু বলছিলেন, ‘কলকাতায় অনুষ্ঠান হয় সীমিত। বাঙালিরা অনুষ্ঠান করে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে। বাংলা ভাষাকে তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেসব অনুষ্ঠানে বেশ কয়েক বছর আগে গিয়েছি। কিন্তু কলকাতার অনুষ্ঠানে যাওয়া আর ঢাকার অনুষ্ঠানে যাওয়া অনেক পার্থক্য। ঘটনাটা তো এখানে ঘটেছে (১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন)।’
একুশে ফেব্রুয়ারি দেখে আজ রাতে কলকাতার বিমান ধরবেন দিব্যেন্দু। তার আগে বিকেলে উত্তরায় এলিগেন্ট চেস একাডেমিতে উপস্থিত থাকবেন নিয়াজ মোরশেদ আয়োজিত গ্র্যান্ডমাস্টার এসপিরেন্ট-২ দাবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। গ্র্যান্ডমাস্টার-১ টুর্নামেন্টের ১০ খেলোয়াড়ের মধ্যে শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক মাস্টার ডি সিলভা ও দিব্যেন্দু খেলছেন না এই টুর্নামেন্টে।