গ্রীন ডেল্টা প্রিমিয়ার হকি লিগ চূড়ান্ত পরিণতির অপেক্ষায়। মোহামেডান, আবাহনী ও মেরিনার্সের ত্রিমুখী শিরোপা লড়াই এখন দারুণ জমজমাট। আগামীকাল হবে লিগের শেষ দুটি ম্যাচ। এদিনই নিষ্পত্তি ঘটতে পারে শিরোপার লড়াইয়ের। ১৪ ম্যাচে মোহামেডানের পয়েন্ট ৩৫, সমান ম্যাচে আবাহনী ও মেরিনার্সের সমান ৩৪ পয়েন্ট করে। পয়েন্ট তালিকার অবস্থা যা, শিরোপা যেতে পারে তিন দলের যেকোনোটির ঘরেই। মোহামেডান কাল আবাহনীকে হারালে কোনো হিসাব–নিকাশ ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। আবাহনী ও মেরিনার্স দুই দলই যদি জেতে, তাহলে সমান হয়ে যাবে তাদের পয়েন্ট। সে ক্ষেত্রে শিরোপা নিষ্পত্তি হবে প্লে-অফ ম্যাচে।
এমন এক সময়ে হকি লিগে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। আবাহনীকে শুক্রবার হারালেই যেখানে শিরোপা জিতে যাবে মোহামেডান, সেখানে সাদা–কালোরা এই ম্যাচ না খেলার হুমকি দিয়েছে। আজ মতিঝিলের মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা হকি ফেডারেশন ও এর সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছে। তিন হলুদ কার্ড পাওয়ায় আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমির নিষেধাজ্ঞাকে মোহামেডান বলছে ষড়যন্ত্র। একই সঙ্গে রাসেল মাহমুদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে আবাহনীর বিপক্ষে লিগের শেষ ম্যাচে না খেলার হুমকি দিয়েছে তারা।
লিগের বাইলজ অনুযায়ী, একজন খেলোয়াড় তিন হলুদ কার্ড পেলে পরবর্তী ম্যাচে খেলতে পারবেন না। সেই নিয়ম অনুযায়ী রাসেল মাহমুদ জিমি তিনটি হলুদ কার্ড পাওয়ায় আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচটি খেলতে পারবেন না। তবে মোহামেডানের অভিযোগ, জিমির নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে বাইলজ অনুযায়ী হকি লিগ কমিটি বিষয়টি তাদের ‘অবহিত’ করে কোনো চিঠি পাঠায়নি। বাইলজে অবশ্য আছে, ‘দুই হলুদ কার্ডের পর সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের ক্লাবকে অবহিত করে সাবধান করা হবে।’
মোহামেডান কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন আজ সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ‘জিমি দুই ম্যাচে হলুদ কার্ড পাওয়ার পর বাইলজ অনুযায়ী লিগ কমিটির তো আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর কথা। কিন্তু মোহামেডান ক্লাবকে তারা কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়নি।’ মোহামেডান গতকালই জিমির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে হকি ফেডারেশনের সভাপতি বরাবর একটা চিঠি দিয়েছে।
সারোয়ার হোসেন বলেছেন, দুই কার্ডের পর ফেডারেশন থেকে সতর্কতামূলক কোনো চিঠি না দেওয়ায় জিমিকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়। ঊষা ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে মোহামেডানের ম্যাচে জিমি তৃতীয় হলুদ কার্ডটি দেখার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে ক্লাবে চিঠি দেওয়াকে ‘উদ্দেশ্যমূলক’ বলছেন মোহামেডানের এই কর্মকর্তা। মোহামেডান এর বাইরেও লিগে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সারোয়ার, ‘অনেক সময় মোহামেডান নানা সূক্ষ্ম কারচুপি ও অন্যায়ের শিকার হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি।’
মোহামেডান হকি দলের ম্যানেজার আরিফুল হক প্রিন্সের অভিযোগ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে। জিমির তৃতীয় হলুদ কার্ডকেও পূর্বপরিকল্পিত বলছেন আরিফুল হক। এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও সাধারণ সম্পাদক জড়িত বলে অভিযোগ তাঁর, ‘হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাতের অন্ধকারে অনেক সিদ্ধান্ত নেন। জিমির তৃতীয় হলুদ কার্ড পূর্বপরিকল্পিত। এ ব্যাপারে সাধারণ সম্পাদকের হাত আছে।’
এদিকে হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ জিমির নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে বলেছেন, ‘নিয়ম মেনেই জিমি আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে নিষিদ্ধ থাকবে। এ ব্যাপারে আমার বা ফেডারেশনের কিছুই করণীয় নেই। তিন হলুদ কার্ড দেখলে একজন খেলোয়াড় পরের ম্যাচে খেলতে পারবে না, এটা তো হকির আইন। এটা তো সবারই জানার কথা। জিমি ৪২, ৬৩ ও ৬৬ নম্বর ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখেছে। ৬৩ নম্বর ম্যাচের পর ম্যাচ রেফারি মোহামেডান ক্লাবের ম্যানেজারকে দুই হলুদ কার্ডের ব্যাপারে অবহিত করেছেন। রেজাল্ট শিটে সবই উল্লেখ থাকে। সেই শিট গ্রহণ করে ম্যানেজার সইও করেছেন। এখন এসব বললে তো হবে না।’
মোহামেডান বাইলজ অনুযায়ী দুই হলুদ কার্ডের পর যে অবহিতকরণ চিঠির কথা বলছে, সে ব্যাপারে তাঁর কথা, ‘বাইলজে বলা হয়েছে “অবহিত করা” হবে। এটা করা হয়েছে তাদের। চিঠির কথা বাইলজের কোথাও উল্লেখ নেই। আর এটা তো খুবই সাধারণ বিষয়, তিন হলুদ কার্ড পেলে একজন খেলোয়াড় পরের ম্যাচ খেলতে পারবে না। এটা মোহামেডানের হকি সংশ্লিষ্টরা জানেন না? এটা হতে পারে?’
মোহামেডানের ম্যানেজার আরিফুল হক অবশ্য স্বীকার করেছেন জিমির হলুদ কার্ড নিয়ে একটা বিভ্রান্তির কথা, ‘হকি ফেডারেশন নিয়ম অনুযায়ী আমাদের চিঠি দেয়নি। দুই হলুদ কার্ডের পর আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠালে আমরা জিমিকে নিয়ে সাবধান হতে পারতাম। লিগের প্রথম পর্বের হলুদ কার্ড সুপার সিক্সেও ধরা হবে কি না, এটা নিয়ে একটু বিভ্রান্তি ছিল। আমরা মনে করেছিলাম, প্রথম পর্বের কার্ড সুপার সিক্সে ধরা হবে না। কিন্তু ফেডারেশন কেন আমাদের চিঠি দিল না?’