মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামের দোতলায় হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে একটু পরপর যাঁরা ঢুকতে লাগলেন, তাঁদের কেউই ক্রীড়াঙ্গনের মানুষ নন। সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদের জন্য কেউ নিয়ে এসেছেন ফুল। কেউ নিয়ে এসেছেন মিষ্টি। মমিনুল হক তখন ব্যস্ত বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দলের খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের সঙ্গে সভা করতে।
২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান মমিনুল হক। এরপর ফেরেন গত ৩০ জানুয়ারি। ১৪ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন হকির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায়। এর পর থেকেই নিয়মিত হকির দাপ্তরিক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। সদ্য শেষ হওয়া যুব গেমসের হকির উদ্বোধন করেছেন স্টেডিয়ামে এসে। আজ বিকেলে জুনিয়র হকি দলের সঙ্গে সভা শেষে করেছেন সংবাদ সম্মেলন। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে ক্যাসিনো-কাণ্ড নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে উঠল ক্যাসিনো প্রসঙ্গ। কিন্তু এই প্রসঙ্গ নিয়ে কোনো কথাই বলতে চাইলেন না মমিনুল হক। প্রশ্নকর্তাকে বলেন, ‘শুধু হকি ও এর ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন করেন। অতীত নিয়ে কিছু বলব না। আমি শুধু হকি ও ভবিষ্যতের বিষয়গুলো নিয়ে উত্তর দেব।’
২০১৯ সালের এপ্রিলে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হকি ফেডারেশনে আসেন মমিনুল হক। কিন্তু মাত্র চার মাস হকি নিয়ে কাজ করতে পেরেছিলেন। প্রায় চার বছর পর আবারও ফিরে হকির উন্নয়ন নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা শোনালেন। বর্তমান হকি কমিটির মেয়াদ শেষ হবে এ বছর ১০ মে। সেই হিসাবে তিনি দায়িত্বে আছেন আর মাত্র দুই মাস। অথচ হকির ব্যস্ত সূচিসহ আগামী মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগ, ফ্র্যাঞ্চাইজি হকি, প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, জাতীয় ও জুনিয়র দলের ক্যাম্পসহ নানামুখী পরিকল্পনার কথা বললেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, তাহলে কি দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন মমিনুল হক?
অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তরটাও সুকৌশলে এড়িয়ে গেলেন, ‘আমি কাজ করছি বর্তমান নিয়ে। আমরা এখানে মেয়াদ (কার্যনির্বাহী কমিটির), নির্বাচন এসব নিয়ে কথা বলছি না। এ বিষয় নিয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। এনএসসিতে নির্বাচনের নিয়মতান্ত্রিক যে প্রক্রিয়া আছে সেভাবেই এটা হবে। আসলে হকি তো থেমে থাকবে না। হকির পরিকল্পনা তো থেমে থাকবে না। তবে এই মুহূর্তে নির্বাচনের বিষয়ে কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা নেই। এখন প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, জুনিয়র বিশ্বকাপ বাছাই নিয়ে কাজ করছি। এটা নিয়েই ব্যস্ত আছি। নির্বাচনের যেহেতু সময় আছে, তখন এ বিষয় নিয়ে কথা বলা যাবে। আগামীতে নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে কি না, সেটা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’
গত বছর নভেম্বরে হকি ফেডারেশন আয়োজন করে প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি হকি লিগ। এই লিগের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান তিনি, ‘আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়মিত করব। এর আগে আমরা প্রিমিয়ার হকি শেষ করব।’
জানুয়ারি মাসে ওমানে জুনিয়র এএইচএফ (এশিয়ান হকি ফেডারেশন) কাপ হকিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। জুনিয়র এইচএফ কাপের সেরা পাঁচ দল খেলবে জুনিয়র এশিয়া কাপে। আগামী ২৩ মে-১ জুন ওমানে অনুষ্ঠিত হবে জুনিয়র এশিয়া কাপ। এএইচএফ কাপের সেমিফাইনালে ওঠার পরই বাংলাদেশ নিশ্চিত করে এশিয়া কাপে খেলা। বাংলাদেশের সামনে এবার জুনিয়র বিশ্বকাপে খেলারও হাতছানি। এশিয়া কাপের সেরা চার দল খেলবে জুনিয়র বিশ্বকাপে। এই দলটাকে ভারতে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পাঠানোর পরিকল্পনাও করেছেন মমিনুল হক। আগামী ১০ এপ্রিল জুনিয়র দলটি ভারতে যেতে পারে।