শাহবাজ আহমেদকে গার্ড অব অনার জানান বাংলাদেশের সাবেক হকি খেলোয়াড়েরা
শাহবাজ আহমেদকে গার্ড অব অনার জানান বাংলাদেশের সাবেক হকি খেলোয়াড়েরা

ঢাকায় ম্যাচ খেলে আপ্লুত শাহবাজ, পেলেন পাঞ্জাবি–শাড়ি উপহার

মোহামেডানের জার্সিতে নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার মাঠে হকি খেলেছেন শাহবাজ আহমেদ। ২৭ বছর পর সেই শাহবাজ আবার ঢাকায় হকি খেলছেন! স্বপ্ন নয়, বাস্তব।

‘হকির ম্যারাডোনা’ আজ বিকেলে স্টিক হাতে নেমে পড়েছিলেন মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে। তবে সেটা কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ নয়, ঢাকায় সাবেক জাতীয় হকি খেলোয়াড়েরা আজ দুই দলে ভাগ হয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলেছেন, দুটি দলের হয়েই খেলেন পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ হকি জেতানো শাহবাজ আহমেদ।

মধ্য পঞ্চাশে দাঁড়ানো শাহবাজ ম্যাচে দৌড়াদৌড়ি তেমন একটা করেননি। অনেকটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলেছেন। তবে যখন বল পেয়েছেন, পুরোনো দিনের ঝলক ঠিকই দেখান। যা দেখে অভিভূত হয়েছেন অনেকেই।

হকির সাবেক বিশ্বসেরার সম্মানেই ম্যাচটি আয়োজন করা হয়। তাঁকে গার্ড অব অনার জানান বাংলাদেশের সাবেক খেলোয়াড়েরা। ম্যাচ শুরুর আগে দুই দলের খেলোয়াড়েরা স্টিক উঁচিয়ে ধরেন, যার ভেতর দিয়ে মাঠে নামেন শাহবাজ। লাল ও সবুজ দুই দলেই খেলেন তিনি আর সেটা ১০ নম্বর জার্সি পরে। দুই দলেরই অধিনায়ক ছিলেন শাহবাজ আহমেদ।

সাবেক বিশ্ব তারকাকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয় ম্যাচের আগে। পরপর দুটি বিশ্বকাপ হকির সেরা খেলোয়াড় ঢাকায় এই স্মরণীয় প্রীতি ম্যাচটা খেলে পেয়েছেন উপহারও। বাংলাদেশের সাবেক খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে তাঁকে দেওয়া হয়েছে একটি পাঞ্জাবি ও তাঁর স্ত্রীর জন্য একটি শাড়ি। বাংলাদেশের জার্সিও দেওয়া হয় শাহবাজকে। জার্সির পেছনে ১০ নম্বর এবং তাতে শাহবাজের নাম লেখা।

এমন সম্মান পেয়ে আপ্লুত ছিলেন শাহবাজ। অনুভূতি প্রকাশ করেন এভাবে, ‘এটা ভাবতেই ভালো লাগে, ঢাকা আমাকে ভোলেনি। যখনই এখানে আসি, মনে হয় আত্মীয়–পরিজনের কাছেই এসেছি। ঢাকা আমাকে বরাবরই আপন করে নিয়েছে। আজ যে সম্মান জানানো হলো, সেটা কখনো ভুলব না।’
শাহবাজ যোগ করেন, ‘একসময় এই খেলোয়াড়দের অনেকের সঙ্গে খেলেছি পক্ষে–বিপক্ষে। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন এমন আয়োজন করায় আমি কৃতজ্ঞ। দিনটা অনেক ভালো কেটেছে আমার।’

‘হকির ম্যারাডোনা’ নামে খ্যাত পাকিস্তানের কিংবদন্তি শাহবাজ আহমেদ

এক ফাঁকে মজাও করেন কিছুটা। জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার রফিকুল ইসলাম কামাল মাঠে এসেছিলেন পায়জামা–পাঞ্জাবি পরে। তাঁকে দেখে মজা করে শাহবাজ বললেন, ‘তুমি কি টিভিতে শো করার জন্য এসেছ? ম্যাচ খেলবে না?’ কামালের উত্তর ছিল এমন, ‘আমি আর কী খেলব। আপনি এখানে সবচেয়ে বড় স্টার। আপনার খেলা দেখতে এসেছি।’

পরে অবশ্য কামাল জার্সি পরে নেমে পড়েন মাঠে। তিনি নামার পর তাঁর দল (সবুজ) দুই গোল করে ম্যাচ ড্র করে। পরে কামাল বলছিলেন, ‘এটা সত্যিই অসাধারণ একটা দিন। শাহবাজ ভাইয়ের মতো কিংবদন্তির সঙ্গে খেলা দারুণ ব্যাপার।’

জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় মাহবুব এহসান রানার কাছে ম্যাচের ফল বড় কিছু নয়। শাহবাজ আহমেদের মতো কিংবদন্তির সঙ্গে আবার খেলতে পেরে, তাঁকে সম্মান জানাতে পেরে খুশি তিনি। ম্যাচ শেষে সেটিই বলছিলেন, ‘শাহবাজ ভাই নিজেই বলছিলেন এমন কিছু আয়োজন করতে। তাই তড়িঘড়ি করে আমরা আয়োজনটা করেছি। তাঁকে সম্মান জানাতে পেরে বাংলাদেশের হকি পরিবার গর্বিত।’

যেহেতু শাহবাজ খেলবেন, তাই সাবেক অনেক খেলোয়াড়ই সানন্দে চলে আসেন মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে।  ফরিদপুর থেকে আসেন মিরাজুল আহসান। সাবেক খেলোয়াড়দের উপস্থিতি ছিল বেশ ভালো।

ম্যাচে দুই দলে ভাগ হয়ে খেলেন বায়োজিদ হায়দার, সাজেদ আদেল, কাজী আবু জাফর তপন, মাহবুব হারুণ, আবদুল্লাহ পিরু, ইরতেজা কাদের গুড্ডু, মামুনুর রশিদ, জামিল পারভেজ লুলু, আশিকুল্লাহ আয়েশ, মাহবুব এহসান রানা, রাসেল খান বাপ্পি, আরিফুল হক প্রিন্স, মওদুদুর রহমান শুভ, তাবিব এ নূর, শহিদুল্লাহ খোকন, শহিদুল্লাহ টিটু, জাহিদ হোসেন রাজু, রফিকুল ইসলাম কামাল, হেদায়তুল ইসলাম রাজীব, রাজীব আহমেদ, মিরাজুল, মশিউর রহমান বিপ্লব, রাহুল রায়, শওকত আলী প্রমুখ।