দেশের মাটিতে টানা তিনবারই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাবাডিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। তিনবারই অধিনায়ক তুহিন তরফদার। তিন টুর্নামেন্টে ১৭টি ম্যাচেই বাংলাদেশ জিতেছে। শুধু তাই নয়, পরশু বঙ্গবন্ধু কাবাডিতে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ফাইনালসহ তিনটি ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় ও টুর্নামেন্টের সেরা ক্যাচার হয়েছেন তুহিন। অর্থ পুরস্কার পেয়েছেন ৫৫ হাজার টাকা। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের গল্প, স্বপ্ন ও আক্ষেপের কথা বলেছেন তুহিন।
কাবাডিতে কীভাবে এলেন?
তুহিন তরফদার: বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানার চরকাঠি গ্রামে আমার বাড়ি। বাবার মুদির দোকান আছে। আমরা দুই ভাই। বড় ভাই ব্যবসা দেখাশোনা করেন। আমাদের এলাকাটা চিংড়ি মাছের জন্য বিখ্যাত। বাগেরহাট থেকে উঠে এসেছে ক্রিকেটার রুবেল হোসেন, আবদুর রাজ্জাক। কিন্তু ক্রিকেট নয়, গ্রামে অনেক ভালো ফুটবল খেলতাম আমি। ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা ছিল ছোট থেকেই। তবে ফুটবলের পাশাপাশি কাবাডিও খেলতাম গ্রামে।
পরিবারে আর কেউ কাবাডি খেলত?
তুহিন: আমার বাবা সিদ্দিকুর রহমান তরফদার একসময় কাবাডি খেলেছেন, কিন্তু অনেক চোট পেতেন তিনি। ফলে তিনি কাবাডি খেলতে না করতেন আমাকে। অনেক সময় বাবাকে ফাঁকি দিয়ে খেলতাম। খেলার সময় তাঁকে দেখে পালিয়ে গিয়ে আবার খেলতাম। বিভিন্ন সময় খেপে গিয়ে ভালো খেলতাম। কিন্তু হাডুডু খেলাটা কেউ পছন্দ করত না।
তারপর?
তুহিন: আমার হাডুডু খেলা দেখে বাংলাদেশ নৌবাহিনী খেলোয়াড় কোটায় ২০১৪ সালে আমাকে চাকরি দেয়। ২০১৬ সালে এসএ গেমস দিয়ে জাতীয় দলে শুরু আমার।
আপনার অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু কাপে ঘরের মাঠে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন। এর রহস্য কী? অধিনায়ক হিসেবে কাউকে অনুসরণ করেন?
তুহিন: রহস্য কিছু না। আমরা ভালো খেলেছি। অধিনায়ক হিসেবে আমি মাশরাফি বিন মুর্তজাকে অনুসরণ করি। ঠান্ডা মাথায় তিনি দল নিয়ন্ত্রণ করেন। রান করেন, বোলিংও ভালো। আর পারফরম্যান্সের দিক থেকে সাকিব আল হাসান আমার প্রিয়। ফুটবলার হিসেবে ভালো লাগে জামাল ভূঁইয়াকে। তবে বেশি ভালো লাগে মেসিকে।
কাবাডি খেলে জীবন কেমন চলছে?
তুহিন: ভালোই। আমি কিন্তু এখনো গ্রামে খেপে হাডুডু খেলি (ম্যাচপ্রতি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন)। মাসে এমন ম্যাচ ৩-৪টাও পড়ে। এটাই আসলে আমার আয়ের বড় উৎস। কাবাডি খেলেই নৌবাহিনীর করপোরাল র্যাঙ্কে আছি এখন। এক ছেলে, এক মেয়ে। স্ত্রীসহ ওরাও ঢাকাতেই থাকে।
আপনারা ঘরের মাঠে সহজে সব দলের সঙ্গে জিতেছেন। কিন্তু এসএ গেমস আর এশিয়াড তো সহজ হবে না।
তুহিন: কোনো দলই সহজ নয়। আমরা আগে সাফ গেমসে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছি। সেই আমরা উন্নতি করেছি। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছি। শক্তিশালী কেনিয়াকে হারিয়ে আগের দুবার বঙ্গবন্ধু কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এবার ফাইনাল খেলেছি চায়নিজ তাইপের সঙ্গে। কোনো দলকেই দুর্বল ভাবার কারণ নেই। তবে এটা ঠিক; ভারত, ইরানের মতো দলগুলোর সঙ্গে খেলে আমরা বঙ্গবন্ধু কাপে নিজেদের যাচাই করতে পারিনি।
সর্বশেষ ২০০৬ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ পদক (তৃতীয়) জিতেছে। আপনার কি মনে হয়, এ বছর চীনে এশিয়ান গেমসে আবার পদক জিতবে বাংলাদেশ?
তুহিন: অবশ্যই জিততে পারে। গ্রুপিং অনুকূলে থাকলে আশা করি পদক পাব। এভাবে কাজ চলতে থাকলে ভালো করব বিশ্বাস আছে।
কাবাডি নিয়ে নিজের কোনো অতৃপ্তি?
তুহিন: ভারতে প্রো কাবাডিতে তিনবার ডাক পাই। প্রথমবার গেলেও খেলার সুযোগ হয়নি। পরের দুবার ছুটি পাইনি। অথচ ১০ লাখ টাকার প্রস্তাব ছিল আমার।
জাতীয় খেলা বাংলাদেশে অবহেলিত। এটা দেখে কেমন লাগে?
তুহিন: দুঃখ লাগে। কাবাডিকে জাতীয় খেলা ঘোষণা করেছেন বঙ্গবন্ধু। সেই খেলাটায় পৃষ্ঠপোষণার অভাব। কাবাডি ফেডারেশন ভালো কিছু করার উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করি, অচিরেই কাবাডি নিয়ে আমাদের দুঃখটা আর থাকবে না।
কাবাডি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
তুহিন: ভাবছি খেলা ছেড়ে দেব। হয়তো এ বছর এশিয়ান গেমসই আমার শেষ টুর্নামেন্ট হবে। এরপর জাতীয় দলের কোচ হতে চাই। কাবাডি নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন দেখি।