ঢাকায় এফআইজির নির্বাহী কমিটির সভায় সংস্থাটির সভাপতি মরিনারি ওয়াতানাবে। পাশে বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সভাপতি শেখ বশীর আহমেদ
ঢাকায় এফআইজির নির্বাহী কমিটির সভায় সংস্থাটির সভাপতি মরিনারি ওয়াতানাবে। পাশে বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সভাপতি শেখ বশীর আহমেদ

বাংলাদেশকে ২০২৮ অলিম্পিকের স্বপ্ন দেখালেন বিশ্ব জিমন্যাস্টিকসের সভাপতি

বাংলাদেশে জিমন্যাস্টিকসের প্রচার ও প্রসার কোনোটাই সেভাবে নেই। তবে এবারই প্রথম ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের (এফআইজি) নির্বাহী কমিটির সভা। ক্রিকেট বাদে অন্য কোনো খেলার সর্বোচ্চ সংস্থার নির্বাহী কমিটির সভায় স্বাগতিক হতে পারা বড় অর্জন বাংলাদেশের জন্য। ২২-২৩ নভেম্বর ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে আয়োজিত এই সভা বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকসে নতুন দুয়ারও খুলে দিয়েছে।

এফআইজির সভায় যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন ২৭ দেশের ৩১ জন সংগঠক। ছয় মহাদেশের জিমন্যাস্টিকস সংস্থার সভাপতি এসেছেন, আজারবাইজানের ক্রীড়ামন্ত্রীও আছেন এই দলে। এফআইজির দুই দিনের সভার পর আজ একই ভেন্যুতে বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকস উন্নয়নে ‘ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট প্রোগ্রাম’ শীর্ষক এক সভা হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন জিমন্যাস্টিকসের বিশ্ব নেতারা।

সেই আলোচনা শেষে হোটেল চত্বরেই সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন এফআইজির সভাপতি মরিনারি ওয়াতানাবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকসে সম্ভাবনার কথাই বলেছেন জাপানের এই ভদ্রলোক। দেখিয়েছেন বড় স্বপ্নও, ‘২০২৪ অলিম্পিক বলতে গেলে দুয়ারে দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশের লক্ষ্য হওয়া উচিত ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক। আশা করি, সে অলিম্পিকে বাংলাদেশ সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে এবং ভালো করবে। এখন থেকেই তাদের পরিকল্পনা করতে হবে।’

বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকস নিয়ে আশার কথাই শোনালেন মরিনারি ওয়াতানাবে

অলিম্পিক খেলার সরাসরি যোগ্যতা অর্জন বাংলাদেশের জিমন্যাস্টদের জন্য অনেক কঠিন। অলিম্পিকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একজন জিমন্যাস্ট খেলেছেন। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ নিয়ে খেলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জিমন্যাস্ট সাইক সিজার। দ্বিতীয়বারের মতো কারও খেলার আপাত সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

তবে এফআইজি সভাপতি সেই সম্ভাবনা দেখছেন। সেটিকে বাস্তবে রূপ দিতে আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। বারবার বাংলাদেশের জিমন্যাস্টদের প্রশংসাই করে গেছেন, ‘প্রথমবার আমি বাংলাদেশে আসি আট বছর আগে। এখন অনেক বদলে গেছে বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকস। আজ আমরা বাংলাদেশ দলের অনুশীলন দেখতে গিয়েছিলাম অডিটরিয়ামে। বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকস অনেক উন্নতি করেছে। আমি তা দেখে অবাক হয়েছি। জানি না আপনারা কেন বাংলাদেশের জিমন্যস্টিকস নিয়ে নিরাশ। আমি সম্ভাবনা দেখি।’

বাংলাদেশের জিমন্যাস্টদের নিয়ে তাঁর আশা, ‘পরবর্তী এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ ভালো ফল করবে আমার বিশ্বাস। এ জন্য প্রতিদিনই কঠিন পরিশ্রম করতে হবে।’

জিমন্যাস্টিকসে বাংলাদেশের দক্ষিণ কোরিয়ান কোচের প্রশংসা ঝরেছে মরিনারি ওয়াতানাবের কণ্ঠে

বাংলাদেশের জিমন্যাস্টরা উন্নত মানের প্রশিক্ষণ পান না। ২০২৮ অলিম্পিকে খেলা তাহলে কীভাবে সম্ভব? এফআইজি সভাপতি একটা পথ অবশ্য দেখালেন। ২০২৮ অলিম্পিকের প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশের জিমন্যাস্টদের প্রশিক্ষণের জন্য জাপান-কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এফআইজি কোচ দিয়ে সহায়তা করবে কি না—জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কিছু বলেননি। বরং বাংলাদেশের কোরিয়ান কোচের ভূয়সী প্রশংসাই ঝরল তাঁর কণ্ঠে, ‘আপনাদের কোরিয়ান কোচ বেশ উঁচুমানের কোচিং দিচ্ছেন। তিনি খুব ভালো।’

কিন্তু বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকসের অকাঠামো নেই বললেই চলে। অবকাঠামো উন্নয়নে এফআইজির তেমন সহায়তার সুযোগ নেই বলেও জানালেন ওয়াতানাবে, ‘আমি দুঃখিত, এখানে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগ–সুবিধা দেখিনি। জানি ক্রিকেট এখানে বেশ জনপ্রিয়। আমি অনেক দেশে গিয়েছি, অনেক দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছি। তারাও আমাকে অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তার কথা বলেন। তবে আমি বলছি, সরকারের ভূমিকাই এখানে বড়। আমরা কিছু সরঞ্জাম ও কোচিংয়ে সহায়তা করতে পারি। এর বেশি কিছু নয়।’

বাংলাদেশের জিমন্যাস্টদের সঙ্গে সাইক সিজার। ছবিটি গত জুলাইয়ে তোলা

বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সভাপতি শেখ বশীর আহমেদও তাকিয়ে আছেন সেদিকেই। এফআইজির সভাপতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে তাঁর কথা, ‘ঢাকায় এফআইজির সভা আয়োজন করতে পারা আমাদের জন্য একটা সাফল্যই। ২০২৮ অলিম্পিকে খেলার লক্ষ্য পূরণে আমরা এফআইজির কাছে কোচ, বিচারক, কোচিং সুযোগ–সুবিধা চেয়েছি। এফআইজি আমাদের পাশে থাকবে। অনলাইনে বিচারকদের প্রশিক্ষণসহ কিছু সহায়তা তারা করতে পারে, দিতে পারে ফ্লোর ম্যাটসহ অন্যান্য খেলার সামগ্রী। আমাদের তারা নানাভাবে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।’

তিন সপ্তাহের অনুশীলনের জন্য ৫ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়া যাচ্ছেন বাংলাদেশের ১৩ জন জিমন্যাস্ট। কোরিয়ার জাতীয় দলের সঙ্গে তাঁরা ম্যাচ প্র্যাকটিস করবেন। নতুন জিমন্যাস্ট তুলে আনতে জানুয়ারি থেকে স্কুল জিমন্যাস্টিকস শুরু করছে বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন।