জাহিদ হোসেন, দেবাশীষ কুমার, তাসিন আলীদের চেহারায় রোমাঞ্চ। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ফ্যালকন হলে সংবাদ সম্মেলনের আগে আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনের সময় তাদের চোখেমুখে ছিল রাজ্যের মুগ্ধতা। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান ও হকি ফেডারেশনের সভাপতি এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান অনুষ্ঠান শেষে আলাদাভাবে খোঁজখবর নিলেন খেলোয়াড়দের। বিকেএসপির হয়ে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলেছেন এই খেলোয়াড়েরা, কিন্তু জাতীয় বয়সভিত্তিক দলের জার্সিতে এবারই প্রথম খেলবেন। ৬-১২ জানুয়ারি ওমানে হবে জুনিয়র এএইচএফ (এশিয়ান হকি ফেডারেশন) কাপ হকি। এই টুর্নামেন্টে খেলতে আগামীকাল ওমানের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন বাংলাদেশের যুবারা।
বাংলাদেশের জাতীয় যুব হকি দলের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলার কথা ছিল ২০২০ সালের জুন মাসেই। ঢাকায় হওয়ার কথা ছিল ১০ জাতির জুনিয়র এশিয়া কাপ। কিন্তু করোনার কারণে সেই টুর্নামেন্ট স্থগিত করে দেয় এশিয়ান হকি ফেডারেশন। অবশেষে প্রায় আড়াই বছর পর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ জুনিয়র হকি দল। যদিও বয়সের কারণে আগের দলের বেশির ভাগই খেলতে পারছেন না ওমানের জুনিয়র এএইচএফ কাপে। ওই দল থেকে সুযোগ পেয়েছেন তিনজন—গোলরক্ষক নুরুজ্জামান নয়ন, মিডফিল্ডার প্রিন্স লাল সামন্ত ও আবেদ উদ্দিন। বাকি ১৫ জনই বয়সভিত্তিক জাতীয় যুব দলে প্রথমবার খেলবেন।
এএইচএফ কাপে বাংলাদেশ খেলবে বি গ্রুপে। এই গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গী শ্রীলঙ্কা, হংকং ও উজবেকিস্তান। এই গ্রুপে চীনা তাইপে, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও স্বাগতিক ওমান। এএইচএফ কাপের সেরা পাঁচ দল খেলবে জুনিয়র এশিয়া কাপে। আর এশিয়া কাপের সেরা তিনটি দল সুযোগ পাবে জুনিয়র বিশ্বকাপ হকিতে খেলার। গ্রুপ পর্বে ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ হংকং। এরপর ৭ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কা ও ৯ জানুয়ারি উজবেকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ।
মাত্র ১৫ দিনের অনুশীলন শেষে ওমানে যাচ্ছে বাংলাদেশ যুব দল। দলের কোচ মামুনুর রশীদ এত অল্প সময়ের প্রস্তুতির পরও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা করছেন, ‘এই দল ওমানে খেলতে যেতে পারবে কি না, সেটা নিয়েই অনিশ্চয়তা ছিল। যখন দলটি এএইচএফ কাপে খেলতে যাওয়ার জন্য পৃষ্ঠপোষকতা পেল, তখন থেকে অনুশীলন শুরু করি। একটু দেরিতেই আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি। কিন্তু তারপরও এই দল নিয়ে আমি আশাবাদী। আমরা আশা করি, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই খেলব।’
সদ্য শেষ হওয়া জাতীয় যুব হকি থেকে বাছাই করা খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া হয়েছে এবারের দল। এই দলে সুযোগ পেয়েছেন যুব হকির সেরার পুরস্কার পাওয়া রকিবুল হাসান। জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতা আছে রকিবুল ও প্রিন্স লালের। এ ছাড়া দলটির সব খেলোয়াড়ই বিকেএসপির। এটাও বড় সুবিধা বলে মনে করছেন কোচ, ‘এই দলের ১২ জন বিকেএসপির বর্তমান খেলোয়াড়। বাকিরা বিকেএসপির সাবেক খেলোয়াড়। দলের মধ্যে সবার বোঝাপড়াটা এ জন্য ভালো। খুবই প্রতিভাবান খেলোয়াড়।’ ওমানে যাওয়ার আগে জাতীয় দলের সঙ্গেও ৪টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে যুব দল।
নতুন এ দলকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করছে ফেডারেশন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বড় অঙ্কের অনুদান পেতে যাচ্ছে হকি ফেডারেশন। ফেডারেশন সূত্রে জানা গেছে, সেই অঙ্কটা প্রায় ২০ কোটি টাকা। আজ সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেশনের সভাপতি এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান জানান, ‘এরই মধ্যে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। হকি ফেডারেশনের জন্য উনি একটা বড় অঙ্কের টাকা অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আসলে অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। যত বেশি খেলতে পারবে ছেলেরা, তত বেশি খেলার মানের উন্নতি হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের যে টাকা দেবেন, সেটা ফিক্সড ডিপোজিট (স্থায়ী আমানত) করে রাখতে চাই। তাহলে আমরা দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্প চালিয়ে যেতে পারব। তবে সেটা নির্ভর করছে টাকা পাওয়ার ওপর।’
এবারের টুর্নামেন্টের জন্য বাংলাদেশ দলের পৃষ্ঠপোষকতা করছে আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ফরমান আর চৌধুরী।